
সেনাবাহিনীতে (আইডিএফ) বাধ্যতামূলক নিয়োগ পরিকল্পনার প্রতিবাদে ইসরাইলে বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) জেরুজালেমের প্রবেশপথ অবরোধ করে এই বিক্ষোভ করেন কট্টর রক্ষণশীল (আল্ট্রা অর্থোডক্স) ইহুদিরা। প্রায় ২ লাখ হারেদি ইহুদি এই বিক্ষোভে অংশ নেয়।
সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের প্রতিবাদে জেরুজালেমে ২ লাখ ইহুদির বিক্ষোভ।
ঐতিহ্যবাহী কালো পোশাক ও টুপি পরে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিলে অংশ নেয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা গান গেয়ে আর হাতে তালি দিয়ে স্লোগানে স্লোগানে বলেন, তারা জেলেন যাবে তবুও সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে না। তারা আরও বলেন, ধর্মগ্রন্থ তোরা অধ্যয়ন করাই তাদের প্রধান কাজ।
বিক্ষোভে বিভিন্ন প্রতিবাদ লেখা ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। তাতে লেখা ছিল, ‘তোরা-র (ধর্মগ্রন্থ) পক্ষে জনগণ’ ও ‘ইয়েশিভা (ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান) বন্ধ মানে ইহুদিবাদের মৃত্যু’। বিক্ষোভের সময় কিছু স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এতে শহরের বিভিন্ন অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ইসরাইলে হারেদি গোত্রের মতো কট্টর রক্ষণশীল ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে যোগদানে ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু গাজা আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে বাহিনীতে সেনা সংকট দেখায় সম্প্রতি এই কট্টর ইহুদি যুবকদেরওে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার নোটিশ দেয়া শুরু করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার।
বিষয়টি ধর্মীয় সমাজে গভীর অসন্তোষ ও বিভাজন সৃষ্টি করে, যা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুতর হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু তার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য কট্টর রক্ষণশীলদের দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল। ফলে রক্ষণশীল গোত্রের যুবকদের সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের পরিকল্পনা তার সরকারের পতন ঘটাতে পারে।
দ্য টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, নেতানিয়াহু সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার প্রায় দুই লাখ পুরুষ বিক্ষোভে যোগ দেন। ২০১৪ সালের পর প্রথমবার হারেদি সম্প্রদায়ের সব শাখা ‘মার্চ অব দ্য মিলিয়ন’ নামে এ বিক্ষোভে অংশ নেয়।
ইসরাইলে প্রায় ১৩ লক্ষ কট্টর রক্ষণশীল ইহুদি রয়েছে যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ। এরা সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিরোধিতা করছে কারণ তাদের বিশ্বাস, মাদ্রাসায় পূর্ণকালীন পড়াশোনা করাই তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, যারা পূর্ণ সময় ধর্মীয় পাঠে নিয়োজিত থাকবে তারা সেনাবাহিনীতে যোগদান থেকে অব্যাহতি পাবে। তবে গত বছর (২০২৪) অন্য সব নাগরিকের মতো কট্টর রক্ষণশীল যুবকদেরও সেনাবাহিনী অংশ নিতে হবে বলে রায় দেয় ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্ট।
কিন্তু এই রায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জোট সরকারের জন্য বড় সংকট তৈরি করে। এই আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে গত জুলাই মাসে কট্টর রক্ষণশীল দল ইউনাইটেড তোরা জুডাইজম (ইউটিজে) জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট ইসরাইলের ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।
তথ্যসূত্র: এপি ও টাইমস অব ইসরাইল
আমার বার্তা/এল/এমই

