ই-পেপার শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩২

বিতর্কিত যেসব নির্বাচনের পর ক্ষমতায় গিয়েও টিকতে পারেনি সরকার

আমার বার্তা অনলাইন
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের শুরুতে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মাথায় পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

গণরোষের মুখে সরকার প্রধানের দেশত্যাগের ঘটনা বাংলাদেশে এবার প্রথম হলেও সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার ঘটনা দেশটিতে আগেও বেশ কয়েকবার ঘটেছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে সরকারের পদত্যাগের ঘটনা ঘটে ১৯৯৬ সালে। ওই বছর মাত্র ১১ দিনের মাথায় সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্ববধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়েছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার।

এর বাইরে, আরও কমপক্ষে দুবার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করতে দেখা গেছে।

রাজনৈতিক কোন কোন দলের সরকার ঠিক কবে এবং কোন প্রেক্ষাপটে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, সেই ইতিহাসই তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

৮৬-র নির্বাচন

১৯৮৬ সালের সাতই মে বাংলাদেশের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার মেয়াদকাল ছিল মাত্র ১৭ মাস। তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অধীনে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা বর্জন করেছিল বিএনপি।

তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তখন ভোটে অংশ নিয়েছিল। নির্বাচনে ছিল জামায়াতে ইসলামীও। ভোটের কয়েক মাস আগে এরশাদের রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় পার্টি’ আত্মপ্রকাশ করে। নির্বাচনে তারা ১৫৩টি আসনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়।

ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সেটি প্রত্যাখ্যান করে ব্যাপক অনিয়ম, সন্ত্রাস ও ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলেন। যদিও পরে তিনি সংসদে যোগ দেন এবং বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকা পালন করেন।

প্রয়াত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদও তার ‘চলমান ইতিহাস ১৯৮৩-১৯৯০’ উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ব্যাপকমাত্রায় অনিয়ম হয়েছিল।

তিনি বলছেন, বহু সংখ্যক এলাকায় ভোটাররা হয় ভোটদানে নিরুৎসাহিত ছিলেন কিংবা তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য নির্বাচন কেন্দ্রে যেতেই দেয়া হয়নি। নির্বাচনের আগে থেকেই এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতা নেওয়ায় আন্দোলনটি আরও জোরদার হতে থাকে।

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন নামে একজন নিহত হলে আন্দোলনে নতুনমাত্রা যুক্ত হয়। এরশাদের পদত্যাগ ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে নভেম্বরেই সংসদের বিরোধী দলগুলোর সংসদরা সবাই একযোগে পদত্যাগ করেন।

এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে রাখতে ডিসেম্বরের শুরুতে সংসদ ভেঙে দেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরপর চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচন

১৯৮৮ সালের তেসরা মার্চ চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সেটি বর্জন করে। নির্বাচনে তখন জাতীয় পার্টিসহ মাত্র ছয়টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।

বড় দলগুলো না থাকায় ভোটে তেমন কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না। ফলে ভোটারদের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা কম ছিল। সারা দেশে ভোটার উপস্থিতিও ছিল নগণ্য।

সরকারি হিসেবে সাড়ে ৫২ শতাংশ বলা হলেও বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোট পড়ার হার ছিল আরও অনেক কম।

নির্বাচনে ২৫১টি আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করে জাতীয় পার্টি। বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মওদুদ আহমদ তখন সংসদ নেতা নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে, বিরোধী দলের নেতা হন জাসদের আ স ম আব্দুর রব, যিনি তখন ছোট কয়েকটি দলের একটি জোটের নেতৃত্বে ছিলেন। এ দফায় জাতীয় পার্টির সরকার টিকতে পেরেছিল দুই বছর সাত মাস।

এরশাদ পদত্যাগ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি না মানায় বড় রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলো রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। আন্দোলন ব্যাপক গতি পায় ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে এবং আন্দোলনরত দলগুলোর মধ্যেও ইস্যুভিত্তিক ঐক্য গড়ে ওঠে।

তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাতদলীয় জোট এবং বাম ঘরানার দলগুলোর সমন্বয়ে পাঁচদলীয় জোট গড়ে ওঠে।

এর মধ্যে দশই অক্টোবর ছাত্রদল নেতা জেহাদ মারা যাওয়ার পর জেহাদের মরদেহ সামনে রেখেই ২৪টি ছাত্র সংগঠন মিলে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করে।

এতে এরশাদবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে একই বছরের ১৯ নভেম্বর জোটগুলো আলাদা সমাবেশ করে একটি রূপরেখা ঘোষণা করে, যা ‘তিন জোটের রূপরেখা’ নামে পরিচিতি পায়।

ওই রূপরেখায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এর কিছুদিন পর ২৭ নভেম্বর ডা. শামসুল আলম খান মিলন গুলিতে নিহত হলে এরশাদ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে।

মূলত এই ছাত্র ঐক্যের নেতৃত্বেই তুমুল আন্দোলন হয়, যার জের ধরে নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে পদত্যাগে সম্মত হন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

চৌঠা ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করেন। তিনটি জোটের রূপরেখা অনুযায়ী, তৎকালীন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

এরপর ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি দেশে প্রথমবার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি ১৪২টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে।

ছিয়ানব্বইয়ের জাতীয় নির্বাচন

একই বছর দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই ঘটেছে এবং সেটি ১৯৯৬ সালে। এর মধ্যে প্রথম নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি। খালেদা জিয়ার সরকারের অধীনে আয়োজিত ওই নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল।

ফলে একতরফা ওই ভোটে বিপুল বিজয় পেয়েও ক্ষমতায় টিকতে পারেনি বিএনপি। বিরোধ দলগুলো ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট বর্জন করলেও সেটার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল আরও দুই বছর আগে।

১৯৯৪ সালে মাগুরা জেলার একটি উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলগুলোর মধ্যে সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হয়। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করলে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলে।

এরপর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তারা। বিএনপি অবশ্য শুরু থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে আসছিল। কিন্তু দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগ ক্রমেই আন্দোলন জোরদার করতে থাকে। তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীও আন্দোলনে যোগ দেয়।

এর মধ্যেই পঞ্চম সংসদের মেয়াদ শেষ হয় এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই ওই নির্বাচন করতে হচ্ছে বলে তখন যুক্তি দিয়েছিল বিএনপি সরকার।

২৪ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে সাংবিধানিকভাবে কোন নির্বাচিত সরকার থাকবে না। সেজন্য এই নির্বাচনটিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

এ অবস্থায় দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা করানোর জন্য দেশি-বিদেশি কূটনীতিকেরা নানান চেষ্টা চালালেও সব ব্যর্থ হয়।

নির্বাচন ঠেকানোর জন্য ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দেয় বিরোধী দলগুলো। এর মধ্যেই একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয় ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যেখানে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৯টিই পান বিএনপি।

বাকি ১০টি আসন পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবং একটি আসনে জয় পান তৎকালীন ফ্রিডম পার্টির নেতা সৈয়দ ফারুক রহমান।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে নির্বাচনের আগেই তখন দেশজুড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তারপরও নির্বাচনের দিন বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় অন্তত দশ জন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয় তখনকার সংবাদপত্রে। একতরফা সেই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিও ছিল খুবই নগণ্য।

যদিও নির্বাচনে পর তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি একেএম সাদেক সাংবাদিকদের বলেন, কত শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে সেটি বড় কথা নয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটাই আসল কথা।

নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করলেও বিরোধী দলগুলো তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়নি। অবৈধ সরকার আখ্যা দিয়ে তাদেরকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা শেখ হাসিনা।

সেই সঙ্গে, ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে রাজপথেও তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যায় দলটি। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ টানা ১০৮ ঘণ্টার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়, যাতে সংঘর্ষ-সহিংসতায় সারা দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। তখন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বেশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করেও আন্দোলন দমাতে পারেনি বিএনপি সরকার।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে চাপ বাড়তে থাকায় ১৯৯৬ সালের তেসরা মার্চের ভাষণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল সংসদে তোলার ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

এরপর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলো সঙ্গে সরকারের আলোচনা হতে থাকে। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং মে মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজি হয় সরকার।

তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও সংসদ বাতিল না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপি। ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়, যার মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানে যুক্ত করার জন্য সংসদে বিল উত্থাপন করা হয় ২৪ মার্চ, যা দুই দিনের মাথায় পাস হয়।

তারপরও বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। কারণ তাদের সন্দেহ ছিল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ করলেও বিএনপি সহসা ক্ষমতা নাও ছাড়তে পারে।

আওয়ামী লীগ তখন ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে, যেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশও যোগ দেয়। এর বিপরীতে বিএনপি গঠন করে ‘গণতন্ত্রের মঞ্চ’।

এ অবস্থায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকলে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তার অধীনেই একই বছরের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে ২১ বছর পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরেছিল আওয়ামী লীগ।

৭ জানুয়ারির নির্বাচন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতা গ্রহণ করলেও তাদের অধীনে পরের তিনটি জাতীয় নির্বাচন ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর আওয়ামী লীগের অধীনে ২০১৪ সালের পাঁচই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন নিয়েও অনেক বিতর্ক তৈরি হয়। বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো ওই নির্বাচন বর্জন করে। সেবার ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়।

এরপরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নিলেও সেই নির্বাচন নিয়েও অনেক বিতর্ক রয়েছে। ভোট কারচুপির কারণে ওই নির্বাচনকে ‘রাতের নির্বাচন’ বলে অভিযোগ করে বিরোধী দলগুলো।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি দল সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল।

ফলে অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নিরুত্তাপ নির্বাচনে ২২২টি আসনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

জয়লাভের পর চীন, রাশিয়া ও ভারত শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানালেও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল পশ্চিমা দেশগুলো।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিবৃতি দিয়ে জানায় যে, সাতই জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি।

এমনকি, আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থীদেরকেও ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলতে দেখা যায়।

অন্যদিকে, ওই নির্বাচনকে ‘একপাক্ষিক’ ও ‘পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশও (টিআইবি) বলে যে, ভোট ‘অবাধ হয়নি’। কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান ও প্রকাশ্যে সিল মারার মতো ঘটনাও তুলে ধরে সংস্থাটি। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো দাবি করেছিল যে, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।

এ ঘটনার ছয় মাস পরেই সরকারে পতন ঘটে। তবে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলনে অবশ্য পড়েনি শেখ হাসিনার সরকার। বরং কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্ট মাসে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরকারের ভিত নড়িয়ে দেয়। আন্দোলন দমাতে তখন তারা নজিরবিহীন কঠোর অবস্থানে যায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্বিচার গুলি ও হামলায় শিশুসহ আট শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। এছাড়া দশ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন, যাদের অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেন।

এ অবস্থায় সরকার পতনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যাতে সাড়া দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ক্ষমতা ছেড়ে ওইদিনই ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আর এরই মাধ্যমে তার একটানা দেড় দশকের শাসনামলের অবসান ঘটে।

দ্বাদশ সংসদের আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনও ছিল বিতর্কিত ও একতরফা। তারপরও পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে ছিলো আওয়ামী লীগ, যার অবসান হয় ‘জুলাই অভ্যুত্থানের’ মধ্য দিয়ে। -- সূত্র: বিবিসি বাংলা

আমার বার্তা/জেএইচ

দলগুলো সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব হবে

জাতীয় ঐক্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার প্রক্রিয়া গ্রহণের

পাবলিক অডিট বিলের খসড়া নিয়ে গোপনীয়তায় টিআইবির উদ্বেগ

‘পাবলিক অডিট বিল-২০২৪’ এর খসড়া নিয়ে গোপনীয়তার চর্চায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশে একটি সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প

তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের লক্ষে কাজ করছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু বাংলাদেশের

কদমতলী থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

এনজেআর প্রকাশনী : গ্লোবাল ইনোভেশনের একটি গেটওয়ে হবে

দলগুলো সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব হবে

পাবলিক অডিট বিলের খসড়া নিয়ে গোপনীয়তায় টিআইবির উদ্বেগ

নাফ নদী থেকে ১৯ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

মহেশখালীতে যাত্রা শুরু করলো এক্সিলারেট হোপ হাসপাতাল

ইসলাম ও মানবতার পক্ষের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়তে চাই

মূল্যস্ফীতি নিয়ে ৫-৬ মাসের মধ্যে ভালো কিছুর প্রত্যাশা: গভর্নর মনসুর

বাংলাদেশের মানুষ স্ট্যাবলিশমেন্ট মেনে নেয় না: মঈন খান

রোজার সময় বাজার মনিটরিং করা হবে: অর্থ উপদেষ্টা

২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি

হৃদয়ের বীরোচিত সেঞ্চুরিতে ২২৮ রানের পুঁজি বাংলাদেশের

জাতিকে অস্থিরতায় না রেখে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন

রাজধানীতে শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে ৪৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন লুট

তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের লক্ষে কাজ করছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

দিল্লির মসনদে বিজেপি, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন রেখা গুপ্তা

আজহারের মুক্তির দাবিতে স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা জামায়াত আমিরের

হাসিনা-মইনসহ পলাতকদের জিজ্ঞাসাবাদই বড় চ্যালেঞ্জ: কমিশন