সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় কয়েক শত কোটি টাকা মূল্যের পাথর আত্মসাতের সঙ্গে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি দুদক সিলেট কার্যালয়ের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
বুধবার (২০ আগস্ট) নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ পাথর পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব খাতে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অথচ বিষয়টি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির চোখের সামনেই ঘটলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অভিযানে সংগ্রহিত তথ্য উদ্ধৃত করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করতে অনুমতি চেয়েছে। সদর দপ্তর ছাড়পত্র দিলে ব্যক্তি-ভিত্তিক পৃথক তদন্ত চালিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া হবে।
দুদকের অনুসন্ধানে আত্মসাৎ প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এবং সুবিধাভোগী হিসেবে যাদের নাম এসেছে তারা হলেন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার অফিস, জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীসহ মোট ৪২ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপির ২০ জন, আওয়ামী লীগের ৭ জন, জমায়াতের ২ জন, এনসিপির ২ জন রয়েছেন।
ইউএনও পদে দায়িত্বে থাকা চার কর্মকর্তার নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন, আজিজুন্নাহার (১৪ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে বর্তমান), মোহাম্মদ আবুল হাছনাত (৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ১৪ জানুয়ারি ২০২৫), উর্মি রায় (২৪ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪) ও আবিদা সুলতানা (১১ জুলাই থেকে ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বদলির স্বল্প সময় বা পূর্বসূরিদের ওপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তবে তাদের চোখের সামনেই পাথর আত্মসাতের ঘটনা ঘটায় দায় থেকে কেউ মুক্ত নন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বিস্তারিত তদন্ত শুরু হবে। তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাৎ বলেন, সাদা পাথর লুটের পর এনফোর্সমেন্ট টিম নিয়ে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করি। সেসময় আমরা বেশ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করি। বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এর তালিকাসহ আমরা একটি প্রতিবেদন সদর দপ্তরে পাঠিয়েছি। সদর দপ্তরের অনুমতি পেলে প্রত্যেকের বিষয়ে আলাদা তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
আমার বার্তা/এল/এমই