করমুক্ত ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে বিদেশ থেকে এক প্রবাসী ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এমন তথ্য জানান এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
তবে কে এই ব্যক্তি, কবে কীভাবে এত টাকা আনলেন- এসব কিছুই বলেননি এনবিআর চেয়ারম্যান। পরিচয় জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, নাম না বলাই ভালো। অ্যাকশন নিতে হবে। অ্যাকশন নেওয়ার পরে আপনারা অটোমেটিক্যালি জেনে যাবেন।
এনবিআর চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের পর এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি চার বছর আগের। কোনো প্রবাসী শ্রমিক নয়, চীন থেকে ৭২১ কোটি টাকা প্রবাসী আয়ের নামে অর্থ এনেছেন এক ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ী এ কৌশলে ১৮০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছেন।
ওই ব্যবসায়ী ঢাকার কর অঞ্চল-৫ এর একজন করদাতা। এ বিপুল অর্থ ওয়েজ আর্নাস হিসেবে তার কর নথিতে দেখিয়েছেন তিনি। প্রবাসী আয়ের ওপর কর না থাকায় তিনি বিদেশ থেকে আনা ওই অর্থের ওপর কোনো কর দেননি। বরং উল্টো নগদ প্রণোদনা নিয়েছেন।
এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তার দাবি, প্রবাসী আয়ের নামে বিদেশ থেকে বিপুল অর্থ এনেছেন প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। দেশে এই গ্রুপের আবাসন, সেবাসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসা রয়েছে।
এ ব্যবসায়ীর মুঠোফোনে যোগোযোগের চেষ্টার করেও পাওয়া যায়নি। ধানমন্ডিতে প্রতিষ্ঠানের অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই ফারুকী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। একসময় ধানমন্ডি থানা ইউনিট আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত কালোটাকা সাদা করতেই ওই ব্যবসায়ী প্রবাসী আয়ের নাটক সাজিয়েছেন।
দেশ থেকে পাচার করা ও কমিশন বা বাণিজ্যের অর্থ আনা হতে পারে বলেও মনে করছেন কর কর্মকর্তারা। আবার পুরো টাকা ফারুকী হাসানের না-ও হতে পারে বলে ধারণা কর কর্মকর্তাদের।
এনবিআর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ফারুকী চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এবং চায়না শিপবিল্ডিং অ্যান্ড অফশোর ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ পেয়েছেন। এই অর্থ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালীদের হতে পারে। এরই মধ্যে ফারুকী হাসান ও তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, আলোচিত ব্যবসায়ী নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে ৭২১ কোটি টাকা এনেছেন। যা থেকে ১৮০ কোটি টাকা কর পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে এ বিপুল অর্থের কোনো করই পরিশোধ করা হয়নি।
এতদিন কেন এনবিআর এই অনিয়ম ধরতে পারেনি, এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব পাওয়া যায়নি।
কর অঞ্চল-৫ এর তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরেই ২৬৯ কোটি টাকা দেশে আসে। তার আগের ২ বছরে যথাক্রমে ৭৭ কোটি ও ৮১ কোটি টাকা এসেছে। এ ছাড়া অতীতের আরও ৪ বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। কর নথিতে পুরোটাই প্রবাসী আয় হিসেবে দেখানো হয়। এই সময়ে কর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তা করা হয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কেন প্রবাসী আয়ের আওতায় করমুক্ত রেখে ছেড়ে দেওয়া হলো, তা নিয়ে এনবিআরের কর গোয়েন্দা ইউনিট এখন তদন্ত করছে। এছাড়া এই অর্থ আসলে কার, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আমার বার্তা/এমই