বৃদ্ধ বয়সে একাকিত্ব শুধু মানসিক কষ্টই নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। প্রিয়জনদের সঙ্গ হারানো, সন্তানদের দূরে থাকা বা জীবনের গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের কারণে অনেক বৃদ্ধই একা হয়ে পড়েন। একাকিত্ব তাদের মধ্যে হতাশা, দুশ্চিন্তা, এবং রোগ-ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি এটি বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ায়।
কানাডার কুইনস ইউনিভার্সিটির একটি সাম্প্রতিক গবেষণা জানিয়েছে, মা-বাবার সঙ্গে সন্তানদের সময় কাটানো তাদের দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাকিত্বের প্রভাব সরাসরি বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে এবং বয়সজনিত নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে কানাডার প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষই একাকিত্বে ভুগছেন, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গবেষণাটি ১,৬০০ জন বয়স্ক মানুষের ওপর ২০ বছর ধরে পরিচালিত হয়েছে, যাদের বয়স ৬৫ থেকে ৮১ বছরের মধ্যে। এতে দেখা যায়, যারা একাকিত্বে ভুগছেন, তাদের গড় আয়ু সঙ্গী, সন্তান বা বন্ধুদের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় কম। গবেষণায় আরও প্রকাশ পায়, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ২৩ শতাংশ একা হয়ে যাওয়ার পর ৬ বছরের মধ্যে মারা গেছেন, যেখানে সন্তান বা সঙ্গীসহ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ওই সময়ের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল মাত্র ৭ শতাংশ।
বয়স্ক মা-বাবাকে কেন সময় দিতে হবে?
আপনি হয়তো দুই দশক ধরে আপনার মা-বাবার সঙ্গে ছিলেন, কিন্তু তারপর একদিন তাদের জীবন থেকে হঠাৎ ‘নেই’ হয়ে গেলেন এবং নিজের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এই পরিবর্তন মা-বাবার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যদি একজন মা-বাবা আরেকজনের সঙ্গে না থাকেন, তখন একাকিত্ব আরও বেড়ে যায়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কার্যকারিতা কমতে থাকে এবং যদি কেউ একা থাকেন, তার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য বা উদ্দীপনা না থাকলে, এই প্রক্রিয়া দ্রুত হতে পারে। সামাজিক বা পারিবারিক জীবনযাপনের অভাবে বয়স্কদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা আরও বাড়তে পারে। একাকিত্বের কারণে দুশ্চিন্তা শুরু হয়, যা পরবর্তীতে নানা শারীরিক ও মানসিক অসুখের কারণ হতে পারে।
আপনি যদি চান যে আপনার মা-বাবা সুস্থভাবে বেঁচে থাকুক, তাহলে তাদের সঙ্গে সময় কাটান। তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন, নিয়মিত কথা বলুন, হাঁটতে বের হন এবং তাদের ছোট ছোট দায়িত্ব দিন। দূরে থেকেও নিশ্চিত করুন, তারা যেন একা না হয় এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাদের যুক্ত করার চেষ্টা করুন।
সূত্র: ফিউচার কেয়ার গ্রুপ ও মাইন্ডসেট থেরাপি