রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবরের কিশোর গ্যাং, মাদক ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ প্রবণতার কারণে মারাত্মক বিরুপ প্রভাব ফেলছে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ওপর। বিশেষ করে এসব এলাকায় কিশোর বয়সীদের বিপথগামী হওয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। যার ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও।
আর এ সকল প্রভাব কাটাতে সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মোহাম্মদপুরের অন্তত ৭০ টিরও বেশি স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘সুশিক্ষা ও সহশিক্ষার মাধ্যমে মাদক, সন্ত্রাস ও কিশোর গ্যাং মুক্ত এবং ন্যায়নীতি আদর্শ মোহাম্মদপুর-আদাবর গড়ার প্রত্যয়ে’ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে সামাজিক সংগঠন আলফা স্টার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মোহাম্মদপুর ও আদাবরে স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজের সামনে ‘মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে’ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ‘মাদক নয়, স্বপ্ন চাই’, ‘যে মুখে মা ডাকি, সে মুখে মাদক নয়’, ‘গ্যাং নয়, গড়বো ন্যায়নির্ভর সমাজ’—এমন নানা প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি মোহাম্মদপুরের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে থেকে শুরু হয়ে নুরজাহান রোড, টাউনহল হয়ে তাজমহল রোড এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
মোহাম্মদপুর-আদাবর সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত র্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আব্দুল হাই শিকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদপুরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস সালাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই বলেন, মোহাম্মদপুর সম্পর্কে একটি খারাপ ধারণা রয়েছে, মোহাম্মদপুর মানেই সন্ত্রাস, খুন, মাদক। মোহাম্মদপুরে এতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে কেনো এমনটা হয়। আজকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আজ একত্রিত হয়েছো। এই শিক্ষার্থীরাই হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টকে বিতারিত করেছে। সেই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে বাংলাদেশ পাল্টে যাবে। আমি মনে করি জুলাই আন্দোলনে আবু সাঈদ যে কারণে প্রাণ দিয়েছিলো, মানবিক, গণতান্ত্রিক, ন্যায় বিচারের বাংলাদেশ। আমরা যদি দেশকে ভালোবাসি, দেশের ভালো চাই তাহলে মাদককে ‘না’ বলতে হবে। সন্ত্রাসকে ‘না’ বলতে হবে। অন্যায়কে রুখতে হবে। ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা পালন করছে সেটি অবিস্বরনীয়। এমন ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ সারাদেশে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি নেতা ও মোহাম্মদপুরের প্রবীন রাজনীতিবিদ আবদুস সালাম বলেন, আজকে এটা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা জানেন মোহাম্মদপুরের আইনশৃঙ্খলার যে চরম অবনতি হয়েছে। খারাপ চিত্রের কোনো কথা উঠলেই মোহাম্মপুরের নাম সবার আগে থাকে। মোহাম্মদপুরকে আমরা সন্ত্রাস মুক্ত করতে চাই। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে মাদক ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। ‘যে মুখে মা ডাকি, সে মুখে মাদক গ্রহণ না করি’- ‘মাদককে না বলি, জীবনকে হ্যাঁ বলি,সহ নানা স্লোগান হাতে প্লেকার্ড তুলে ধরছেন শিক্ষার্থীরা। এভাবেই আমরা মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত এবং চাঁদাবাজ মুক্ত মোহাম্মদপুর গড়ে তুলবো। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে বসবাস যোগ্য গড়ে তুলবো।
শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ওয়ালী উল্লাহ বলেন মোহাম্মদপুর আদাবরের শিক্ষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ ইনশাআল্লাহ মোহাম্মদপুর আদাবরের সকল অন্যায় দূর হবে।
ব্যতিক্রম এমন আয়োজনের প্রধান সময়ন্বকারী আলফা স্টার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোঃকামরুল হাসান বলেন মোহাম্মদপুর আদাবরের শিক্ষক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও রাজনীতিবিদরা একসাথে কাজ করলে সমাজ পরিবর্তন হতে বাধ্য।
আমার বার্তা/এমই