জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে বলে কিছু গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদ থেকে বাদ পড়া প্রার্থী অমর্ত্য রায় জন।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে একটি গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন।
আজ সকালে কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিপি পদ থেকে বাদ পড়া প্রার্থী অমর্ত্য রায় সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে একটি রিট দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অমর্ত্য রায় জন বলেন, ‘জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট নামে যেসব সংবাদ হয়েছে তা সম্পূর্ণ গুজব। আমি এখনও কোনো রিট করিনি। আর রিট করলে তা প্রার্থিতা পুনর্বহাল চেয়ে করবো। জাকসু নির্বাচন স্থগিত কিংবা বানচালের জন্য কোনো ধরনের রিট করবো না।’
এদিকে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল থেকেও রিট করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে। প্যানেলর পক্ষ থেকে এক ক্ষুদে বার্তায় জানানো হয়েছে, ‘ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জন জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে কোনো রিট করেননি। তাঁর প্রার্থিতা পুনর্বহাল চেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে রিট দাখিল করা হবে। রিট ফাইল হওয়ার পর অমর্ত্য রায় জনের আইনজীবী মানজুর আল মতিন এ ব্যাপারে হাইকোর্টে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন।’ ভুল নিউজ দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল।
অমর্ত্য রায় জন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০১৭-২০১৮ সালের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী। তার দাবি, ভিপি প্রার্থী থেকে তাঁকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ৮ দিন পর শনিবার অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জন জাকসু গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তার নাম ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হলো। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও স্বাক্ষর করেছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম, সদস্য অধ্যাপক এম মাফরুহী সাত্তার ও অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী।
তবে কমিশনের আরেক সদস্য অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা এতে স্বাক্ষর করেননি। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অসুস্থ থাকায় আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম না, তাই স্বাক্ষর করতে পারিনি।’
রোববার প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে জাবি ভিসি, রেজিস্ট্রার ও জাকসু নির্বাচনের প্রধান কমিশনারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থিতা বহাল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসাইন তাঁর পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর ই-মেইলের মাধ্যমে এ আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়, জাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী এবং ন্যায়বিচারের নীতি ও সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। নোটিশে আরও বলা হয়, ‘অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বহাল করে এ নোটিশ প্রাপ্তির ১২ ঘণ্টার মধ্যে তা জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায়, এটি ধরে নেওয়া হবে যে আপনারা ন্যায়বিচার প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং সে ক্ষেত্রে অমর্ত্য রায়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে রিট দায়ের করার নির্দেশ আমার কাছে রয়েছে, যার সকল খরচ ও পরিণতির দায়ভার আপনাদের ওপর বর্তাবে।’
নির্বাচন কমিশনের সূত্র, ১৭ আগস্ট জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৫ আগস্টের খসড়া প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে ২৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। এতে ভিপি হিসেবে অমর্ত্য রায়ের নাম ছিল। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ৭ দিন পর তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
এ নিয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘সকালে সিন্ডিকেট থেকে জানানো হয়েছে যে, অমর্ত্য নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। জাকসু সংবিধান অনুযায়ী অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারেন না। তাই তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।’
কেন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট থেকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের কোনো সদস্যকে জিজ্ঞেস করুন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত হয়। অমর্ত্য ১১ আগস্ট যখন মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করেন, তখন একাডেমিক কাউন্সিল ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর দেখতে পায় তিনি স্নাতক ডিগ্রি শেষ করতে পারেননি। স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা ৪০৮ নম্বর কোর্সে দুইবার অকৃতকার্য হয়েছেন। একাডেমিক কাউন্সিল তাকে বিশেষ বিবেচনায় বিশেষ পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এ ধরনের শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত ধরা হয়। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছি।’
নির্বাচনী গঠনতন্ত্রের ৪ ধারায় বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মিত ও বৈধ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-সংসদের সদস্য বলে গণ্য হবেন। কেবল তারাই ভোটার বলে বিবেচিত হবেন এবং শিক্ষার্থী সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে শর্তাবলি হচ্ছে, যে সকল শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ৬ (৪+২) বছর অথবা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ২ (১+১) বছর ধরে অধ্যয়ন করছেন, কেবল সে সকল শিক্ষার্থীর নাম জাকসু ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
অন্যদিকে, গঠনতন্ত্রের ৮ ধারায় উল্লেখ আছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করা সাপেক্ষে সংসদে ও যেকোনো নিয়মিত সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোট প্রদান করতে পারবে।
এ ঘটনার পর শনিবার রাত ৯টায় অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল প্রজ্ঞাপন সম্পূর্ণ অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত বলে জানিয়েছে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল।
উল্লেখ্য, ৩৩ বছর পর ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাকসুতে ২৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৭৯ জন। শীর্ষ ভিপি পদে ১০ জন এবং সাধারণ সম্পাদকে (জিএস) পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আমার বার্তা/জেএইচ