বাড়িভাড়া বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে টানা ৮ দিন ধরে আন্দোলন করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। সবশেষ ৪২ ঘণ্টা ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচি পালন করছে তারা। কর্মসূচিতে এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
রোববার (১৯ অক্টোবর) ভোরে শিক্ষকদের খোঁজ-খবর নিতে শহীদ মিনারে যান এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাসনিম জারা। দাবি না মানা পর্যন্ত শিক্ষকদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী হাসনাত আবদুল্লাহ ও ডা. তাসনিম জারার ছবি নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করে তাদের পরামর্শের বিষয়টি জানান।
এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষকরা আজ শিক্ষা ভবন অভিমুখে ‘ভূখা মিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে খালি থালা ও প্লেট হাতে নিয়ে মিছিল করবেন তারা।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, আমরা এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলছি, জাতির মেরুদণ্ড শক্ত করছি। কিন্তু আজও আমরা নিজেদের জীবনে নিরাপত্তা ও স্বীকৃতির নিশ্চয়তা পাই না। বছরের পর বছর ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নানা প্রতিশ্রুতি শুনেছেন, কিন্তু বাস্তবে কোনো ফল মেলেনি।
অধ্যক্ষ আজিজী বলেন, শিক্ষক হিসেবে আমাদের জীবনে এমন এক অবস্থা এসেছে, যেখানে ‘খালি থালা হাতে’ রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এটা শুধু প্রতীকী প্রতিবাদ নয়, এটা আমাদের অন্তরের কান্না-বঞ্চনা ও অসম্মানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা।
সরকার চাইলে যে কোনো সময় এ সংকটের অবসান ঘটাতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের প্রতি বিনীত আবেদন আমাদের আর অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবেন না। শিক্ষক সমাজ মর্যাদা চায়, করুণা নয়। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চললেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। তাই ক্ষোভ ও প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতেই এ ভূখা মিছিল কর্মসূচি করা হবে।
উল্লেখ্য, বাড়িভাড়া বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে সে প্রজ্ঞাপন সামনে এলে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এমনকি ওই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষকরা।
বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ হারে দেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে গত ১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন তারা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষকরা। পরে বিকেলে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। এরপর থেকে সেখানে অবস্থান নিয়েই বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
একইসঙ্গে সারাদেশের প্রায় ৩০ হাজার এমপিভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা কর্মবিরতি চলছে। গত ১৩ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এতে।
আমার বার্তা/জেএইচ