আজ বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন দিবস। মানব সভ্যতার টেকসই অগ্রগতিতে সৃজনশীলতা ও নতুন উদ্ভাবনের গুরুত্ব তুলে ধরতেই দিবসটিতে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবসটি ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর উদযাপিত হয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের আধুনিক সভ্যতার মূল চালিকাশক্তিই হচ্ছে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন। এই মানবসমাজের নানাবিধ সমস্যার টেকসই সমাধান এবং উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচনে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের বিকল্প কোনো নেই। তবে মানবসভ্যতার এই ধাপে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক।
জীবনে দায়িত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনেকেই এসব সৃজনশীল কাজ ও শখ থেকে দূরে সরে যাই। তারপর একসময় গিয়ে আফসোস হয় যে আরেকটু চেষ্টা করলে হয়তো সময় বের করা যেত। আজ সেসব ঘুমন্ত সৃজনশীল মনগুলোকে একটু জাগিয়ে দেওয়ার দিন।
২০০২ সালে কানাডার লেখক ও সৃজনশীলতা বিশেষজ্ঞ মার্সি সেগাল প্রথম এই দিবসের ধারণা প্রস্তাব করেন। পরে, ২০১৭ সালে মানব বিকাশের সব ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের ভূমিকার সচেতনতা বাড়াতে জাতিসংঘ ২১ এপ্রিলকে বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন দিবস হিসেবে মনোনীত করেছে।
সাম্প্রতিক যেসব উদ্ভাবন যেভাবে আমাদের জীবনকে আমূল বদলে দিলো-
১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন
উবার, এয়ার বিএনবি-র মতো স্টার্টআপ ব্যবসাগুলো আমাদের দৈনন্দিন চলাফেরাকে একেবারে গোঁড়া থেকে বদলে দিয়েছে গত কয়েক বছরে। সেই সঙ্গে নতুন পণ্য ও সেবা বাজারে এনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে হাজারো মানুষের।
এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি বা ফিনটেক মানুষের জীবনে টাকা-পয়সার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকেই পাল্টে দিয়েছে।
২. প্রযুক্তির অগ্রগতি
মোবাইল অ্যাপস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই, রোবোটিক্স আমাদের জীবনকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। যে কাজ করতে আগে দিনের পর দিন পার হয়ে যেত, তা এখন দশ মিনিটেই হয়ে যাচ্ছে।
৩. স্বাস্থ্য ও পরিবেশ
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্রুত উদ্ভাবন সাম্প্রতিক উদ্ভাবনের উজ্জ্বল একটি উদাহরণ। এছাড়া সৌরশক্তির ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করছে।
৪. শিক্ষা ও সংস্কৃতি
কোর্সেরা-র মতো ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম শিক্ষাকে সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের দেশেও এমন কিছু প্ল্যাটফর্ম সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া ডিজিটাল আর্ট ও সঙ্গীতের মতো শিল্পের চর্চাও বদলে দিয়েছে প্রযুক্তি।
৫. অফলাইন সৃজনশীলতা
সৃজনশীলতার সুযোগ যে শুধু প্রযুক্তির মাধ্যমেই প্রকাশ পাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী একই রকম শিক্ষাব্যবস্থা, পাঠ্যপুস্তকের মান্ধাত্মা গঠন ও শিক্ষণ পদ্ধতি থেকেও মানুষ বের হয়ে আসছে সৃজনশীল বা নতুন চিন্তার মধ্য দিয়ে। এমন আরও অনেক উদাহরণ আছে।
বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যেই অনন্য সৃষ্টিশীলতা রয়েছে। এটি শুধু একটি দিনের উদযাপন নয়, বরং একটি আন্দোলন। তাই আপনার শুপ্ত সৃজনশীলতাকে আজ মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে দিন। সেই সঙ্গে প্রতিদিনের জীবনে রুটিন কাজগুলোতে উদ্ভাবনের ছোঁয়া নিয়ে আসুন।
আমার বার্তা/এল/এমই