ইমরানের অপকর্মের ফিরিস্তি ইতিপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দূূদকের উপপরিচালক বিলকিস আক্তারের নেতৃত্বে রাজউকে অভিযান পরিচালনা করে বেশকিছু অপকর্মের প্রমাণ পায় দুদক টিম। কিন্তু ইমরানের ক্ষমতার দাপটে এখনো ব্যবস্থা নেয়নি দুদক।
ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে দূর্নীতিবাজ ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পালিয়ে গেছেন, অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। মূলত এসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আওয়ামী সরকারের আমলে সিন্ডিকেট তৈরি করে দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এসব দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার মধ্যে রাজউকের ইমরান হোসেন একটি আলোচিত নাম। তিনি রাজউক জোন ৬/১ এ প্রধান ইমারত পরিদর্শক হিসেবে চাকরিরত অবস্থায় গড়ে তুলেছিলেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগের একজন এমপি, ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজইকেরই কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় গড়ে তুলেছিলেন এ সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটটি নকশা বহির্ভূত ভবনগুলোতে নোটিশ প্রদান করে, কখনোবা মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
নোটিশ বা মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে চাহিদা মতো টাকা আদায় করতে না পারলে সেসব ভবন উচ্ছেদের নামে আংশিক ভেঙে ফেলতো সিন্ডিকেটটি ও ভবন মালিকের সাথে করতেন ৩০০/-(তিনশত) টাকার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে চুক্তিনামা এই মর্মে যে, নিজ খরচে ভবনের অনিয়মিত অংশগুলো ভেঙে ফেলবে। এমন উচ্ছেদের পর চলতো ইমরান সিন্ডিকেটের তৎপরতা। তারা ভবনগুলোর জোড়াতালির কাজ করতে সহযোগিতা করে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া সিন্ডিকেটটি নিয়ম বহির্ভূতভাবে নকশা পাইয়ে দিয়েও লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। প্রয়োজনে তারা জাল কাগজপত্র তৈরি করতেন। এসব অপকর্ম পরিচালনার জন্য রাজউক ভবনের পেছনের পাশে একটি অফিসও নিয়েছিলেন ইমরান। ইমরানের অপকর্মের ফিরিস্তি ইতিপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দুদকের উপপরিচালক বিলকিস আক্তারের নেতৃত্বে রাজউকে অভিযান পরিচালনা করে বেশকিছু অপকর্মের প্রমাণ পায় দূদক টিম। কিন্তু ইমরানের ক্ষমতার দাপটে এখনো ব্যবস্থা নেয়নি দুদক।
তৎকালীন রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া শাস্তি হিসেবে প্রদান করেন শুধুমাত্র বদলি ও গঠন করেন একটি নামমাত্র তদন্ত কমিটি যা আজও আলোর মুখ দেখেনি। রাজউকে বেশ কিছুদিন অনুসন্ধান করলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। রাজউকেরই একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ইমরান হোসেন প্রতিদিন স্থানীয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী নিয়ে নিয়মিত অফিস করতো যারা তাকে রাজউকে প্রভাব বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে শুধুমাত্র জোন ৬/১-ই নয়, জোন-৬/২, জোন-৬/৩ অর্থাৎ পুরো জোন-৬ সহ রাজউকে অন্যান্য জোনে নকশা অনুমোদন করতে আশা যেসব গ্রাহক কাগজের ঠুনকো সমস্যায় আটকে পরতো ইমরান সিন্ডিকেট তাদের সাথে যোগাযোগ করে লাখ লাখ টাকার ঘুসের বিনিময়ে নকশাগুলো পাশ করিয়ে দিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, একটি ডেভলপার নকশা অনুমোদন নিতে এসে ড্যাবের ঝামেলার কারনে ইমরান সিন্ডিকেটের খপ্পরে পরে নকশা পেতে ২৫,০০০০০/-(পঁচিশ লাখ) টাকা ঘুস দিতে বাধ্য হয়েছেন। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ইমরান একসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে আওয়ামীলীগের এমপি কাজী জাফরুল্লাহর সুপারিশে রাজউকে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রভাব খাটিয়ে সকল নিয়মনীতি ভঙ্গ করে বেশকিছু সিনিয়রদের ডিঙিয়ে প্রধান ইমারত পরিদর্শক পদ বাগিয়ে নেন। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক ভবনের দোতলায় দখল করে নেন বড় একটি রুম। বর্তমানে বদলি হলেও রুমটি তারই দখলে রয়েছে। তার অপকর্মের সহযোগিতার জন্য ব্যক্তিগতভাকে একাধিক বেতনভুক্ত সহকারী নিয়োগ দিয়েছিলেন।
অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, ইমরান ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কয়েক কোটি টাকার জমিজমা, নিজ এলাকা জামতলা দারোগা বাড়ীতে কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল বাড়ি, স্ত্রী ও আত্নীয় স্বজনের নামে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স ও ৬৫,০০০০০/-(পয়ষট্টি লাখ) টাকা মূল্যের একটি হেরিয়ার জিব গাড়ি ক্রয় করেছেন। এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহকালে দৈনিক বর্তমান কথা এর ফটোগ্রাফারকে ইমরান হোসেন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন। হুমকির বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক রাসেল সরদার।
রাসেল সরদারের সাথ কথা বলে জানা যায়, তিনি বর্তমানে প্রান ভয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। তাই এসব বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর আরও একটি লিখিত অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ইমরান হোসেনের মোবাইলে ফোন করে মতামত নেয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি মতামত প্রদান না করে প্রতিবেদকের সাথে অফিসের বাইরে সাক্ষাৎ করার প্রস্তাব দেন।
আমার বার্তা/এমই