রাত পোহাতে না পোহাতে পারদ চড়ছে হু হু করে। রোজ রেকর্ড হচ্ছে। আজ ৪২ ডিগ্রি তো, কাল ৪৩। জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রখর রোদ আর ভয়ানক তাপে রোজ কিছু প্রাণও চলে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ঘর থেকে বের হওয়া মানে প্রাণ হাতে করে ঘোরা।
তারপরও জীবন থেমে থাকে না। এমন প্রখর দিনেও লাখ লাখ মানুষকে ঘরের বাইরে যেতে হয় জীবিকার খাতিরে। এর মধ্যে কিছু মানুষের কাজের ধরণই এমন যে, তাপ তুচ্ছ করে দিনভর তাদের ঘুরে বেড়াতে হয় রাস্তায় রাস্তায়। এই যেমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী। তাদের কাছে প্রাণ তুচ্ছ করে রোজ প্রবল দাবদাহে পথ চলাটাই জীবন। কেউ যেন নেই তাদের দিকে ফিরে তাকানোর জন্য।
না; একেবারেই নেই, তা নয়। নিজেদের এমন কর্মীদের জন্য নীতিমালা পরিবর্তন করে সোরগোল ফেলে দিয়েছে মোবাইল আর্থিক সেবা নগদ। এই মাঠকর্মীদের নিরাপদ রাখতে অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে নগদ লিমিটেড। যে কোনো মূল্যে তাদের নিরাপদ রাখতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুক নির্দেশনা দিয়েছেন এপ্রিল মাসে ব্যবসায়িক লক্ষ্য পূরণের সঙ্গে সঙ্গে শরীর ঠিক রাখার লক্ষ্যও পূরন করতে হবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সকল শারীরিক বিপদ থেকে সুরক্ষিত থাকার অনুরোধ করেছেন তিনি।
এটা কেবল কথার কথা নয়। এই কর্মীদের বলে দেওয়া হয়েছিলো, অন্তত এপ্রিল মাসে তারা যেন কোনো চাপ অনুভব না করেন। সেই সাথে দুপুরের কড়া রোদ এড়িয়ে চলা, কিছুক্ষন বাদে বাদে বাদে বিশ্রাম নেওয়া এবং অনেক পানি পান করার পরামর্শ পেয়েছেন তারা। অফিস থেকে কর্মীদের নিয়মিত খাবার স্যালাইন সরবরাহও করা হচ্ছে।
ঢাকার বনানী এলাকার নগদ বিক্রয়কর্মী মাসুম বিল্লাহ বলছিলেন, ‘পথে ঘাটে আমরা তো অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা একসাথে কাজ করি। এই গরমেও অনেক কোম্পানি কর্মীদের অনেক চাপ দেয়। আমার এক বন্ধু অসুস্থও হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমরা নগদে সে তুলনায় অনেক ভালো আছি। কোনো চাপ নেই। আমাদের স্যাররা বরং আমাদের রোদ এড়িয়ে চলার জন্য বলছেন।’
কেবল মাঠকর্মীদের কথা ভাবছে নগদ, তা নয়। অফিসের কর্মীদের জন্যও নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। নগদের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এই দাবদাহে কর্মীদের নিরাপদ রাখতে নীতিগত পরিবর্তন এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। সব প্রতিষ্ঠানের মত নগদেও কেতাদূরস্ত পোশাক পরাটা নিয়ম ছিলো। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগ ছাড় দিয়ে দিয়েছে অফিসের এই নিয়মে। ঢিলে ঢালা সুতির পোশাক পরে অফিস করার জন্য বলা হয়েছে। যে ধরণের পোশাকে যে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তাই পরে অফিস করার অনুমতি দিয়েছে মানবসম্পদ বিভাগ।
এছাড়া তাদের উদ্যোগে প্রতিনিয়ত অফিসে নিজস্ব চিকিৎসক এনে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হচ্ছে। সপ্তাহে একদিন চিকিৎসক এসে সবার কথা শুনছেন এবং নানা স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া দিচ্ছেন। সেই সাথে নিয়মিত অনলাইন সেশনে সতর্কতামূলক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নগদের একটি সেবা সবসময় চালু থাকে- নাম মাই ডক্টর। সেখানে কর্মী ও তার পরিবারের সদস্যরা সবসময় হটলাইনে ফোন করে চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন। সেই সেবাকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে এই সময়।
এক অফিশিয়াল ই-মেইলে কর্মীদের জন্য এসব ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাহী তানভীর এ মিশুক। তিনি বলেছেন, তিনি এই কর্মীদের নিজের সন্তানের মত দেখেন। তাই সন্তানকে নিরাপদ রাখা তার দায়িত্ব। বিশিষ্ট্য এই ফিনটেক ব্যক্তিত্ব বলছিলেন, ‘নগদের কর্মীরা আমার কর্মী নয়, তারা আমার পরিবারের সদস্য। এখন যে তাপমাত্রা, তাতে আমি আমার সন্তানকে কী রোদে যেতে দিতাম? সে জন্য আমি আমার কর্মীদেরও রোদে পাঠাতে পারি না। নগদ কর্মীদের জন্যই এগিয়ে যাচ্ছে। কর্মীরা সুস্থ থাকলে আমরা ঠিক এগিয়ে যাবো। আগে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে।’
নগদের কর্মীরা প্রধান নির্বাহীর এই কথায় মুগ্ধ ও নিরাপদ বোধ করছেন। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান যেভাবে তাদের জন্য ছাড় দিচ্ছেন, তারাও নিজেদের কাজ দিয়ে এর প্রতিদান দিতে চান।
আমার বার্তা/জেএইচ