সরকার চাইলে তদন্ত ছাড়াই মাত্র ৭ দিনের নোটিশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে। এই বিধান যুক্ত করে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধনীতে হাত দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে সংশোধিত আইনটির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। অনুমোদনের জন্য তা শিগগির উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে। তারপর অধ্যাদেশ হিসেবেই জারি হবে গুরুত্বপূর্ণ এ আইনটি।
কর্মকর্তারা বলছেন, গুরুতর অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ানো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় এনে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতেই এ কঠোর বিধান আনা হচ্ছে। তবে সংশোধনটি ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন ও মতবিরোধ। কেউ বলছেন এটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ, আবার কেউ এটিকে কর্মীদের বিরুদ্ধে চাপে রাখার হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন।
দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এ বিধানটি আনা হচ্ছে ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের জারি করা সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। সে সময় ওই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হতো এবং পরবর্তী সময়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেত। এবার সেই অনুকরণে ৭ দিনের নোটিশে অব্যাহতির বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই বলেও মনে করেন তারা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তাদের অসন্তোষ, অরাজকতা, অবাধ্যতা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অনেকেই প্রকাশ্যে মিছিল-সমাবেশ করেছেন, যেখানে চাকরিবিধিতে এসব নিষিদ্ধ। কেউ কেউ মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তারা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সরকারবিরোধী নানা উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এরা মূলত ৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অথচ বিদ্যমান সরকারি চাকরি আইনের দুর্বলতার কারণে সরকার তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে আইনি সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে প্রশাসন।
কর্মচারীরা যা করলে অপরাধী হবেন তার মধ্যে রয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অনুপস্থিতি, কর্মবিরতি, বা অন্যকে কর্তব্যে বাধা দেওয়া। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তিন ধরনের শাস্তি দিতে পারবে সরকার। এগুলো হলো—১. চাকরি থেকে বরখাস্ত। ২. চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং ৩. পদ বা বেতন হ্রাসকরণ। অবশ্য বর্তমান আইনেও এই তিন ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, অভিযুক্তের শুনানি শেষে তদন্ত ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে সরকার। খসড়া আইনে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে সরকারি কর্মচারীদের সভা-সমাবেশের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা রাখা হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগও পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে।
একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমান সরকারি চাকরি ব্যবস্থায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘ তদন্তের প্রয়োজন পড়ে, যা ২-৩ বছরও লেগে যায়। এ সময় অভিযুক্ত কর্মকর্তা তদবির, প্রভাব খাটানো, এমনকি তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার সুযোগ পান। এর ফলে প্রকৃত অনিয়মকারীরা পার পেয়ে যান, আর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। -- সূত্র: কালবেলা
আমার বার্তা/জেএইচ