ইসলামী ব্যাংক থেকে অর্থ লুটের অভিযোগে অভিযুক্ত এস আলম গ্রুপের জব্দ করা শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকের দেনা পরিশোধের দাবি জানিয়েছে সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম। একই সঙ্গে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের হাতে মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের সদস্য সচিব ও ব্যবসায়ী নেতা মো. মুস্তাফিজুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন হকস বে-এর চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইএর সাবেক পরিচালক এবং বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক, শিল্পোদ্যোক্তা আল মামুন, ব্যবসায়ী আতাউল্লাহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংক দেশের প্রথম ইসলামী বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে দীর্ঘদিন শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে এক প্রভাবশালী গ্রুপ কর্তৃক ব্যাংক দখল, শেয়ার জালিয়াতি, অবৈধ নিয়োগ ও অর্থপাচারের কারণে ব্যাংকটির সুনাম ও স্থিতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তারা জানান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ২ শতাংশ শেয়ার হোল্ডিং বাধ্যবাধকতা অপব্যবহার করে প্রকৃত স্পন্সর ডিরেক্টরদের বোর্ড থেকে বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট গ্রুপকে প্রভাবশালী আসনে বসানো হয়েছে ব্যাংকে।
বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক বলেন, আর্থিক খাতে আর কোনো অলিগার্ক দেখতে চাই না। সব লোনকৃত ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে তৎপর ব্যবস্থা নিতে হবে। এস আলমের তত্ত্বাবধানে থাকা শেয়ারগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত ডিপোজিট করে ব্যাংকের দায় পরিশোধের ব্যবস্থা করুক এবং পূর্ববর্তী পরিচালনা পরিষদের হাতে মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। এস আলমের জব্দকৃত ও আদালতে অ্যাটাচকৃত সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের দায় শোধ করা হোক।
এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আর্থিকখাত বিশ্বাসের জায়গা। জোর দাবি জানাই এস আলম গ্রুপের অধীনে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের অবিলম্বে বহিষ্কার করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সারাদেশের মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের পরীক্ষা-ভিত্তিক নিয়োগ করা হোক। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট ও তদন্ত কমিটি গঠন করে পূর্ববর্তী লেনদেন, নিয়োগ ও শেয়ার হস্তান্তরের পূর্ণ হিসাব প্রকাশ করা হোক।
সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-কে ঘিরে ভয়াবহ আর্থিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হয়। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংকে পরিণত হয়। গার্মেন্টস, বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ প্রায় ছয় হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানে এই ব্যাংকের অবদান ছিল অপরিসীম।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপ রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাব খাটিয়ে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং ব্যাংকের বোর্ড দখল করে নেয়। এরপর নিজেদের অনুগতদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে ব্যাংকের প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করে ফেলে। এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে ইসলামী ব্যাংক থেকে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। ফলে ব্যাংক মারাত্মক তারল্য সংকটে পড়ে এবং অনেক ভালো মানের গ্রাহক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যাংক ত্যাগে বাধ্য হয়।
মুস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের মানবসম্পদ খাতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। কোনো বিজ্ঞাপন বা পরীক্ষার মাধ্যমে নয়, বরং মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রায় ৮ হাজার ৩৪০ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার পটিয়া এবং সাড়ে সাত হাজারের বেশি নিয়োগ চট্টগ্রাম অঞ্চলে হয়েছে। এমনকি অনেকেই ভুয়া সনদপত্র ব্যবহার করে ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন।
ফোরামের বক্তব্য অনুযায়ী, এসব অবৈধ নিয়োগের ফলে ব্যাংক প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যা গত সাত বছরে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটিরও বেশি। অন্যদিকে, প্রায় এক লাখ কোটি টাকা লোপাটসহ এই দুইটি বড় সংকট মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংক এখন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে।
সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের পক্ষ থেকে এসব অনিয়মের দ্রুত প্রতিকার এবং এস আলম গ্রুপের জব্দ করা শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকের দায় পরিশোধের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি, পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের হাতে ব্যাংকের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান তারা।
আমার বার্তা/এমই