ভারতে দাম কমায় ও আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেশ কমেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরে হিলি স্থলবন্দরে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ২২ থেকে ২৩ টাকা। এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে। এদিকে দাম কমে আসায় খুশি বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররাও। আমদানিকারকরা বলছেন, সামনের দিনে পেঁয়াজের দাম ২০ টাকায় নেমে আসবে বলে দাবী বন্দরের আমদানিকারকদের।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে ইন্দোর নাসিক গুজরাট বেলোরি জাতের পেঁয়াজ বেশি আমদানি হচ্ছে। একসপ্তাহ আগেও বন্দরে এসব জাতের পেঁয়াজ প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে বন্দর দিয়ে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব জাতের পেঁয়াজের দাম কমে ৩২ থেকে ৩৮টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণও আগের তুলনায় বেড়েছে। গতসপ্তাহে যেখানে বন্দর দিয়ে ৫ থেকে ১০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছিল, এখন সেখানে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা আইয়ুব হোসেন বলেন, আমরা হিলি স্থলবন্দর থেকে পেঁয়াজ কিনে দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করি। পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহের প্রথম থেকেই কমতির দিকে ছিল। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম কমতে কমতে এমন পর্যায়ে এসেছে, যা বলার মতো নয়। যে পেঁয়াজ একসপ্তাহ আগেও ৫৫ থেকে ৬০টাকা ছিল, সেই পেঁয়াজ এখন দাম কমে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে। প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম কমছে। আজ এক দামে পেঁয়াজ কিনে মোকামে পাঠাচ্ছি, পরদিন কিনতে এসে শুনি পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে।
পেঁয়াজের বাজার এখন ‘ঠিক নেই’ উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ীই মোকামে পেঁয়াজ কিনতে ভয় পাচ্ছেন। সেইসঙ্গে মোকামেও পেঁয়াজের চাহিদা কমে গেছে। আগে যেখানে পাঁচ থেকে সাত ট্রাক করে পেঁয়াজ পাঠাতাম। এখন সেখানে দুই থেকে তিন ট্রাক করে পেঁয়াজের ক্রয়াদেশ পাচ্ছি।
পেঁয়াজ কিনতে আসা আরেক ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। আমদানি বৃদ্ধির ফলে দামও কমতে শুরু করেছে। এছাড়া দেশীয় নতুন পেঁয়াজও পর্যাপ্ত পরিমাণে উঠেছে। আমদানিকৃত ও দেশীয় পেঁয়াজের দাম প্রায় সমান সমান হয়ে গেছে। এর ফলে বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের চাহিদাই বেশি। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কিছুটা কম। যার কারণে দাম কমতির দিকে রয়েছে। বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের প্রচুর আমদানি হচ্ছে, কিন্তু সেইভাবে বাজারে খাচ্ছে না। যার কারণে চাহিদা কম। একসপ্তাহ আগেও পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা করে কমতে কমতে বর্তমানে তা ৪০ টাকার নিচে নেমেছে। বর্তমানে পেঁয়াজ ৩২ টাকা থেকে শুরু করে ৩৮ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পুরনো জাতের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছিল। এসব পেঁয়াজের সররবাহ কমে যাওয়ায় ভারতের বাজারেই দাম বেশি ছিল। যার কারণে আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছিল। ফলে দেশের বাজারে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছিল।
তিনি বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এরফলে সেদেশের বাজারেই পেঁয়াজের সরবরাহ যেমন বেড়েছে, দামও অনেকটা নিম্নমুখি। এতে করে ভারতে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারায় আমরাও আমদানি করে দেশের বাজারে কম দামে বিক্রি করতে পারছি।’
‘এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আমদানিকারকরা আমদানিতে ঝুকেছেন। ফলে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিও বেড়েছে। এতে করে দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখি।
ভারতের পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশীয় নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় সরবরাহ বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন এই আমদানিকারক। তিনি বলেন, ‘দেশের পেঁয়াজ বাজারে আসায় আমদানিকৃত পেঁয়াজের চাহিদা কমে গেছে। এটাও দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে।’
এদিকে ভারতের পেঁয়াজের সররবাহ বেড়ে যাওয়া দেশটির সরকার পণ্যটির যে ন্যূনতম রফতানি মূল্য নির্ধারণ করে রেখেছিল, সেটিও প্রত্যাহারের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এদেশের আমদানিকারকদের জানিয়েছেন। এমন তথ্য জানিয়ে আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, এই ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার করা হলে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়বে। ফলে দাম আরও কিছুটা কমে আসতে পারে।
আমার বার্তা/এমই