মুজিবনগর সরকারের নাম পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
তিনি বলেছেন, মুজিবনগর সরকারের নাম পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছা এ সরকারের নেই। কারণ, ইতিহাস কখনো মোছা যায় না। ইতিহাসকে ইতিহাসের জায়গায় রাখতে হয়। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে কী করবে, সেটি তাদের ব্যাপার।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে মেহেরপুরে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা।
এদিন ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। এসময় গার্ড অব অনার শেষে স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করা হয়।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, মুজিবনগর সরকার প্রবাসী কিংবা অস্থায়ী সরকার নয়। এ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তাই এই সরকারই সাংবিধানিক সরকার। ইতিহাসের ওপর কোনো কিছু আরোপ করা যায় না। ইতিহাস ইতিহাসই। এই সরকারের শপথগ্রহণ একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এটি চিরকাল শ্রদ্ধা ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সবার স্মরণ রাখা দরকার।
এসময় মুজিবনগর আম্রকাননে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ভাস্কর্যগুলো ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো স্থাপনা ঘুরে দেখা হচ্ছে। দ্রুত ভাস্কর্যগুলো স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে, ঐতিহাসিক বস্তুনিষ্ঠতার ওপর ভিত্তি করে স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হবে। ভুল কিছু এখানে আরোপিত করা হবে না, সত্যিকার ইতিহাস মোচনও করা হবে না।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে ফারুক ই আজম বলেন, সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করতে সরকার বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। তবে, আদালতে মামলা থাকার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। মামলার রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে সরকার। এ বিষয়ে প্রায় ২ হাজার ৭০০’র ওপর মামলা আদালতে রয়েছে। এসব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরই মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দিবসটি উপলক্ষে ভোর ৫টা ৪৩ মিনিটের সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে মুজিবনগর আম্রকাননে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া হয়। মুজিবনগর দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন এই কর্মসূচি পালন করে।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা লে. কর্নেল ফারুক ই আযম বীর প্রতীক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইসরাত জাহান চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার হুসাইন শওকত, মেহেরপুর জেলার পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম। এছাড়া প্রশাসনের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
এসময় মেহেরপুর পুলিশের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় উপদেষ্টাকে। এছাড়া ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গার্ড অফ অনার প্রদানকারীদের মধ্যে বেঁচে থাকা দুজন আনসার সদস্য সিরাজ উদ্দিন ও আজিমউদ্দিনকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
আমার বার্তা/জেএইচ