গাজীপুরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে স্বৈরাচারের দোসর, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কথিত ঠিকাদার মোনায়েম কবির। তিনি বিগত সরকারের আমলে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগ থেকে নানাবিধ সুবিধা নিয়েছে প্রভাভ খাটিয়ে। তার খামখেয়ালির কারণে কাজে ধীরগতি হয়ে গণপূর্ত ও অন্য ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনৈতিক সুবিধা আদায়ে গণপূর্তের কর্মকর্তাদের নামে মামলাও করেছেন ধূর্ত মোনায়েম কবির। একইসঙ্গে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমাসহ একাধিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের জন্য মো. মোনায়েম কবিরকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল চুক্তিপত্র সম্পাদন সাপেক্ষে তাকে সাইট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার শর্ত ছিল।
তবে কাজ শুরু করার পর থেকেই অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একাধিকবার সাইট পরিদর্শন করে প্রতিবেদন পাঠান। নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় তাকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তিনি তা মানেননি। এক পর্যায়ে ১ বছর ৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় কারণ দর্শাতে বলা হয়। সঠিক ব্যাখ্যা না দিলে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী লিকুইডেটেড ড্যামেজ আরোপসহ চুক্তি বাতিলের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে মোনায়েম কবির অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করেন। শর্তসাপেক্ষে তাকে মোট ৬১৯ দিন সময় বর্ধিত করা হলেও তিনি কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন। ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল গণপূর্ত বিভাগ চুক্তি বাতিলের কারণ জানতে চাইলে তা “ফান্ডামেন্টাল ব্রিচেজ অব কন্ট্রাক্ট” হিসেবে বিবেচিত হয়। অবশেষে প্রায় আড়াই বছর পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর (পিপিসি স্মারক নং ২৫.৩৬.০০০০.৪১০.১৪.০০২.১৪৯৪২৮ উশা-২) মোনায়েম কবিরের এস এইচ জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়।
চুক্তি বাতিলের পর ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নামে মামলা করেন। প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় জানা যায়, অনুমোদিত ডিপিপিতে বরাদ্দকৃত প্রায় ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিপরীতে মাত্র ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় কাজ প্রায় শেষ করা সম্ভব হয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানান।
এদিকে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মোনায়েম কবির অতীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছেমতো কাজ করতেন। সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন এবং কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছেন। এবার অনিয়মে ধরা পড়ায় তিনি মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
তবে নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে ঠিকাদার মোনায়েম কবির বলেন, “এই কাজে আমি ক্ষতিগ্রস্ত। আমি একজন সাধারণ ঠিকাদার, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই।”
আমার বার্তা/এমই