নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত উইন্ডোর প্রথম দিকটা ডিসেম্বরকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি। এখন নির্বাচন কবে হবে এটা একটা ঐকমত্যের বিষয়।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় ঠাকুরগাঁওয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি উপলক্ষে তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজার ও নতুন ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কার এটি একটি চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এই সংস্কার বিভিন্নভাবে চলছে চলবে। তবে আমরা নিশ্চিত করব মাঠপর্যায়ে যারা দায়িত্বে পালন করবেন তারা যেন পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করেন। আমরা নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করতে চাই আমরা যদি পরিচ্ছন্ন স্বচ্ছ একটা পাত্র উপহার দিতে পারি আমাদের এই পাত্রে যে পানি রাখা হোক সেই পানিটা স্বচ্ছ রঙ ধারণ করবে। অতীতে বাস্তবতা আমরা জানি, সে বাস্তবতা নিরিখে সতর্ক আছি। আমরা বিশ্বাস করি মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান সভায় স্ব-স্ব ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য সচেষ্ট থাকবেন।
নির্বাচন কবেনাগাদ হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল বলেন, সময়ের ব্যাপারটা নির্বাচন কমিশনারের হাতে নয়, এটি সরকারের হাতে। আপনারা জানেন- একটি সংস্কার কার্যক্রম চলমান আছে। কয়েকটা সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে তাদের সুপারিশ পেশ করেছেন। আমরা আমাদের প্রধান উপদেষ্টার ১৬ ডিসেম্বর বক্তব্যের মাধ্যমে একটি ধারণা পাই। তিনি বলেছেন- যদি রাজনীতি মতানৈক্য এমন একটি জায়গায় দাঁড়ায় যে, তারা স্বল্পসংখ্যক সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন চান, তাহলে ২০২৫ সালের শেষনাগাদ এবং আরও যদি সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে আমরা এটাও জেনেছি- এ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরে জাতীয় ঐকমত্য একটি কমিশন গঠন করা হবে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আগে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যাতে নির্বাচন কার্যক্রম দ্রুত হাতে নেওয়া যায়।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আরও বলেন, বিদেশে কিছু নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিক সাজতে চায়। বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। আমাদের আরও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের কিছু কিছু লোক এসে বাংলাদেশের নাগরিক সাজতে চায়। চাকরি-বাকরি ব্যবসা ইত্যাদির উদ্দেশ্যে বা হীন কোনো উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে। এদের প্রতিহত করতে হবে। এ ধরনের অসততা কোনো জায়গা দেওয়া যাবে না। এজন্য আপনাদের বেশি বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের এ প্রবণতা ঠেকানোর জন্য দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ৫৬টি উপজেলাকে নিয়ে একটি বিশেষ এলাকা ঘোষণা করেছি। তারা দূর-দূরান্ত থেকে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছে। নীলফামারী সদরে গত মাস দেড়েক আগে আমরা ১৯ জন রোহিঙ্গাকে পেয়েছি। গত তিন দিন আগে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় পাওয়া গেছে পাঁচজন স্থানীয় ছেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে ৫ জন মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে। তাদের তো আমরা নাগরিক করতে পারব না।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেকে মনে করেন ছবি তোলা গোনাহের কাজ, তারা ছবি তুলতে চান না। আমি বেশ কয়েকটি জেলাতেও পেয়েছি আমি জানি না এই জেলাতে এ ধরনের প্রবণতা আছে কিনা। বাংলাদেশের সম-অধিক ইসলামিক স্কলার মুফতি এ বিষয়ে একমত- জাতীয় প্রয়োজনে ব্যক্তির নাগরিক তথ্য ও সনদপত্র অথবা পাসপোর্টের কারণে ছবি তোলার মধ্যে কোনো অপরাধ নাই। আমি মনে করি আপনারা সচেতন করতে পারেন অন্যান্য ভোটারদের এ বিষয়ে। একই সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও অনুরোধ করব আপনারা এ বিষয়টি ধর্ম প্রতিষ্ঠানেরও সহযোগিতা নেবেন। ইসলামিক স্কলারদেরও সহযোগিতা নেবেন, যাতে করে তারা যথাযথভাবে মানুষকে সচেতন করতে পারে ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লা বলেন, একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার যারা আগেই ভোটারের যোগ্যতা অর্জন করেছে তারা বাদ পড়ে গিয়েছিল। তাদের আমরা পাচ্ছি এখন। নতুন ভোটার যারা এ বছরে ১৮ বছরের বয়স প্রাপ্ত হচ্ছেন তাদের সংখ্যা বেশি উল্লেখযোগ্য। আমাদের এবারের ভোটারের টার্গেট হচ্ছে ইয়াং জেনারেশন। আমরা চাই এ জনগোষ্ঠী যেন ব্যাপকহারে ভোটে অংশগ্রহণ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- আমাদের তরুণদের শতকরা ১০০ ভাগের কাছাকাছি ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে।
মতবিনিময় সভায় ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা, পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজারসহ নতুন ভোটাররা উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/এমই