দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত প্রায় ৮ হাজার সরকারি চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। তাদের অভিযোগ, পদোন্নতির সব শর্ত পূরণের পরও আমলে নেয়নি বিগত সরকার। প্রাধান্য দেয়া হত রাজনৈতিক পরিচয়। নিরপেক্ষ ও ভিন্ন মতাদর্শদের জন্য ছিল শাস্তিমূলক বদলিসহ নানা বিড়ম্বনা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, বছরের পর বছর কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতির আশায় দিন পার করছেন প্রায় ৮ হাজার সরকারি চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। তবে ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা বলছেন, এই সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। ৭ আগস্ট ৯৪২ জন চিকিৎসককে ৬ষ্ঠ গ্রেডে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে পদোন্নতি দিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
তাদের অভিযোগ, যোগ্যতার শর্ত পূরণ করেও পদোন্নতি পাননি তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকাণ্ডকেও দুষলেন কেউ কেউ। ভুক্তভোগীরা জানান, একাধিক আলোচনার পরও সমাধান মেলেনি।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও প্রোগ্রামার ডা. রেজওয়ানুর রহমান সোহেল বলেন, ‘এমন অনেক চিকিৎসক আছেন, যারা নবম গ্রেডে ঢুকে সেখান থেকেই অবসরে গেছেন। বৈষম্য দূর করে কীভাবে পদোন্নতি দেয়া যায়, সেই বিষয়ে দফায় দফায় সভা হয়েছে। কিন্তু সভায় যে সিদ্ধান্ত হয়, তা কখনোই আলোর মুখ দেখে না।’
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস এন্ড হসপিটালের আবাসিক সার্জন ডা. বশির আহমেদ খান বলেন,
অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করার পর একজন চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক হওয়ার যোগ্য হন। সুতরাং যে এ ধরনের যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাকে অবশ্যই পদোন্নতি দেয়া উচিত।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক অধ্যাপক মো. আবুল কেনান বলেন, ‘দমনপীড়নের নীতি চিকিৎসকদের ওপরও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যারা নিজস্ব ফেলো গভমেন্টের অনুসারী ছিলেন না, তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।’
বাংলাদেশ আই হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জান-ই- আলম মৃধা বলেন, ‘গত ১৫/১৬ বছর আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) লোকদেরই পদোন্নতি দেয়া হয়। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি।’
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে এই চিকিৎসকরা তাদের পদোন্নতি মঞ্জুর করতে মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।
গণ-অভ্যুত্থানের আগে বা পরে বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠী আন্দোলনের নামে নিজেদের দাবি আদায় করলেও মানুষের জীবন জিম্মি করে তা আদায় করতে চাননি বলে জানান চিকিৎসকরা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পাশাপাশি নিজেরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে পদোন্নতি প্রক্রিয়াকে বৈষম্যমুক্ত রাখার দাবি জানান তারা।
আমার বার্তা/এল/এমই