স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে ভারতীয় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের (এমএসপি) সঙ্গে চুক্তি হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের কারণে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ডের জন্য আবেদনকারীদের অপেক্ষার সময় বেড়েই চলেছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের জুলাইয়ে ১২০ কোটি টাকার চুক্তি হয়। স্মার্টকার্ড ইস্যুতে বিলম্ব হয়েছে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আমল থেকে। পক্ষপাতদুষ্ট চুক্তির কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সালের জুলাইয়ের মধ্যে ৪০ লাখ স্মার্টকার্ড সরবরাহ করতে হবে। তবে সরবরাহকারী সংস্থাটি এখন পর্যন্ত এই সংখ্যার মাত্র অর্ধেক সরবরাহ করতে পেরেছে। সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ এমএসপি এখনও ৬ লাখ ১০০ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি। আবেদনকারীরা কখন তাদের কার্ড পাবেন তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই।
বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, কার্ড সরবরাহে এমএসপির দেরির কারণে বিআরটিএর কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে। নতুন আবেদন, নবায়ন ও সংশোধনের জন্য আবেদন আসছে অব্যাহতভাবে।
অন্যদিকে এমএসপির দাবি, বিআরটিএ বিল পরিশোধ না করায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ডের পরিবর্তে স্ট্যান্ডার্ড পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) কার্ড চালু করে।
বিআরটিএ জানিয়েছে, নতুন আবেদনকারীরা পিভিসি কার্ড পাবেন এবং পুরাতন আবেদনকারীদের পূর্বের কার্ড জমা দিতে হবে। তবে কবে নাগাদ তা জারি করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।
আবেদনকারীরা জানান, স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ডের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা তাদের জন্য নানা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। বৈধ স্মার্টকার্ড ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়।
রাজধানীর মোটরসাইকেল চালক রবিউল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। প্রাথমিক কাগজপত্র গ্রহণ করতে রাজি হয় না সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ।
এ বিষয়ে বিআরটিএর নিরীক্ষা ও আইন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আবেদনকারীদের ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কিউআর কোডসহ অস্থায়ী কাগজপত্র দেওয়ার সুযোগ দিয়ে ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্স সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এর ফলে লোকজন তাদের স্মার্টকার্ড না পাওয়া পর্যন্ত গাড়ি চালাতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য চেষ্টা করছে। তাই আমরা বিকল্প হিসেবে এই সিস্টেম চালু করেছি।’
প্রসঙ্গত, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এমএসপির আগে, একটি ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করেছিল। সেসময় নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রায় ১৫ লাখ কার্ড সরবরাহ করেছিল তারা।
আমার বার্তা/জেএইচ