ই-পেপার শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩২

আয়নাঘর ছিল আওয়ামী দুঃশাসনের আঁতুড়ঘর

মো. জিল্লুর রহমান:
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:১৬

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সবচেয়ে লোমহর্ষক ও দুর্ধর্ষ ঘটনা ছিল মানুষকে গুম করে নির্যাতন ও হত্যা করা। আর আয়নাঘর ছিল গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটক করার একটি গোপন আস্তানা বা আঁতুড়ঘর। এটি বিগত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা (ডিজিএফআই) দ্বারা পরিচালিত হতো বলে জানা যায়। এটি প্রথম ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট সুইডেন-ভিত্তিক একটি নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজ, "হুইসেলব্লোয়ার" নামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ‘আয়নাঘরে' বলপূর্বক গুমের শিকারদের আটক ও নির্যাতন করছে বলে অভিযোগ করা হয়। নেত্র নিউজ গোপন কারাগারের সম্ভাব্য অবস্থানও প্রকাশ করেছিল, যেখানে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের রাখা হয়েছিল। নেত্র নিউজ বলপূর্বক গুমের শিকার দুই ব্যক্তি হাসিনুর রহমান এবং শেখ মোহাম্মদ সেলিম-এর অন-দ্য রেকর্ড অ্যাকাউন্টের উপর ভিত্তি করে বিশদ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল, যেখানে তারা তাদের ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত গোপন আস্তানা "আয়নাঘরে" আটক রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছিল।

অভিযোগ রয়েছে ‘আয়নাঘর’ শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে সামরিক উপদেষ্টা ও নিকটাত্মীয় তারিক আহমেদ সিদ্দিক নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান তদারকি করতেন। এটি ডিজিএফআই এর কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) আটক কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী। ঢাকা সেনানিবাসের মধ্যে অবস্থিত এটিতে কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ এবং একসাথে ৩০ জন বন্দী রাখার ক্ষমতা ছিল বলে অভিযোগ। ভারতের জি নিউজের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়নাঘর শুনতে যতটা সাদামাটা ততটাই রহস্যময়। শেখ হাসিনার আমলে তৈরি এই আয়নাঘরেই মানুষদেরকে গুম করে রাখা হতো। আসলে এটি আলো বাতাসহীন একটি কক্ষ, যেখানে সারাক্ষণ ঘড়ঘড়িয়ে উচ্চশব্দের ফ্যান চলতো। আনন্দবাজারের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আয়নাঘর’ হচ্ছে ‘গুমখানা’। হাসিনার শাসনকালে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে মোট ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি (১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও কয়েকজন ভুক্তভোগীকে সঙ্গে নিয়ে বহুল আলোচিত বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে মূলত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের চিত্র আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার সবক্ষেত্রে আইয়্যামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করেছিল। যারা এমন জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করা হবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, এই আয়নাঘরের নৃশংসতার কথা যত শুনি ততই অবিশ্বাস্য লাগে। এটা কি আমাদেরই জগত, আমাদের সমাজ! যারা নিগৃহীত হয়েছে, যারা নৃশংসতার শিকার হয়েছে, তারাও আমাদের সঙ্গে আছে। তাদের মুখ থেকে শুনলাম কীভাবে এখানে নির্যাতন করা হয়েছে। এদেরকে বিনা কারণে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আসা হতো। বিনাদোষে কতগুলো সাক্ষী হাজির করে তাদেরকে বানিয়ে দেয়া হতো জঙ্গি! এরকম টর্চার সেল সারা বাংলাদেশ জুড়ে আছে বলেও আজকে শুনলাম।

অবশ্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে গতবছর ২৭ আগস্ট গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে এবং কমিশনের প্রধান করা হয় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে। কমিশন সম্প্রতি ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় কমিশনে ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে এবং এর মধ্যে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। গুম সংক্রান্ত কমিশন দেশে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। কমিশনে র‍্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি, পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, কমিশন ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেছে, তার মধ্যে ৭৩ শতাংশ ভুক্তভোগী ফিরে এসেছেন, বাকি ২৭ শতাংশ (অন্তত ২০৪ জন ব্যক্তি) এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন ৩ অক্টোবর তাদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের সময় জোরপূর্বক মানুষকে তুলে নিয়ে গোপন বন্দিশালায় গুম করে রাখার প্রমাণ মিলেছে। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পাওয়া এ বন্দিশালার অবস্থান ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরের চৌহদ্দির মধ্যে, যা একসময় জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

ঢাকা ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন "অধিকার" এর তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে ৪০২ জন মানুষ নিখোঁজ হন। তাছাড়া, ২০১৪ থেকে জুলাই ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৪৪ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৪০ জন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেফতার অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে ২০৩ জন এখনো গুম রয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন গুম থাকার পর ফিরে আসেন, তারা গুমের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করেন এবং ধারণা করা হয় এসব মানুষদের ভয় ভীতি দেখিয়ে আয়নাঘরে গুম করে রাখা হয়।

আয়নাঘরে যারা বন্দি থেকেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়। এছাড়াও আয়নাঘর থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পালানোর পর বাংলাদেশী ব্যারিস্টার এবং জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম, সাবেক সামরিক জেনারেল এবং জামায়াতে ইসলামী নেতা গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আজমি, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সংগঠন ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা ছাড়া পেয়েছেন। বিচার বহির্ভূত এসব গুম ও হত্যাকাণ্ডসহ এইসব ঘটনার জন্য জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা, যেমন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বেগ ও নিন্দা প্রস্তাব জানিয়েছিল।

২০২৪ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে তার পতন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬০০টিরও বেশি গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী আয়নাঘর থেকে খুব কম বন্দি মুক্তি পেয়েছে। তবে কিছু বন্দিকে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়। অনেকেই আবার এনকাউন্টারের বা কথিত বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়েছেন। আবার অনেককে জঙ্গি সাজিয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র'য়ের সহায়তায় ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং তাদেরকে ভারতের জেলে বন্দী অবস্থায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এজাতীয় ঘটনার তদন্ত প্রায় হয় নি বললেই চলে। আয়নাঘরে রাখা অনেকেই দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। তারপর লাশ সরিয়ে দেওয়া হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয় তাদের খাতা কলমে কোনো তথ্য রাখা হয়নি। আর যারা হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন তারাই আয়নাঘরের দায়িত্ব পেতেন। আয়নাঘরের বন্দিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখা করা বা যোগাযোগের কোন ব্যবস্থাও ছিল না।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় শুধু গুম খুন নয়, বিচার বিভাগকে রাবারস্ট্যাম্প প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়। শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ ও দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য দলীয় ক্যাডারদের বিচারপতি বানিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তৈরি করে ভিন্ন মতাবলম্বীদের "বিচারের নামে প্রহসন" শুরু করে। এসব আদালতে কোন নিয়ম শৃঙ্খলার বালাই ছিল না। জোর করে অসত্য সাক্ষী প্রদান, বিরোধী সাক্ষীদের গুম, আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া, মামলা চলাকালে আইনের ভূতাপেক্ষা সংশোধন, রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যাপক চাপ ইত্যাদি দেশে বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। এসব দলীয় বিবেচনায় নিয়োজিত বিচারপতিরা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে পুনরায় নিয়োগ পেয়ে শেখ হাসিনার আকাঙ্খা পূরণের বিচার চালিয়ে যান। এমনকি একজন প্রধান বিচারপতি তার সরকারের মতের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করায় তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং শামসুদ্দীন চৌধুরী নামে একজন মানসিক অসংলগ্ন ব্যক্তিকে হাইকোর্ট ও পরবর্তীতে আপিল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন। তাছাড়া, উচ্চ আদালতে দলীয় ভাবাদর্শের খুনি ফৌজদারি অপরাধের আসামিকেও বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের মতো নিম্ন আদালতও সরকারের ইশরা ইঙ্গিতে বিচার পরিচালিত হয় এবং পুরো বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও মানমর্যাদা চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়।

বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার কেন্দ্র বিন্দু কিন্তু সেটাকে শেখ হাসিনা এমনভাবে দলীয়করণ করেন যদি একজন সাধারণ নাগরিক সচিবালয় বা সরকারি অফিসের সামনে দিয়ে ভ্রমণ করতেন, তার মনে হতো এটি কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয় বা অফিস। আমলাদের তিনি এমনভাবে প্রভাবিত করেন তাদের বক্তৃতা বিবৃতি পড়লে মনে হতো তারা তার দলীয় নেতা বা কর্মী। তিনি আমলাদের মধ্যে একটি তোষামোদি শ্রেণি তৈরি করেন এবং তাদেরকেই তিনি তার রাজনৈতিক অভিলাষ ব্যস্তবায়নের দায়িত্ব ন্যস্ত করতেন। হাসিনার দুঃশাসনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়, ক্ষমতা হারানোর শেষ সময়ে একজন পিয়নের বিরুদ্ধে চারশ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।

গুম, খুন, গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধীদের হেনস্তা করার জন্য শেখ হাসিনার দুঃশাসনে পুলিশ বাহিনীকে এমন একটি দলীয় দানব বাহিনীকে পরিণত করেন যেখানে দলীয় ক্যাডারদের পুনর্বাসন করে ১৫ বছরের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে মেতে উঠেছিলেন। আইনের শাসনের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ভিন্নমত পোষণকারীদের শায়েস্তা করার জন্য গায়েবি মামলা দিয়ে সারা দেশে একটি ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি করেন। পুলিশের "গায়েবি মামলা" সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও একটি আতঙ্কের নাম হয়ে উঠে। প্রবাসী, প্রতিবন্ধী, শিশু, বহু আগে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিরাও এ থেকে রেহাই পায়নি। অন্যদিকে ব্যাপক বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের মামলায় মানুষকে হয়রানি দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের উপর আক্রমণ, থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ সদস্যদের নির্বিচারে হত্যার মতো প্রতিশোধ। একইভাবে তিনি র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকেও রাষ্ট্রীয় হত্যা, গুম ইত্যাদি অপকর্মে উৎসাহিত করেন এবং এক পর্যায়ে রেপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও এ বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য হয়।

সম্প্রতি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাবের মহাপরিচালক অতীত অপরাধের জন্য নির্যাতিত ব্যক্তি ও জুলাই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেছেন যে র‌্যাবের গোপন বন্দীশালা বা 'আয়নাঘর' ছিল। তিনি আরও বলেন, 'র‌্যাব সৃষ্টির পর থেকে যারা র‌্যাব দ্বারা নির্যাতিত বা অত্যাচারিত হয়েছেন, তাদের কাছে এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ যারা র‌্যাবের দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি। একইসাথে তিনি নিশ্চয়তা দেন, 'আমি যতদিন এই দায়িত্বে আছি বা আমার অফিসার যারা আছেন, র‌্যাব কখনো কারো নির্দেশে ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ—গুম, খুন—করবে না। যদি কোনো সদস্য যদি নিজ দায়িত্বে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত হয়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিব। যেটা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা নিয়ে আসছি।' এর কয়েকদিন আগে নতুন ডিএমপি কমিশনার জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকার জন্য রাজধানীবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এটা যদিও স্বস্তির খবর কিন্তু ভবিষ্যতে এটা কতটা কার্যকর সেটা সময় সাপেক্ষ বিষয়।

আমরা হয়তো অনেকেই জানি মৃত্যু, দুর্ঘটনা, অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর লাশ পাওয়া যায়, লাশের সৎকার করা যায়, আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী শোক প্রকাশ করতে পারে কিন্তু গুম এমন একটি জঘন্য অপরাধ যেটির ভিক্টিম ব্যক্তির লাশটাও পাওয়ার সুযোগ থাকে না। এটা এক নিদারুণ নিষ্ঠুর যন্ত্রণা যা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যের পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়। নদী ভাঙ্গলে যেমন কোন চিহ্ন থাকে না, ঠিক তেমনিভাবে গুমের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রেও কোন দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মৃত্যু ব্যক্তির মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করা গেলেও গুমের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে তাও পাওয়া যায় না। তাছাড়া, যারা গুমের শিকার হন, তাদের সহায় সম্পত্তি উত্তরাধিকারদের মধ্যে বিলিবন্টন নিয়ে বেশ আইনি জটিলতা ভোগ করতে হয়। শুধু তাই নয়, গুমের শিকার ব্যক্তির ছেলে সন্তান স্কুল কলেজে ভর্তি কিংবা চাকুরীতে ইন্টারভিউ দিতে গেলেও আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, কারণ গুমের শিকার ব্যক্তি জীবিত না মৃত্যু সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় গুম খুনের সাথে সরাসরি জড়িত জিয়াউল আহসান, হারুন, বিপ্লব কুমার সরকার, মনিরুল ইসলামদের মতো সহযোগীরা নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে গুম করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র'য়ের পরিকল্পনায় কথিত জঙ্গি সাজিয়ে দেশ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছিল এবং এসব দানব বাহিনীর সদস্যরা রাষ্ট্রীয় নানা সুযোগ সুবিধা পদ পদবি পুরস্কার ভাগিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ বাগিয়ে নিয়েছিল। তারা বাংলাদেশকে বহিঃবিশ্বে জঙ্গি রাষ্ট্র সাজিয়ে হাসিনা ফ্যাসিস্ট ক্ষমতাকে মজবুত ও দীর্ঘায়িত করেছিল। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাক-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এখন দরকার শেখ হাসিনাসহ গুমের ঘটনায় যাঁদের নাম এসেছে, দ্রুত তাঁদের বিচার নিশ্চিত করা। গুম হওয়া ব্যক্তিদের কারা তুলে নিল—তাঁদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা। ইতোমধ্যে গুমের অনেক আলামত নষ্ট করা হয়েছে, আরও অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ আয়নাঘরের মতো নির্যাতনের আঁতুড়ঘর তৈরির দুঃসাহস না পায়, এজন্য এখন গুম সংক্রান্ত কমিশনের সুপারিশ মতো যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা।

লেখক : ব্যাংকার ও কলামিস্ট।

আমার বার্তা/মো. জিল্লুর রহমান/এমই

এনজেআর প্রকাশনী : গ্লোবাল ইনোভেশনের একটি গেটওয়ে হবে

বর্তমান যুগে যখন পৃথিবী দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, তখন এগিয়ে থাকার মূল চাবিকাঠি হলো উদ্ভাবন। প্রযুক্তি,

সামরিক জান্তার চার বছর ও মিয়ানমার পরিস্থিতি

মিয়ানমারের সামরিক সরকার ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা

শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ ও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এক রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।

ধর্ষণের আইন ও শাস্তি কি কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ

বাংলাদেশে বর্তমানে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা, একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।আইন ও
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সংস্কারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে

লোহাগাড়ায় প্রবাসী মানবিক ফাউন্ডেশন'র ফ্রি চিকিৎসা সেবা

বাউয়েটে নানা আয়োজনে দশম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

লালপুর উপজেলা মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন ধর্ম উপদেষ্টা

সুন্দরবন উপকূল এলাকায় হরিণের মাংস ছড়া-ছড়ি

উত্তরায় পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর আত্মহত্যা, দাবি পরিবারের

কুয়েটে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে কুয়েটে বিক্ষোভ

একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রবেশে বাধায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া মান্নার

আমার কথা রাখলে হাসিনাকে এভাবে পালাতে হতো না: কর্ণেল অলি

সারাদেশে ১৫ দিনে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার ৮০৭৯ জন

চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৬ ইউনিট

রমজানে উন্মুক্ত হবে মসজিদুল হারামের কিং আব্দুল আজিজ গেট

আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদল নেতা রাব্বির ১০ লাখ টাকার ঋণ মওকুফ

ঈদের আনন্দের মতো যেন ভোট উৎসব করতে পারি: সিইসি

বাংলাদেশে মাত্র ২ জনের হাতে গেছে ২৯ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড: ট্রাম্প

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি

ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নিশ্চিতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানো অপরিহার্য

১৭ বছরের জঞ্জাল ১৫ মাসে দূর করা সম্ভব না: সাখাওয়াত হোসেন

লাঠিচার্জ-জলকামানে পণ্ড আউটসোর্সিং কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি

নৈতিকতাবিহীন নেতৃত্ব তৈরি হলে সম্পদের সুষম বণ্টন হবে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা