জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের তহবিলসংকটের কারণে আগামী ৯ মাসের মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৩১৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে ফেরত পাঠানো হবে। আর্থিক সংকটের ফলে ১৫ শতাংশ বাজেট ছাড়ের আওতায় আপতকালীন পরিকল্পনা হিসেবে পাঁচটি মিশন থেকে বাংলাদেশের এসব শান্তিরক্ষীকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ১৪ অক্টোবর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স কার্যালয়ের (ওএমএ) ভারপ্রাপ্ত সামরিক উপদেষ্টা শেরিল পিয়ার্সের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে পাঠানো এক চিঠিতে সামরিক সদস্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চলমান আর্থিক সংকটের কারণে ১৫ শতাংশ বাজেট হ্রাস পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এ পরিকল্পনার আওতায় ইউনিফর্মধারী সদস্যদের জন্য বরাদ্দ অর্থ ১৫ শতাংশ কমানো হবে। যদিও এটি সরাসরি সমান হারে জনবল কমানোর নির্দেশ নয়, তবে বাজেট কমায় বাস্তবে মাঠপর্যায়ে শান্তিরক্ষীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তর এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোকে এ পরিকল্পনা বিলম্ব না করে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের লজিস্টিক বিভাগ, ইউনিফর্মড ক্যাপাবিলিটিজ সাপোর্ট বিভাগ ও মিশন সাপোর্ট বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, জাতিসংঘের পাঁচটি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সদস্যসংখ্যা কমবে। এর মধ্যে দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ মিশন ইউএনমিস থেকে ৬১৭ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হবে। মধ্য আফ্রিকার জাতিসংঘ মিশন মিনুসকা থেকে ৩৪১, সুদানের আবেই অঞ্চলের জাতিসংঘ মিশন ইউনিসেফ থেকে ২৬৮, কঙ্গোর জাতিসংঘ মিশন মনুসকো থেকে ৭৯ ও পশ্চিম সাহারার জাতিসংঘ মিশন মিনুরসো থেকে আট বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রত্যাহার করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ জন পর্যবেক্ষককে জাতিসংঘের ইরাক-ইরান মিলিটারি অবজারভার গ্রুপ মিশনে পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর ‘নীল হেলমেট’ পরার যাত্রা শুরু হয়। পরের বছর ১৯৮৯ সালে এতে বাংলাদেশ পুলিশ যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে অংশগ্রহণ শুরু করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফলভাবে প্রায় ৪৩টি দেশ বা অঞ্চলে ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন করেছে। যেখানে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী অংশ নিয়েছেন।
বর্তমানে পাঁচ হাজার ৬১৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিশ্বের ১০টি দেশ বা অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে পশ্চিম সাহারায় একটি, সুদানের আবেই অঞ্চলে একটি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ছয়টি, কঙ্গোতে নয়টি, লেবাননে একটি ও দক্ষিণ সুদানে চারটি কন্টিনজেন্ট দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া সাইপ্রাস, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা স্টাফ অফিসার হিসেবে নিয়োজিত আছেন। এসব মিশনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা এবং মানবিকতার মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম মিশন ছিল নামিবিয়ায়। ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত পুলিশের ২১ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা বিশ্বজুড়ে ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান ও মধ্য আফ্রিকা।