অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মরক্কোর রাস্তায় নেমে এসেছেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। প্রায় ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজন। খবর আল জাজিরার।
বিগত কয়েক মাসের মধ্যে এটাই ছিল মরক্কোর সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি। স্থানীয় সময় রোববার (৬ এপ্রিল) দেশটির রাজধানী রাবাতের বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় জড়ো জন বিক্ষোভকারীরা। সে সময় বিক্ষোভকারীদের ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করতে দেখা গেছে।
এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস নেতাদের ব্যানারও বহন করছিলেন তারা। সে সময় তারা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ছবির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি যুক্ত করে বানানো ক্ষোভের পোস্টারও বহন করেন।
এর আগে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ।
গাজার ভয়াবহ দৃশ্য ও নিহতের সংখ্যা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে এই ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে যুদ্ধের অবসানের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা একত্রিত করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গাজায় ইসরায়েলি অপরাধ ও ফিলিস্তিনি অধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা ও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বাকস্বাধীনতার ওপর দমনপীড়নের প্রতিবাদে হোয়াইট হাউজের সামনের রাস্তায়ও হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনিদের অধিকারে সমর্থনকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাছাড়া ইসরায়েলকে মার্কিন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
মূলত অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের। গত ১২ ঘণ্টায় যে হামলা চালানো হয়েছে তার অধিকাংশই খান ইউনিসে। সেখানে শিশু ও নারীসহ কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছেন।
পরিস্থিতি প্রতিদিনই আরও খারাপ হচ্ছে। পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য যে কোনো ধরনের খাবার খুঁজছে ফিলিস্তিনিরা। গত এক মাসে গাজায় একটিও ট্রাক প্রবেশ করেনি। তাই খাবার নেই, জ্বালানি নেই, রান্নার গ্যাস নেই। এমনকি ওষুধও নেই, আশ্রয় বা তাঁবুও নেই।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নতুন করে আরও অন্তত ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাসের ছোড়া রকেট হামলার পর এই বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিত তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ১৪ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
গাজার হামাসনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৬৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন।