শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের রানিগাঁও গ্রামে জনবস্তিতে চালকলে পরিবেশ দূষনের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ স্থানীয় গ্রামবাসী ও কৃষক পরিবারের সদস্যদের। এবিষয়ে কৃষকদের পক্ষ থেকে প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন নিবেদন করেও কোন কাজে আসেনি। ফলে অর্ধশতাধিক কৃষকসহ গ্রামবাসীরা বিপাকে থাকলেও প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করে আসছে।
গ্রামবাসীরা জানান ২০১৭ স্থানীয় প্রভাবশালী হুমায়ুন কবির হিমেল নামে এক ব্যক্তি সেতু এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি অটো চালকল স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এলাকার কৃষকদের অভিযোগ শুরু থেকেই এ চালকলের কালো ধোঁয়া, কুড়া, ছাই,ধূলা, দূষিত পানি ও বর্জে আশপাশের এলাকার ঘরবাড়ি গাছপালা আবাদি জমির ফসলসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, চালকলের নির্গত দুষিত পানি, ছাই ধুলা উড়ে এসে ঘরবাড়ির অবস্থা বিশ্রী হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পরার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন।
চালকলের আধোকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঘরবাড়িতে টিকে থাকাটা দায় ও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে গ্রামবাসিদের । এছাড়া চালকলের পাশে দুষিত পানি ও বর্জ রাখার জন্য একটি পুকুরটি ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পুকুরের দূষিত পানি দুকুল ছাপিয়ে কৃষকদের ফসলি জমিতে প্রবেশ করে। এতে কৃষকদের অন্তত ৫০ একর ফসলি জমি আবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব জমিগুলো চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন অর্ধশতাধিক কৃষক পরিবার ।
এসব অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। এসব অভিযোগের বিষয়ে চালকল স্থাপনের পর থেকেই স্থানীয় কৃষকরা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করে আসলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। কৃষকদের অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই হুমায়ুন কবির জনবস্তিতে চালকল স্থাপন করে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এদিকে চালকলটি স্থাপনের পর থেকেই স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মি,মানবাধিকার কর্মী, মিডিয়া কর্মি ও প্রশাসনের দ্বারেদ্বারে ঘুরেও কোন কাজ হয়নি বলে জানান কৃষকরা।
অভিযোগ রয়েছে চালকল মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এছাড়া অবহেলিত কৃষকদের পক্ষে ও কেউ কথা বলতেও চান না।কৃষকরা জানান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় নেতা কর্মিদের মদদে এবং এখন বিএনপি নেতা কর্মিদের মদদে চালকল মালিক হুমায়ুন কবির কৃষকও গ্রামবাসীদের ক্ষতি সাধন করে অবাধে তার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। ফলে কৃষকদের কান্না যেন কারো কান পর্যন্ত পৌছায় না। বর্তমানে এলাকার কৃষকরা রয়েছেন চরম বিপাকে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকালে ভোরের কাগজের এ প্রতিনিধিসহ কয়েকজন সাংবাদিক সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে ও প্রত্যক্ষ করে এসব তথ্য জানা গেছে। এসময় এলাকায় সাংবাদিকের উপস্থিতি বুজতে পেরে চালকল মালিকের পক্ষ থেকে প্রায় অর্ধশত স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা সাংবাদিকদের সামনে দুর্ভোগের কথা বলার সময় ছাহের আলী নামে এক কৃষককে গলা ধাক্কা দেয়। অন্যান্য নেতাকর্মিরা কৃষকদের উপর উত্তেজিত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে বাঘবেড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে কৃষকদের যাতে ক্ষতি না হয় এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনেই কৃষকদের আশ্বস্ত করেন।
তিনি বলেন আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মিদের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু পরিচালিত হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোন আধিপত্য ছিলো না। কৃষকদের যাতে ক্ষতি না হয় বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান। চালকল মালিক হুমায়ুন কবির হিমেল বলেন, কৃষকরা বিভিন্ন সময় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। এসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে।
তিনি বলেন আমার চালকলের কারনে কৃষকদের কোন ক্ষতি হলে দিগুন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তর ছাড়াও গত ১২ অক্টোবর এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষকরা নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পরে-ও সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা অজ্ঞাত কারণে এবিষয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে জানান কৃষক আবুল কালামসহ আরো অনেকেই।
এ বিষয়ে জানতে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আনিসুর রহমান বলেন কৃষকদের দেয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাকে। তদন্তে কৃষকদের দাবির পক্ষে সত্যতা পাওয়া গেছে । এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের শেরপুরের সহকারি পরিচালক মো,নুর কুতুবে আলম সিদ্দিকের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন বিষয়টি লম্বা কাহিনী। খাতাপত্র দেখে অনুসন্ধান করে দেখা ছাড়া বলা যাবে না বলে জানান তিনি। তিনি পরে অফিসে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।
আমার বার্তা/জেএইচ/রাকিবুল হাসান রুবেল