আজ বিশ্ব বাবা দিবস। বাবা একজন বন্ধু, এক বটবৃক্ষ, যার ছায়াতলে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সন্তানরা জিরোতে পারে পরম নিশ্চিন্তে। সন্তানদের কাছে নির্ভরতার অন্যতম প্রতীক হচ্ছেন বাবা। সন্তানের কাছে শ্রদ্ধেয় এক গভীর অনুভূতির শব্দ এটি। নিখাদ ভালোবাসার সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘বাবা’ শব্দটি।
সন্তানের সুখের জন্য বাবারা সব কষ্টকে ঠেলে দায়িত্বের বোঝা কাঁধে তুলে নেন। হাসিমুখে সুখ বিসর্জন দেয়া সেই বাবা নামের বটবৃক্ষকে আলাদাভাবে স্মরণ করার দিন আজ। তবে বাবাদের জন্য ভালোবাসা প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত।
রহিম নামে এক রিকশা চালক বলেন, ‘সারাদিন রিকশা চালানোর সময় রাস্তাঘাটে যত কষ্টই লাগুক বাসায় আসলেও তা আর লাগে না। বাচ্চাদের দেখলেই ভালো লাগে।
বাবা দিবসের ধারণাটি পশ্চিমা বিশ্বের হলেও দিবসটি এখন বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশেও বাবাদের সম্মান জানাতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করেছে বিশেষ অনুষ্ঠান, আলোচনাসভা এবং নানা আয়োজন।
যেভাবে এলো বিশ্ব বাবা দিবস
জানা যায়, বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে সনোরা স্মার্ট ডড নামে এক নারীর। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস বলে কোনও বিশেষ দিন ছিল না। সে সময় স্থানীয় গির্জায় ডড মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে তিনি ভীষণ অবাক হন। তারপর তিনি বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন।
ডড তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। মা ছিল না তার। মায়ের মৃত্যুর পর শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও তাদের সাত ভাইবোনকে বড় করে তুলেছিলেন তাদের সিঙ্গেল বাবা। বাবার এই ত্যাগ দেখে ডডের মনে হলো, মা দিবসের এত আয়োজন হলে বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটা দিন থাকা দরকার।
তারপর অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে বাবা দিবস পালন করতে পারেন ডড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস।
বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর নিঃসন্দেহে একটি। বাবা শাশ্বত, চির আপন। ভাষা ভেদে হয়তো শব্দ বদলায়, স্থান ভেদে বদলায় উচ্চারণও। কিন্তু বদলায় না রক্তের টান। বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। অবশ্য বাবার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে প্রতি বছর ‘বিশ্ব বাবা দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।
সন্তানের একটু সুখের জন্য, শত কষ্ট, শত অভাবের মাঝেও যে কোনো বায়না পূরণে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন বাবা। ভীষণ-দায়িত্ব কর্তব্যের গল্প লুকিয়ে আছে এই শব্দটায়। জহির নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘যতই কষ্ট দিক সন্তানদের প্রতি কোনো বাবা-মা বদদোয়া দেয় না। সার্বক্ষণিক দোয়া করতে থাকে আসবে একদিন আসবে, আমাকে নিতে আসবে।’
যদিও বাবাকে হারানোর কষ্টে অনন্ত শূন্যতার গল্পও আছে অনেক পরিবারে। স্মৃতি নামের এক তরুণী বলেন, ‘আমাদের যাদের বাবা নেই, তারা বুঝি বাবা না থাকার কষ্ট কতটুকু। বাবা একটা বটগাছের মত।’
বাবা নিয়ে যত কথা, যত স্মৃতি, কয়েক কোটি শব্দ দিয়েও তা পূরণ হওয়ার নয়। বাবার প্রতি ভালোবাসা, প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ। বাবা... মানেই হাজার বিকেল ... ছেলেবেলা,
বাবা মানেই রোজ সকালে পুতুল পুতুল খেলা।
আমার বার্তা/এল/এমই