শিক্ষার্থীর সংকটে পড়েছে দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। আগামী ৫ জুন প্রথমবর্ষ এমবিবিএস ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু কলেজগুলোতে এখনো ১২শ আসন খালি। এ অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অটোমেশন নীতিকে দায়ী করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা শুধু অটোমেশনকে শিক্ষার্থী না পাওয়ার কারণ হিসেবে মানতে নারাজ। তিনি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়নের উপর জোর দিতে বলেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি, এর আসন সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩৮০টি। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৬৭টি, এগুলোর আসন সংখ্যা ছয় হাজার ২৯৩টি। এর মধ্যে দেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন তিন হাজার ৫৫১টি। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ দুই হাজার ৭৪২টি আসন। দেশি ও বিদেশিদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনের ১৯ শতাংশ এখনো খালি। শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থানের কারণে কলেজগুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর একটি অংশ বলছে অবশ্য ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সব বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অবস্থা এক নয়। যেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভালো, তাদের শিক্ষার্থীর অভাব নেই, আসন খালি নেই। বাজারে যাদের সুনাম নেই, তারা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। মান নিয়ে এই সমস্যা আগে দূর করতে হবে। মেডিকেল শিক্ষার মান ঠিক রাখতে হলে কঠোর ভর্তিপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তা শুরু করতে হবে।
এই সমস্যা নিয়ে গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিপিএমসিএ আয়োজিত ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’ শীর্ষক আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকরা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদ্ধতিগত ভুলের কারণে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। অটোমেশনের নামে প্রাইভেট মেডিকেল সেক্টর ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে। গরিব ও মেধাবী কোটাতেও শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। একই কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে।
তবে মালিক পক্ষের এ দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত প্রকাশ না করে অটোমেশনের পাশাপাশি শিক্ষার্থী কমার অন্য আরও কারণ রয়েছে বলে মত দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা। তিনি বলেন, অটোমেশন নতুন কিছু নয়। এটি আগেও ছিল। শুধু অটোমেশনের জন্য শিক্ষার্থী আসছে না, তা হতে পারে না।
তিনি বলেন, বেসরকারিতে মানুষ কোয়ালিটি চিন্তা করে। কারণ তারা এখানে অর্থ ব্যয় করছে। কোয়ালিটি মেনটেইন না হলে কাজ করার প্রয়োজন নেই। সেটি যে সেক্টরেই হোক না কেন। এই কোয়ালিটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক দুই ক্ষেত্রেই দরকার।
তিনি আরও বলেন, একটি মেডিকেল করতে হলে আগে হাসপাতাল তৈরি করতে হবে। হাসপাতাল হচ্ছে শিক্ষার্থীর শিখার ল্যাবরেটরি। হাসপাতাল ঠিকমতো রান করলে পরে মেডিকেল কলেজের অনুমতি হওয়া উচিত।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর আয়ের অন্যতম বড় উৎস শিক্ষার্থী ভর্তির অর্থ। একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করে কলেজ ফি বাবদ পায় ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। কোনো কোনো কলেজ ভর্তি থেকে আয় করে বছরে ২০ কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ আছে, ভর্তির ব্যাপারে কলেজগুলো যতটা মনোযোগ দেয়, শিক্ষার ব্যাপারে তা দেয় না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বেনজির আহমেদ আমার বার্তাকে বলেন, দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা অনেকে এই পেশাতেই আসেন না। তারা উচ্চতর ডিগ্রি বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভালো করেন না। ফলে বাবা-মায়েরা বেশি টাকা খরচ করে বেসরকারি কলেজে সন্তানদের ভর্তি করাতে চাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান আমার বার্তাকে বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এক হাজার ২০০টি আসন খালি আছে। এর মধ্যে মেধাবী দরিদ্র ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসনও আছে। মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ভর্তি করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে আসন ১২০টি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই কলেজে একটি আসনও খালি নেই। কলেজটি ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। এ রকম আরও বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীর সংকট নেই। সংকটে পড়েছে সেসব কলেজ, যাদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই, নেই হাতে-কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা। এগুলোর সংখ্যা বেশি। এরা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এরা ইচ্ছা করলেই শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারছে না। কারণ, এমবিবিএস ভর্তিপ্রক্রিয়া এখন পুরোপুরি ডিজিটাল হয়েছে। কোন মেধাক্রমের শিক্ষার্থী কোন কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন, কোন কলেজ কোন মেধাক্রমের শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাচ্ছে, তা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগে জানতে পারে।
আমার বার্তা/জেএইচ