
১১ কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
একই সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে আমেরিকা, কানাডা ও যুক্তরাজ্যসহ বিদেশে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকুয়েস্ট (এমএলআর) অনুরোধ পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক তানজির আহমেদ জানিয়েছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে চার মামলা করে। তার মধ্যে বেনজীরের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হলো।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, দুদকের তদন্তে বেনজীরের নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলে ১৫ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। যার বিপরীতে বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে মাত্র ৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বলে দুদকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
দুদক জানায়, অনুসন্ধানকালে তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ দেওয়া হলে, আসামি তার আইনজীবীর মাধ্যমে ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। সেখানে তিনি ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য দেন।
তবে তদন্তে দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের নামে ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার স্থাবর ও ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ তিনি মোট ১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। যার মধ্যে ১১ কোটি ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকার সম্পদের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ ছাড়া আসামি বেনজীর আহমেদ তার অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করতে নাবালিকা কন্যা জনাব মিজ যাহরা যারীন বিনতে বেনজীরের নামে অর্জিত কোনো স্থাবর সম্পদ সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শন করেননি।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজীর আহমেদ জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন করে তার উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন বা ছদ্মাবৃত্ত করেছেন। তার নামে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যৌথ মূলধনি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে এই অর্থের হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের প্রমাণ মিলেছে।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা, এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ ও ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক। সেখানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। এরপর ১৮ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের এক সভায় অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। পরে অনুসন্ধানে বেনজীর ও তার পরিবারের নামে ৬৯৭ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, ঢাকায় ১২টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বিও হিসাব খুঁজে পেয়ে আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করে দুদক। তবে বেনজীরের বিরুদ্ধে এপ্রিলে অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি দেশত্যাগ করেন। এরই মধ্যে ওই বছরের ২৮ মে তাদের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফা তলব করলেও তারা দুদকে আসেননি।
ওই বছরের ২ জুলাই বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠিয়েছিল দুদক। এ নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে আগস্টের মাঝামাঝি আইনজীবীর মাধ্যমে পুলিশের সাবেক প্রধান ও তার পরিবারের চার সদস্যের সম্পদ বিবরণী জমা দেন।
আমার বার্তা/এমই

