দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেলস্টেশনে যাত্রীদের লাগেজ স্ক্যানিং ব্যবস্থা চালু হলো। কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে বসানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ ব্র্যান্ডের অত্যাধুনিক স্ক্যানার, যা মাদক, অস্ত্র ও চোরাই পণ্য শনাক্তে সক্ষম। এখন থেকে প্রতিটি যাত্রীর ব্যাগ স্ক্যান করানো বাধ্যতামূলক।
সোমবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসে ওঠার আগে যাত্রীরা স্ক্যানিং মেশিনে নিজেদের লাগেজ রাখছেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনী যৌথভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্ক্যানিংয়ে সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাগ খুলে দেখা হচ্ছে। যাত্রীরাও এতে সহযোগিতা করছেন এবং কোনো বিরক্তি প্রকাশ করছেন না।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন এ ব্যবস্থায় ট্রেনভিত্তিক অপরাধ, মাদক ও অবৈধ পণ্য পরিবহন রোধে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হবে।
আইকনিক রেলস্টেশনে স্ক্যানিং কার্যক্রমে নিয়োজিত টিকিট কালেক্টর শান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে মাদক ও চোরাচালান বেড়েছে। যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই স্ক্যানিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ এড়াতে ট্রেন ছাড়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে স্টেশনে আসার অনুরোধ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্ক্যানিং মেশিনটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছে। এটি ওষুধজাত দ্রব্য, মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র ও চোরাই পণ্য শনাক্তে সক্ষম। মেশিনে শনাক্ত হলে তবেই ব্যাগ খোলা হয়, অন্যথায় নয়। যাত্রীদের হয়রানি যেন না হয়, সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে কক্সবাজার রেলস্টেশনের মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘চট্টগ্রাম, ঢাকা ও কক্সবাজার—এই তিনটি স্টেশনে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে নিয়মিত অপারেশন শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরাও নিরাপত্তা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও মাদক নিয়ন্ত্রণে এটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।’
নতুন প্রযুক্তি নিয়ে যাত্রীরাও সন্তুষ্ট। ঢাকাগামী যাত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘নতুন এই উদ্যোগ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে যেন অহেতুক হয়রানি না হয়, সেটাও দেখতে হবে।’
আরেক যাত্রী আব্দুর রহমান বলেন, ‘পরিবার নিয়ে যারা ভ্রমণ করি, তাদের জন্য এটি স্বস্তির বিষয়। দ্রুত স্ক্যানিং করলে লাইনও পড়বে না।’
রবিউল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘নিরাপত্তা দরকার, তবে সাধারণ যাত্রীরা যেন ভোগান্তিতে না পড়ে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’
রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্ক্যানারটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি। এটি ধাতব বা অজানা বস্তু শনাক্ত করতে পারে। শুধু নিরাপত্তা নয়, এটি মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান প্রতিরোধেও কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার রেললাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর। বর্তমানে কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’, এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ‘সৈকত এক্সপ্রেস’ ও ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ চলাচল করছে।
আমার বার্তা/এল/এমই