
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কয়েকটি গ্রামে নলকূপ খনন করলেই বেরিয়ে আসছে গ্যাস। সেই গ্যাস দিয়েই স্থানীয়রা প্রতিদিনের রান্নার কাজ করছেন বিনা খরচে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি এখন এলাকাবাসীর নিত্যদিনের বাস্তবতা—নলকূপের পানি আর আগুনের এই অদ্ভুত সংমিশ্রণ এখন গ্রামীণ জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার কাচিয়া, টবগী, হাসাননগরসহ অন্তত পাঁচটি গ্রামে শত শত টিউবওয়েল থেকে গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এতে করে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার বিনামূল্যে গ্যাস ও পানি ব্যবহার করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক বাড়িতে টিউবওয়েল থেকে পাইপ টেনে রান্নাঘর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেউ কেউ সেই গ্যাস অন্যের বাড়িতেও সরবরাহ করে আয় করছেন। একটি টিউবওয়েল থেকে গড়ে চার থেকে পাঁচটি গ্যাসলাইন টানা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস ও রতন হাওলাদার বলেন, “আমরা টিউবওয়েল খনন করলেই গ্যাস পাই। সেই গ্যাস দিয়েই রান্না করি। আমাদের মতো অনেক পরিবার এইভাবে গ্যাস ব্যবহার করছে।”
গৃহিণী জান্নাত বেগম ও রোজিনা জানান, “আমাদের গ্যাসের কোনো বিল লাগে না। পানি আর গ্যাস—দুটোই আসে একসঙ্গে। এতে আমাদের খরচ অনেকটা কমে গেছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভূগর্ভের প্রায় ৯০০ ফুট নিচ থেকে পানি ওঠার সময় গ্যাসও নির্গত হচ্ছে। অনেকেই টিউবওয়েলে ড্রাম, কম্প্রেসার ও সিলিন্ডার বসিয়ে সেই গ্যাস সংরক্ষণ করছেন এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন। এমনকি ওই গ্যাস ব্যবহার করে এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে কয়েকটি ছোট কারখানাও।
তবে এসব সংযোগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়ের ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন, যা সরকারের রাজস্ব ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান-উজ্জামান বলেন, “বাপেক্স জানিয়েছে এগুলো পকেট গ্যাস। তবে অনুমতি ছাড়া গ্যাস ব্যবহার করা ঠিক নয়। বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”
ভোলা বাপেক্সের ডিজিএম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “এসব নলকূপের গ্যাসের সঙ্গে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের কোনো সংযোগ নেই। তাই আপাতত কোনো ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে না।”
উল্লেখ্য, ভোলায় বর্তমানে তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২.৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে। এখান থেকে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
আমার বার্তা/এল/এমই

