জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ নিয়ে আলোচনা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ বুধবার বৈঠক করবে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুপুর ১২টার দিকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলটির নেতারা বলছেন, সরকারের তরফ থেকে সর্বশেষ বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মনে করে, এটি কোনো সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ নয়। এজন্য নির্বাচন নিয়ে সরকার আসলে কী ভাবছে কিংবা তাদের অবস্থান কী, সেটা সুস্পষ্টভাবে জানতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবে তারা।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে নানা মহলে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ চাইব।’
এদিকে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশা প্রকাশ করে বলেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব। নিঃসন্দেহে আমাদের মধ্যে ঐক্য সম্ভব হবে এবং আমরা সফল হব। আমরা নির্বাচনের নতুন রোড ম্যাপ আশা করছি। আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে শিফটিং হচ্ছে, এ সমস্যারও সমাধান হবে। এক সপ্তাহ সিংগাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে সোমবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। এর আগে গত ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিংগাপুরে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে যাতে বিভ্রান্তি দূর হয়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাবে বিএনপি। কেননা, সম্প্রতি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষে একেক সময় একেক বক্তব্য ও সময়সীমা ঘোষণায় সংশয় তৈরি হয়েছে বিএনপিসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে। যে কারণে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রূপরেখার বিষয়ে জানতে চাইবে বিএনপি।
অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এরই মধ্যে জানিয়েছেন যে, দলগুলো বড় ধরনের সংস্কার চাইলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে আর ছোট আকারের সংস্কার চাইলে নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বরে। কিন্তু ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন আয়োজনের বিরোধী বিএনপি। তারা চলতি বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায়। বিএনপির এই দাবির পক্ষে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলও রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী চায় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন।
অন্যদিকে, জুলাই আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবি, আগে সংস্কার ও স্থানীয় সরকার এবং সবশেষে জাতীয় নির্বাচন। মাঝেমধ্যে আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিও তুলছে এনসিপি। আবার এই সরকারকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার কথাও শোনা যাচ্ছে। ফলে দলগুলোর কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন না হলে আবারও আন্দোলনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়েই রাজনীতির মাঠে চলছে নানা আলোচনা। তবে সব জল্পনাকল্পনা এবং নানা কৌতূহল আড়ালে রেখে আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ঘিরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার অনুষ্ঠেয় বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ১৭ বছর ধরে আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। এ কারণেই তো আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যত যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। এটি পুরোনো দাবি। এখনো সে দাবিতেই আছি এবং নতুন কোনো দাবি করিনি। আমরা ভেবেছিলাম, এই সরকার (অন্তর্বর্তী) আসার পরই স্বাভাবিকভাবেই তারা নির্বাচনের চিন্তা করবে। কারণ সারা বিশ্ব যেখানে গণতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে আছে, সেখানে অগণতান্ত্রিক একটি দেশ টিকে থাকবে, এটা ঠিক না।
আমার বার্তা/এমই