পাবনার ভাঙ্গুড়ায় দুই দফায় চার মাসের ছুটি নিয়ে সাত মাস ধরে অফিস করেন না পৌরসভার প্রধান সহকারী আরিফুল ইসলাম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, আত্মগোপনে থেকে বিনা বেতনে ফের ছুটির আবেদন করেছেন আরিফুল ইসলাম। তবে এ ছুটি আবেদন নাকচ করে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় প্রধান সহকারী হিসেবে কর্মরত। ২০১২ সালে ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় ভান্ডার রক্ষক পদে চাকরিতে যোগদানের পর প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি পান। তিনি ইমরান হাসান আরিফ নামেও পরিচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে যান পৌর কর্মচারী আরিফুল ইসলাম। এরপর তিনি মেয়র আবুল কালাম আজাদের থেকে গোপনে গত ১৫ আগস্ট এক মাসের চিকিৎসা ছুটি নেন। এ ছুটি শেষ হলে গোপনে ১৫ সেপ্টেম্বর পৌরসভায় হাজির হয়ে পৌর প্রশাসক তাসমিয়া আক্তার রোজীর কাছ থেকে আবারও তিন মাসের ছুটি নেন তিনি। তবে এ ছুটি শেষ হলেও এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি আরিফুল ইসলাম। এতে পদ সংশ্লিষ্ট কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাবেক এমপি মকবুল হোসেনের আস্থাভাজন ছিলেন আরিফুল ইসলাম। মকবুল ও তার ছেলে ইবনুল হাসান শাকিলের প্রভাবে কর্মস্থলে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পৌরসভার একজন কর্মচারী হয়েও উপজেলার সব ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। গড়ে তুলেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, সেসময় ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় আরিফুল নিয়মিত অফিস করতেন না। দলীয় কর্মকাণ্ড ও ঠিকাদারি কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত দেখা যেতো তাকে। মাস শেষে কোনো একদিন হাজিরা খাতায় সই করে যেতেন।
দীর্ঘসময় অনুপস্থিত থেকেও চাকরিতে বহালের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সরদার জাফর ইকবাল হিরোক বলেন, দীর্ঘ সাত মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত একজন কর্মচারী। অবস্থান করছেন ভারতে। তবুও কীভাবে তিনি চাকরিতে বহাল থাকেন?
পলাতক থাকায় আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক তাসমিয়া আক্তার রোজী বলেন, আমি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি একমাসের ছুটিতে ছিলেন। তার ছুটি প্রাপ্য থাকায় পরে তিনমাসের ছুটির আবেদন করলে সেটি মঞ্জুর করা হয়। এখন তিনি বিনা বেতনে আবার ছুটির আবেদন করলেও সেটি নাকচ করে শোকজ করা হয়। জবাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় দ্রুত তাকে যোগদানের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। যোগদান না করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমার বার্তা/এমই