
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম, খুন ও নির্যাতনের মতো অমানবিক কর্মকাণ্ড ঘটলেও দেশের বুদ্ধিজীবীরা তা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করেননি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সাদা দলের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপান্তর: একটি কৌশলগত রোডম্যাপ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সেমিনারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে জোরপূর্বক গুম, খুন করে একটি সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন, সে বিষয়ে সেই বুদ্ধিজীবীরা কিছু বলেন না, লেখেন না-যদিও তারা সবাই দেশেই আছেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের নামে অনৈক্য তৈরির চেষ্টাও হয়েছে। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আমরা ধন্যবাদ জানিয়েছি। জাতীয় সার্বভৌমত্ব কোনো আদেশ দিয়ে বাধ্য করা যায় না, কারণ সর্বোচ্চ সার্বভৌমত্ব জাতীয় সংসদের হাতে, যেখানে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। জুলাই সনদের গণভোট বিষয়ে যেসব প্রশ্ন আছে, তা দেখে মনে হয়েছে পিএইচডিধারী লোকেরও বুঝতে সময় লাগবে।
সালাহউদ্দিন দাবি করেন, দেশে জারি করা সাম্প্রতিক আদেশ সাংবিধানিক আইনি বৈধতা বহন করে না। তিনি বলেন, দেশে এ ধরনের আদেশ জারির ইতিহাস নেই এবং এ ধরনের আদেশ টিকেও না। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে একটি লিগ্যাল ক্যাওস তৈরি করা।
রাষ্ট্র সংস্কারের আগে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানসিকতার পরিবর্তন না হলে নতুন আইন করেও সুফল মিলবে না। তার অভিযোগ, সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সুপারিশের সময় বুদ্ধিবৃত্তিক অনাচার হয়েছে।
জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে যারা অস্থিরতা তৈরি করছেন তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন যেন যথাসময়ে না হয় বা বিলম্বিত হয়, সেজন্যই পাঁয়তারা চলছে। দেশের মানুষ তো ভোটের জন্য অধীর অপেক্ষায়। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে কোনো ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচারের উত্থান ঘটবে না।
জামায়াতকে উদ্দেশ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একটি দল যমুনা ঘেরাও থেকে সরে এসেছে। কিছুদিন পরই দেখা যাবে গ্রামে-গঞ্জে ভোট চাইতে নেমে পড়েছে তারা।
তিনি আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত সবাইকেই নির্বাচনের জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। আমরা গত ১৫–১৬ বছর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছি। দেশের মানুষ ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তবে স্বৈরাচারের সহযোগীদের রেখে স্বাধীন বিচার বিভাগ সম্ভব নয়।
বিএনপির রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ৩১ দফা রূপরেখা এ উদ্যোগেরই অংশ। দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, দেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানো হয়েছে। আমরা প্রায়ই বলি, একটি দেশকে ধ্বংস করতে হলে তার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করো-এখানে গণহারে জিপিএ-৫ দিয়ে সেটা করা হয়েছে। কালচারাল হেজিমনি প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা হয়েছে তা ব্রিটিশদের নীতির সঙ্গে মিলে যায়।
এ দেশে এমন এক জাতি তৈরি করা হয়েছে যারা রক্ত-মাংসে বাংলাদেশি, কিন্তু চিন্তায় ভারতীয়। খুব সূক্ষ্মভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তায়ন ঘটানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আমার বার্তা/এমই

