ই-পেপার সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চায় বাংলাদেশ, এই পথে বড় বাধা ভারত

সিএনএনের প্রতিবেদন
আমার বার্তা অনলাইন
২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৯
আপডেট  : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৯

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা করছে ঢাকা। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সম্প্রতি আদালত তার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছে।

কিন্তু এই রায় কার্যকরের পথে সবচেয়ে বড় বাধা এখন ভারত। গত শনিবার (২২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একসময় শেখ হাসিনা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি একজন বিপ্লবী নেতার কন্যা। ১৯৭০-এর দশকে বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডই তার রাজনৈতিক উত্থানের পথ খুলে দিয়েছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে শীর্ষে ওঠা শেখ হাসিনার সেই উত্থানের পর এসেছে নাটকীয় পতন। আর তা ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুতি এবং শেষ পর্যন্ত পালিয়ে ভারতে আত্মগোপন। এখন তার অনুপস্থিতিতে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে— যদি ভারত তাকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত তার সরকারের পতন ঘটায়। এরপর ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান স্বৈরশাসনের পর গত বছরের আগস্টে তিনি ভারতে পালিয়ে যান এবং একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের রাজধানীতে আশ্রয় নেন।

এখন তিনি দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়নের কেন্দ্রে রয়েছেন। কারণ তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি বারবার করে চলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুবাশ্বর হাসান বলেন, “তিনি জনরোষ এড়াতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ভারতে লুকিয়ে আছেন, আর মৃত্যুদণ্ড পেলেন। ঘটনাটা সত্যিই ব্যতিক্রমী।”

রক্তাক্ত অতীত

হাসিনার রাজনৈতিক যাত্রা শেক্সপিয়রের ট্র্যাজেডির মতোই— মর্মান্তিক ঘটনা, নির্বাসন ও ক্ষমতার লড়াই। আর এর সবই বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গেই জড়িত। শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে হিসেবে স্বাধীনতার সংগ্রাম তিনি কাছ থেকে দেখেছেন।

কিন্তু তার জীবনের পথ বদলে দেয় ১৯৭৫ সালের আগস্টের এক রক্তাক্ত রাত।

সেসময় সামরিক অভ্যুত্থানে সেনা কর্মকর্তারা ঢাকায় তার বাবা, মা ও তিন ভাইকে হত্যা করেন। হাসিনা ও তার বোন তখন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান। সেসময় বিশৃঙ্খল নানা ঘটনাবলীর পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন, যিনি ছিলেন পরবর্তীতে হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া খালেদা জিয়ার স্বামী।

পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পর রাতারাতি নির্বাসিত হন হাসিনা। ছয় বছর ভারতেই কাটান এবং এটিই ভবিষ্যৎ জীবনে ভারতের প্রতি তার আস্থাকে দৃঢ় করে। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তিনি দেখেন ‘জনগণ নতুন আশা নিয়ে তার দিকে’ তাকিয়ে আছে। অন্যদিকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন আরেক ট্র্যাজিক চরিত্র— খালেদা জিয়া।

দেশে ফিরেই হাসিনা বলেন, “বিমানবন্দরে নেমে আপনজন কাউকে পাইনি, কিন্তু পেয়েছি লাখো মানুষের ভালোবাসা— এটা ছিল আমার শক্তি”। এরপর শুরু হয় “দুই বেগমের লড়াই”।

ক্ষমতার লড়াই

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে হাসিনা বহু বছর সংগ্রামের পথ পাড়ি দেন। গৃহবন্দী, দমন-পীড়ন আর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়েই এই পদ পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে তার দল নির্বাচন জিতলে তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। দায়িত্ব পেয়েই তিনি ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করেন।

তবে ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম হাসিনা এক মেয়াদ শেষেই ক্ষমতা হারান। ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে তাকে ভিন্ন রূপে অর্থাৎ আরও দৃঢ়, কম আস্থাশীল, স্থায়ীভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার সংকল্পে দেখা যায় তাকে।

পরবর্তী ১৫ বছর তিনি কঠোর হাতে দেশ শাসন করেন। একদিকে ‘দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’, অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মিডিয়া ও বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন বাড়তে থাকে। ভারতের নিকট প্রতিবেশ হিসেবে তিনি দিল্লিকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা দেন, যা পাকিস্তান ও চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকা অঞ্চলে ভারতের জন্য বড় সুবিধা ছিল।

কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে বাড়তে থাকে দমননীতি। সমালোচকরা সেসময় প্রায়ই অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ একদলীয় শাসনের দিকে এগোচ্ছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, বাড়তে থাকা চাপের মধ্যে হাসিনা কেবল “ভারতের নিঃশর্ত সমর্থনের ওপরই ভরসা রাখতে পারতেন।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন

যদিও বহু আন্দোলন ও হত্যাচেষ্টার মধ্যেও হাসিনার ক্ষমতা টলেনি, কিন্তু গত বছরের শিক্ষার্থী আন্দোলন ছিল অন্যরকম। সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে আন্দোলন দ্রুত দেশজুড়ে বিক্ষোভে রূপ নেয়। সরকারের কঠোর দমন-পীড়নে জাতিসংঘের হিসাব মতে ১৪০০ মানুষ নিহত হয়।

কিন্তু এ সহিংসতা আন্দোলন থামায়নি। বরং আন্দোলনকে আরও উসকে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। মুবাশ্বর হাসান বলেন, “তিনি দেশ ছাড়লেন— এটিই তার অপরাধের স্বীকারোক্তি। তিনি অনেক বেশি সীমা লঙ্ঘন করেছিলেন।”

মৃত্যুদণ্ডের রায়

ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় তার জীবনের আরেকটি চক্র সম্পূর্ণ করে। অর্থাৎ প্রায় অর্ধশতাব্দী পর আবারও দেশটিতে নির্বাসনে যান তিনি। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল: বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে উসকানি দেওয়া, বিক্ষোভকারীদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া এবং ড্রোন, অস্ত্র, হেলিকপ্টার দিয়ে আন্দোলনে দমন-পীড়নের নির্দেশ। আদালত বলেছে, শিক্ষার্থীদের হত্যার আদেশ তিনি দিয়েছেন এবং এটি একেবারে স্পষ্ট।

রায় ঘোষণা হলে আদালতে কান্না ও করতালিতে ভরে ওঠে। নিহত এক আন্দোলনকারীর বাবা আবদুর রব বলেন, “এতে একটু শান্তি পেলাম। পুরো শান্তি পাব যখন তাকে ফাঁসির দড়িতে দেখব।”

ভারত এই রায়কে স্বীকৃতি দিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ বলেন, “ভারত সবসময় ভালো বন্ধু। তারা আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।”

ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত বলেন, “ভারত তাকে ফেরত পাঠাবে কিনা তাতে আমি খুবই সন্দিহান”। ভারতের আইন ও বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ‘রাজনৈতিক অপরাধে’ কাউকে ফেরত না পাঠানো যায়। আর ভারত সম্ভবত সেই যুক্তিই ধরতে পারে।

তিনি বলেন, “ভারত হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগকে রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করবে”। ত্রিগুনায়েত আরও বলেন, হাসিনা এখনো সব আইনি পথ শেষ করেননি, তিনি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারেন, এমনকি হেগেও যেতে পারেন। তাই ভারত তাড়াহুড়ো করবে না।

এদিকে রায়ের পরদিন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনাকে দ্রুত ফিরিয়ে দিতে ভারতের কাছে আবারও চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, “হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া ভারতের দায়িত্ব।”

পরবর্তী রাজনীতির গতিপথ কী

আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে হাসিনার এই মৃত্যুদণ্ড দেশের রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ এখন নিষিদ্ধ, নেতৃত্বেরও ঠিক-ঠিকানা নেই। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গভীর রাজনৈতিক বিভাজন দূর করার কঠিন কাজে নেমেছে।

এর সুযোগ নিতে পারে বিএনপি ও আরও বহু রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ হয়তো আবার ফিরে আসতে চাইবে— তবে তা হাসিনার নেতৃত্বে নয়। এখন প্রশ্ন— হাসিনার পতন কি বিষাক্ত যুগের সমাপ্তি, নাকি নতুন অনিশ্চয়তার শুরু?

আমার বার্তা/জেএইচ

কঠিন দুঃসময় পার করছে আমার পরিবার: আবুল সরকারের মেয়ে

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকার গ্রেপ্তারের পর তার পরিবার বর্তমানে কঠিন দুঃসময় পার করছে

ই-পারিবারিক আদালত দুর্নীতি কমাবে-সময়ও বাঁচাবে: আইন উপদেষ্টা

ই-পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমবে বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

আতঙ্কিত না হয়ে, ভূমিকম্পে যা করণীয় জানালো ফায়ার সার্ভিস

দেশে গত ২১ নভেম্বর সকালে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এরপর আরও কয়েকটি হালকা ভূমিকম্প

ইন্টারপোল সম্মেলনে যোগ দিতে মরক্কো গেলেন আইজিপি

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাহারুল আলম ইন্টারপোলের ৯৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে মরক্কোর উদ্দেশে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নোটস ফিচার যুক্ত হলো হোয়াটসঅ্যাপে

বাইসাইকেল কিকে অবিশ্বাস্য গোল করলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

মানিকগঞ্জে রাতের আধাঁরে শারফিন মোল্লাকে কুপিয়ে হত্যা

জামিন পেয়েছেন ঢাবি শিক্ষক হাফিজুর রহমান

৪০০ বছর ধরে চাপ জমে আছে এক ফল্টে, তীব্র ঝুঁকিতে দুই জেলা

কনকনে শীতে কাঁপতে শুরু করেছে হিমপ্রবণ জেলা পঞ্চগড়

কঠিন দুঃসময় পার করছে আমার পরিবার: আবুল সরকারের মেয়ে

৩০ নভেম্বরের মধ্যে পে কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়া সম্ভব

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চায় বাংলাদেশ, এই পথে বড় বাধা ভারত

ই-পারিবারিক আদালত দুর্নীতি কমাবে-সময়ও বাঁচাবে: আইন উপদেষ্টা

পাকিস্তানে আধাসামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৩

আতঙ্কিত না হয়ে, ভূমিকম্পে যা করণীয় জানালো ফায়ার সার্ভিস

বাকৃবিতে রেলপথ অবরোধ, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ

ইন্টারপোল সম্মেলনে যোগ দিতে মরক্কো গেলেন আইজিপি

জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে নিবন্ধন করেছে ১৮ হাজার প্রবাসী

ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সৌদি আরব-ইরাক-ইরান

ঢাকা ছাড়লেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

মুন্সীগঞ্জে ৩৯ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ

বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে দিল্লি, ঢাকা দ্বিতীয়

বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির উদ্বেগ ও দাবি নিয়ে বিবৃতি