পার্থের পেসবান্ধব উইকেটে পেসাররা রাজত্ব করবেন এমনটা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে চলমান টেস্টের প্রথম দিনটাতে বেশ বাড়াবাড়ি রকমই নাটাই ঘোরালেন দুই দলের পেসাররা। তাতে চোখে ‘সর্ষে ফুল’ দেখলেন যেন ব্যাটাররা।
হ্যাজলউড-স্টার্কদের তোপে নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়াকেও আষ্ঠেপৃষ্টে বেধে ফেলেছে ভারত। বুমরাহদের আগুনে বোলিংয়ে এরই মধ্যে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৬৭ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে স্বাগতিকরা। প্রথম দিনের খেলা শেষে ভারতের চেয়ে এখনো ৮৩ রান পিছিয়ে আছেন প্যাট কামিন্সরা।
পার্থ টেস্টের প্রথম দিনেই উইকেটের পতন হয়েছে ১৭টি। ১৯৫২ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টের প্রথম দিনে সর্বোচ্চ উইকেট পতনের রেকর্ডও এটি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জার পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছিল ভারতের জন্য। বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষের খোঁচা টিপ্পনীতো ছিলই, এর মধ্যে 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মাও দলের বাইরে।
নতুন অধিনায়ক জসপ্রীত বুমরাহ নামলেন পার্থের বাইশগজে টসের জন্য। কয়েন ভাগ্য ভারতীয় অধিনায়কের পক্ষেই থাকে এদিন। টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বুমরাহ। তবে অস্ট্রেলিয়ার পেস ব্যাটারির সামনে কোনো জবাব ছিল না ভারতীয় ব্যাটারদের। নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫০ রানে গুটিয়ে গেছে ভারত। তাদের ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল কেবল ৪৯ ওভার ৪ বল।
দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন অভিষিক্ত নীতিশ কুমার রেড্ডি। এ ছাড়া রিশাভ পান্ত ৭৮ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন। এ দুই ব্যাটারের ৮৫ বলে ৪৮ রানের জুটিটাই ভারতের রান দেড়শো পর্যন্ত নিয়ে গেছে শেষ পর্যন্ত।
একাই চার উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের টপ এবং মিডল অর্ডারে বড় ধাক্কা দেন জশ হ্যাজেলউড। দুটি করে উইকেট যায় বাকি তিন অজি পেসারের ঝুলিতে। সবমিলিয়ে, পার্থের গতি আর বাউন্সে ভারতকে ধরাশায়ী করার পরিকল্পনায় সফল হয় অজিরা।
অস্ট্রেলিয়ার অস্ত্রেই স্বাগতিকদের বেকায়দায় ফেলল ভারত। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন নেতা জশপ্রীত বুমরাহ। অধিনায়কের সঙ্গে দুরন্ত বোলিং করলেন মোহাম্মদ সিরাজ এবং ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নামা হর্ষিত রানা। তিনজন মিলে ২৭ ওভার বল করেন। তাতেই তুলে নিয়েছেন বিপক্ষের সাত উইকেট। ২০ রানও টপকাতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার কোনো ব্যাটার।
অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়াকে বড় ধাক্কা দেওয়ার বিকল্প ছিল না। বুমরাহ শুরু থেকে সেই কাজটাই করে গেছেন। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অজি ওপেনার নাথান ম্যাকসোয়েনিকে সাজঘরে ফিরিয়ে শুরুটা করেছিলেন। বিরাট কোহলি ক্যাচ না ফসকালে দ্রুতই লাবুশেনকেও ফেরাতে পারতেন। দেরিতে হলেও দুর্দান্ত একটা ওভারে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারে কাঁপুনি ধরান।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে চতুর্থ ডেলিভারিতে আবারও বুমরাহর আঘাত। সেকেন্ড স্লিপে বিরাট কোহলির হাতে ধরা পড়ার আগে ১৯ বলে ৮ রানে করেন খাজা। এরপরই ক্রিজে প্রবেশ অস্ট্রেলিয়া তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার স্টিভ স্মিথের। এই সিরিজে আলোচনার কেন্দ্রে দুই কিংবদন্তি বিরাট কোহলি ও স্টিভ স্মিথ। কোহলি প্রথম ইনিংসে ১২ বলে ৫ রান করেছিলেন। স্মিথ সেই সুযোগও পেলেন না।
ভেতরে আসা ডেলিভারিতে প্রথম বলেই তাকে লেগ বিফোরে ফেরালেন বুমরাহ। গোল্ডেন ডাক হয়ে ফিরলেন স্মিথ। এতটাই নিখুঁত ডেলিভারি, রিভিউ নেওয়ার আগ্রহ দেখাননি। মাত্র ১৯ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। সেই তিন উইকেটই বুমরাহর ঝুলিতে যায়। পরে তোপ দাগলেন সিরাজ-হর্ষিত রানারা। শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিক ব্যাটাররা।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বুমরাহ। ১০ ওভার বল করে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। দুটি উইকেট পেয়েছেন সিরাজ। জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে ‘ভারতের ত্রাস’ ট্র্যাভিস হেডের উইকেট তুলে নিয়েছেন হর্ষিত রানা।
পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের বিপক্ষে টেস্টের এক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন রান ৮৩। সেই লজ্জার নজির এড়াতে এখনও ১৬ রান দরকার কামিন্সদের। প্রথম ইনিংস ভারতের রান টপকাতে ৮৩ চাই অস্ট্রেলিয়ার।
আমার বার্তা/এমই