নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকে ছাড়াতে গিয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে মামুন মিয়া নামে এক মুদি দোকানদার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। নিহত মামুন মিয়া মাঝিপাড়া এলাকার আব্দুল মন্নাফের ছেলে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলার মাঝিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগের ওই নেতার নাম সাব্বির হোসেন খোকা। তিনি ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকার কবির মিয়ার ছেলে এবং ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর স্থানীয় ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম বাবুর ছত্রছায়ায় তিনি চলাফেরা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষ ও হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাহিদুল ইসলাম বাবুকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। আজ বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভুলতা ইউনিয়ন যুবদল নেতা বাদল মিয়া ও একই ইউনিয়নের ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম বাবুর মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। মঙ্গলবার বিকেলে যুবদল নেতা বাদল মিয়া ও তার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে সাব্বির হোসেন খোকাকে তার বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে আসে এবং মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেয়। পরে জাহিদুল ইসলাম বাবু ও তার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে সাব্বির হোসেন খোকাকে উদ্ধার করতে যায়। এ সময় বাদল মিয়ার লোকজনের সঙ্গে জাহিদুল ইসলাম বাবুর লোকজনের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে দু’পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় বাদল মিয়ার ভাই মামুন মিয়া মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়।
পরে মুমূর্ষ অবস্থায় গুলিবিদ্ধ মামুন মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মধ্যরাতে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন খোকাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় আবারও সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
এদিকে মামুন মিয়ার মৃত্যুর সংবাদে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে যুবদল নেতা বাদল মিয়া বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী সাব্বির হোসেন খোকাকে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দেয়। এ সময় জাহিদুল ইসলাম বাবু তাকে ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে এলাকাবাসীর ওপর এলোপাতাড়িভাবে গুলি ছোড়ে। তার ছোড়া গুলিতে আমার ভাই মামুন মিয়া মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।’
এ বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের রাজনীতি করায় এবং অপর সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর পক্ষে কাজ না করায় আমাকে এ ঘটনায় ফাঁসানো হচ্ছে।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনার সংবাদ পেয়ে সঙ্গে-সঙ্গে ঘটনাস্থল পুলিশ পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল পুলিশ মোতায়েন ও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মামুন মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আমার বার্তা/এমই