আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের মাধ্যমে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সমূহের সহায়তায় বিশ^ব্যাপি কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় অনুসৃত কাস্টমস সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চাসমূহ অর্ন্ত্ভুক্ত করে ইংরেজী ভাষায় প্রণীত কাস্টমস অ্যাক্ট,১৯৬৯ এর স্থলে বাংলায় আধুনিক ও যুগোপযোগী কাস্টমস আইন,২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।২০২৪-২৫ অর্থবছর হতে নতুন কাস্টমস আইন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ৬ জুন ২০২৪ হতে কাস্টমস আইন ,২০২৩ কার্যকর করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষনা হয়েছে।
>> নূন্যতম মূল্য যৌক্তিকীকরণ: ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণের অংশ হিসেবে বিগত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে-১০টি হেডিং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৫টি হেডিং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ন্যূনতম মূল্য যৌক্তিকীকরণ করা হয়েছে এবং ৩টি হেডিং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সামাজিকভাবে অনভিপ্রেত নয় এবং বিলাসী পণ্য নয়, নির্বাচিত পণ্যের আমদানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ তৈরি করবেনা, পণ্যসমূহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত হয়না,শুল্ক হ্রাস সত্ত্বেও দেশীয় উৎপাদিত পণ্য আমদানিকৃত সমরূপ পণ্যের সাথে প্রতিযোগীতা করতে সক্ষম হবে, সংস্কৃতিগত বা বিভিন্ন কারণে নির্বাচিত পণ্যসমূহের দেশে চাহিদা নেই ইত্যাদি। ১৯টি পণ্যের সাপ্লিমেনটরি ডিউটি প্রত্যাহার এবং ১৭২টি পণ্যের সাপ্লিমেন্টরি ডিউটি হ্রাস করা হয়েছে এবং ৯১টি পণ্যের রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহার হয়েছে।
(ক) কৃষিখাত : কৃষি আমাদের অগ্রাধীকারপ্রাপ্ত খাত। কৃষিখাতের প্রধান উপকরণসমূহ,বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রধান খাদ্যদ্রব্যের আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখা এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ক করভার স্থিতবস্থায় রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কাজু বাদাম উৎপাদিত হচ্ছে এবং উৎপাদিত কাজু বাদামকে প্রক্রিয়াজাতকরণের নিমিত্ত কারখানা গড়ে উঠেছে। তাই দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণের জন্য খোসা ছাড়ানো কাজু বাদাম এর আমদানিতে ৫% আমদানি শুল্ক এবং ১০% রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। এসেপটিক প্যাক নামীয় পণ্যটি তরল দুধ ও ফলের জুস বিপননে প্যাকিং সামগ্রি হিসেবে ব্যবহৃত হয় । উক্ত পণ্যটি রোল বা আয়তাকার সিট আকারে এবং ফোল্ডিং কার্টুন, বক্স বা কেস আকারে আমদানির ক্ষেত্রে মোট করভারে পার্থক্য আছে যা যৌক্তিক নয়। তাই একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় বিধায় উভয় আকারে আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কহারের সমতা আনয়নের লক্ষ্যে উভয় ক্ষেত্রে অনুরুপ আমদানি শুল্ক অর্থাৎ ১০% নির্ধারণ করে মোট করভার ৩৭% করা হয়েছে।
(খ) স্বাস্থ্যখাত : স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করে বিগত বছরগুলোর মত এবারও কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঔষধ,চিকিৎসা সামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিসে ব্যবহৃত হয় এমন দুটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ হচ্ছে ডায়ালাইসিস ফিল্টার এবং ডায়ালাইসিস সার্কিট।উক্ত পণ্য দুটির আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ১০%হতে হ্রাস করে ১% নির্ধারণ করা হয়েছে। স্পাইনাল নিডল পণ্যটির সুনির্দিষ্ট কোনো এইচ এস কোড না থাকায় আমদানি পর্যায়ে শুল্কায়নে নতুন কোড সৃজন করে ৫% আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।
(গ) শিল্পখাত -পুনঃমোড়কজাতকরণ শিল্প: গুঁড়াদুধ আমদানির ক্ষেত্রে আড়াই কেজি পর্যন্ত প্যাকে এবং বাল্ক আকারে আমদানির ক্ষেত্রে মোট করভারের পার্থক্য অনেক বেশি থাকায় স্থানীয়ভাবে প্যাকেটকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ভোক্তার নিকট থেকে অযৌক্তিক পরিমান মুনাফা অর্জন করছে। গুঁড়া দুধের মূল্য যৌক্তিকীকরণের অংশ হিসেবে আড়াই কেজি পর্যন্ত প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের উপর বিদ্যমান ২০% সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও আমদানির সাথে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মোট করভারের পার্থক্য বা প্রতিরক্ষণ থাকবে ২১% যা দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণে কোন অন্তরায় ঘটাবেনা।
মিথাইল এলকোহল বিভিন্ন শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল। শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার্য মিথানল সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর। বর্তমানে খুচরা ও বাল্ক আকারে আমদানির উপর একই হারে আমদানি শুল্ক বিদ্যমান থাকায় বাল্ক আকারে পণ্য আমদানি করে স্থানীয়ভাবে রি-প্যাকিং এর ক্ষেত্রে কোন প্রণোদনা বলবৎ নেই। তাই দেশীয় পুনঃপ্যাকেজিং শিল্পকে উৎসাহিত করতে বাল্ক আকারে মিথানল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ৫% এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ১০% নির্ধারণ করা হয়েছে।
কার্পেট উৎপাদনকারী শিল্প : দেশে বর্তমানে কার্পেট তৈরির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কার্পেট উৎপাদনের একটি অন্যতম মূল কাঁচামাল হচ্ছে পলিপ্রপাইলিন আর্ন। পণ্যটি দেশে উৎপাদিত হয়না বিধায় দেশের কার্পেট উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ আলোচ্য পণ্যটির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে আমদানি নির্ভর । এমতাবস্থায় দেশে নতুন গড়ে উঠা এই শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে পণ্যটির আমদানি শুল্ক ১০% হতে হ্রাস করে ৫% করা হয়েছে।
ফেরো এলয় উৎপাদনকারী শিল্প: দেশে বর্তমানে ফেরো এলয় জাতীয় পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। রড,বার,এ্যাংগেল ইত্যাদি পণ্য উৎপাদনকালে তা পরিশোধন করার কাজে এই পণ্য ব্যবহার হয়। ফেরো এলয় নামীয় পণ্য উৎপাদনে একটি অপরিহার্য কাঁচামাল হচ্ছে ম্যাংগানিজ। উক্ত পণ্য আমদানিতে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক ১০%। দেশীয় শিল্পকে সহায়তা প্রদানের নিমিত্ত অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ম্যাংগানিজ আমদানিতে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক ১০% হতে হ্রাস করে ৫% নির্ধারণ করা হয়েছে।
এলআরপিসি ওয়্যার উৎপাদনকারী শিল্প: বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরনের উৎকৃষ্ট মানের এবং নন-এ্যালয় স্টিলের তার উৎপাদিত হচ্ছে যা ব্যবহৃত হলে বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ কমবে।ফলে,এ জাতীয় পণ্যের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে যা দেশীয় শিল্পকে অধিকতর বিকাশে সহযোগিতা করবে। বর্ণিত অবস্থায় এলআরপিসি ওয়ার এর আমদানি শুল্ক ১০% হতে বৃদ্ধি করে ১৫% নির্ধারণ করা হয়েছে।
এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনকারী শিল্প: দেশে রেফ্রিজারেটর উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কম্প্রেসার উৎপাদন হয় বিধায় বেকওয়ার্ড লিংকেজ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে রেফ্রিজারেটর শিল্পে ব্যবহৃত কম্প্রেসর আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি হার প্রত্যাহার হয়েছে।
রাজস্ব প্রদানে সক্ষমতা বিবেচনায় স্বার্থে এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত বিভিন্ন প্রকার স্টিল সিট এর আমদানি শুল্ক ৫% হতে বৃদ্ধি করে ১০% নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া একই প্রজ্ঞাপনে যে সকল পণ্যে আমদানি শুল্ক ১০% নির্ধারিত রয়েছে উক্ত পণ্যসমূহের আমদানি শুল্ক ১০% হতে বৃদ্ধি করে ১৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া যথাযথ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারে ব্যবহৃত কম্প্রেসর আমদানিতে ন্যূনতম মূল্য ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ০২ লক্ষ বিটিইউ এর অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ারকন্ডিশনার আমদানিতে ১% আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য। উক্ত সীমা বৃদ্ধি করে ০৩(তিন)লক্ষ বিটিইউ নির্ধাারণ করা হয়েছে অর্থাৎ০৩(তিন) লক্ষ বিটিইউ এরঅধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ারকন্ডিশনার আমদানিতে ১% আমদানি শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
পানি পরিশোধন যন্ত্র উৎপাদনকারী শিল্প: দেশে বর্তমানে গৃহস্থালীতে ব্যবহারযোগ্য পানি পরিশোধন যন্ত্র উৎপাদিত হচ্ছে।এমতাবস্থায় দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য বর্ণিত যন্ত্রের আমদানি শুল্ক ১০% হতে বৃদ্ধি করে ১৫% করা হয়েছে।
সুইচ সকেট উৎপাদনকারী শিল্প: বর্তমানে দেশে মানসম্মত সুইচ সকেট উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু সম্পূর্ণ তৈরি সুইচ সকেট এর ন্যূনতম আমদানি মূল্য প্রকৃত আন্তর্জাতিক মূল্যের চেয়ে কম নির্ধারিত থাকায় স্থানীয় শিল্প অসম প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হচ্ছে।তাই সম্পূর্ণ সুইচ,সম্পূর্ণ সকেট এবং এগুলির পার্টসের ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ইলেকট্রিক মোটর উৎপাদনকারী শিল্প: বর্তমানে দেশে ইলেকট্রিক মোটর তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। ইলেকট্রিক মোটর বিভিন্ন শিল্পে মধ্যবর্তী পণ্য হিসেবে ভ্যবহৃত হয়। তাই উক্ত খাতের শিল্পকে প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করে একটি নতুন প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে। এছাড়া উক্ত জারীতব্য প্রজ্ঞাপনটিকে যথাযথভাবে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন এবং বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ এ প্রাসংগিক সংশোধন করা হয়েছে।
স্থানীয় সেলুলার ফোন উৎপাদনকারী শিল্প: বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন বা সেলুলার ফোন উৎপাদন/সংযোজনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশসমূহ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার ফলে নিয়ত পরিবর্তনশীল। ফলে দেশে উৎপাদিত ফোনে নতুন ফিচার সংযোজনের স¦ার্থে প্রতিষ্ঠানসমূহের নতুন নতুন উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানির প্রয়োজন হয়।এ প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে নতুন উদ্ভাবিত কতিপয় পণ্যকে বিদ্যমান প্রজ্ঞাপনে সংযোজন এবং বিদ্যমান কিছু পণ্যের বর্ণনা সংশোধন করা হয়েছে। মোবাইল ফোন উৎপাদনে দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রদত্ত সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য উক্ত প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতার মেয়াদ ৩০ জুন,২০২৬ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মোটর সাইকেল উৎপাদনকারী শিল্প: বর্তমানে দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী কিছু প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিন সংযোজন করছে। এ ধরনের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ প্রদানের উদ্দেশ্যে মোটর সাইকেল এর পার্টসসমূহকে মোটর সাইকেল প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানরে উপকরণ আমদানি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লিখিত পণ্যসমূহের আমদানির বিপরীতে আরোপণীয় ৩(তিন) শতাংশের অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক এবং সমুদয় রেগুলেটরি ডিউটি ও সম্পূরক শুল্ক হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। তবে,২৫০ সিসির ঊর্ধ্বসীমার ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন মোটর সাইকেলের জন্য উক্ত যন্ত্রাংশগুলি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০(দশ) শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।একই সাথে বাংলাদেশ কাষ্টমস ট্যারিফ এ মোটর সাইকেলের ইঞ্জন এর যন্ত্রাংশের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৫% হতে বৃদ্ধি করে ১৫% ধার্য করা হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে এটিএম এবং সিসি ক্যামেরা উৎপাদনকারী শিল্প: এটিএম এবং সিসি ক্যামেরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ঠ বিদ্যমান প্রজ্ঞাপনটি জুন ২০২৬ পর্যন্ত বলবৎ রাখার লক্ষ্যে তা সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্তি হয়েছে।
টেক্সটাইল শিল্প: টেক্সটাইল শিল্পের যন্ত্রপাতি,উপকরণ কাঁচামাল আমদানি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বিটিএমএ এর সুপারিশ অনুযায়ী কতিপয় পণ্যকে উক্ত প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জেনারেটর সংযোজন এবং উৎপাদনকারী শিল্প: জেনারেটর সংযোজন এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উপকরণ আমদানি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত উপকরণের ওপর প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক যৌক্তিকীকরণ করে ০% এর পরিবর্তে ১% নির্ধারণ করা হয়েছে।
এলইডি ল্যাম্প এবং এনার্জি সেভিং ল্যাম্প উৎপাদনকারী শিল্প: এলইডি ল্যাম্প এবং এনার্জি সেভিং ল্যাম্প উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উপকরণ আমদানি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত উপকরণের ওপর প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক যৌক্তিকীকরণ করে ০% এর পরিবর্তে ১% নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সাথে উক্ত প্রজ্ঞাপনের টেবিল-১ এ উল্লিখিত কতিপয় মধ্যবর্তী বা সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুকৃত পণ্য উপকরণ সংশ্লিষ্ট এই প্রজ্ঞাপন হতে বাদ দেয়া এবং প্রজ্ঞাপনটি জুন ২০২৬ পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়েছে।
অন্যান্য শিল্প: আমদানিকৃত সাধারণ কিলোওয়াট মিটার এবং প্রি-পেইড কিলোওয়াট আওয়ার মিটার –এর মাঝে মোট করভারে পার্থক্য বিদ্যমান যা সমান হওয়া যৌক্তিক ।সে বিবেচনায় প্রি-পেইড কিলোওয়াট আওয়ার মিটার ও অন্যান্য ইলেকট্রিক মিটার এর আমদানি শুল্ক ২৫% এবং প্রি-পেইড কিলোওয়াট মিটার পার্টস ও অন্যান্য ইলেকট্রিক মিটার এর পার্টস এর আমদানি শুল্ক ১৫% ধার্য করা হয়েছে।
পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য সংক্রান্ত: বর্তমানে দেশে গাড়ি এবং আধুনিক প্রযুক্তির মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রচুর পরিমানে সিনথেটিক এবং মিনারেল লুব্রিকেটিং ওয়েলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।এরুপ অয়েলের আর্ন্তজাতিক বাজার মূল্য অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও শুল্কায়ন পর্যায়ে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারিত না থাকায় মূল্য নির্ধারণে জটিলতা দেখা যায় ।এমতাবস্থায়,আর্ন্তজাতিক বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিনথেটিক লুব্রিকেটিং অয়েল,মিনারেল লুব্রিকেটিং অয়েল এবং এগুলি তৈরির কাঁচামাল বেইস অয়েলের ন্যূনতম মূল্য নির্ধাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সাথে সংগতি রেখে ফার্নেস অয়েলের ন্যূনতম আমদানি মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ৪৮০.০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাইটেক পার্কে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রেয়াতি /অব্যাহতি সুবিধায় আমদানি সংক্রান্ত এসআরও এর সংশোধন: হাইটেক পার্কে অব¯িথত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মূলধনী যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ সামগ্রী আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত এসআরওতে দুই ধরণের পণ্য সামগ্রীর আমদানিতে ০% আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে যা ১% নির্ধারণ করা হয়েছে। হাইটেক পার্কের ডেভেলপার কর্তৃক উন্নয়ন কার্যে ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে ০% আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে যা ৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। হাই টেক পার্কে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যানবাহন আমদানিতে সকল ধরনের শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আমদানি শুল্ক অব্যাহতি প্রদান করে আমদানি পর্যায়ের অন্যান্য সকল শুল্ক করাদি আরোপ করা হয়েছে।
শিল্পের কাঁচামাল/উপকরণ আমদানি সংক্রান্ত কতিপয় এসআরও এর মেয়াদ নির্ধারণ: কাস্টমস এর প্রজ্ঞাপনে এস.আর.ও এর কার্যকারিতার মেয়াদ নির্দিষ্টকরণের অংশ হিসাবে বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন গুলো বাতিল করে কার্যকারিতার মেয়াদ উল্লেখ করে সেগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বিদ্যমান যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালা সংশোধনপূর্বক নতুন বিধিমালা জারি: মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ হতে কাস্টমস শুল্ক ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে স্বর্ণালংকারের মধ্যে অলংকার সাদৃশ্য গোল্ডঃ(২৪ ক্যারেটের স্বর্ণ) আনার প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ(আমদানি) বিধিমালা, ২০২৩ এর বিধি ২ এ স্বর্ণালংকার এর সংজ্ঞা সংযোজন করা হয়েছে। বিধি ৩ এর উপবিধি (৪) এ উল্লিখিত বিধানে যাত্রীর সাথে আনীত হয়নি এরুপ ব্যাগেজ সকল প্রকার শুল্ক কর পরিশোধ ব্যতিরেকে খালাসের পরিবর্তে বানিজ্য সমতার সার্থে শুল্ক কর পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস করার বিধান প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বিধি ৩ এর উপবিধি (৫) এ উল্লিখিত বিধানে দুইটি মোবাইল ফোন সকল প্রকার শুল্ক কর পরিশোধ ব্যতিরেকে খালাসের বিধান এবং শুল্ক কর পরিশোধ সাপেক্ষে ০১(এক) টি নতুন মোবাইল ফোন আমদানি করার বিধান প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
কাস্টমস আইন,২০২৩ এর সংশোধন: ৬ জুন ২০২৪ হতে কাস্টমস আইন,২০২৩ কার্যকর করার উদ্দেশ্যে নতুন বাংলা আইনে নতুন কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করায় তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি বিধিমালা জারি করা প্রয়োজন।
কাস্টমস আইনের কতিপয় ধারা সংশোধন ও কতিপয় নতুন বিধান সংযোজন:
ক) কাস্টমস কর্মকর্তা নিয়োগ বা ক্ষমতা অর্পণের ক্ষেত্রে আইনী জটিলতা পরিহারের লক্ষ্যে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারির বিধান বিলুপ্ত করা সংক্রান্ত ধারা ৪ এবং ৬ এর সংশোধন,
খ) বকেয়ার হিসাব সহজ করার লক্ষ্যে সুদ আদায় সংক্রান্ত ধারা ৩২ এর উপ-ধারা (৪) এর সংশোধন,
গ) গ্যারান্টির ধরণ এবং গ্যারান্টি প্রদানের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট ধারা ৪১ এর উপ-ধারা (২) এবং ধারা ৪৪ এর উপ-ধারা (২) এর সংশোধন,
ঘ) পণ্য ঘোষণার সংশোধন এর ক্ষেত্রে বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে কাস্টমস আইন,২০২৩ এর ধারা ৮৬ তে প্রয়োজনীয় সংশোধন,
ঙ) অখালাসকৃত পণ্য নিলাম সংশ্লিষ্ট ধারা সহজীকরণের উদ্দেশ্যে ধারা ৯৪ এর উপ-ধারা (২) এর সংশোধন,
চ) বিধিতে দন্ড আরোপের বিধান রেখে ধারা ১৭১ এর সংশোধন,
ছ) চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের ন্যায়নির্ণয়ন ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা ২০২ স্পষ্টীকরণ,
জ) আপিল দায়ের সংক্রান্ত বিধান সংশোধন,
ঝ) দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার সংক্রান্ত বিধান সংযোজন,
ঞ) আদালতের নির্দেশনার ক্ষেত্রে দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপনের বিধান রেখে ধারা ২৬১ এর সংশোধন,
ট) বিশেষায়িত কার্যকর ইউনিট গঠনের বিধান রেখে ধারা ২৬৪ এর পর নতুন ধারা ২৬৪ ক সংযোজন,
ঠ) এ আইনের অধীন যে কোনো কার্যক্রম ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সম্পাদন করার আইনী বিধান সংযোজনের লক্ষ্যে ধারা ২৬৫ এর উপ-ধারা (১) এর সংশোধন।
২) কাস্টমস আইন,২০২৩ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আবশ্যক কতিপয় বিধিমালা প্রণয়ন
কাস্টমস আইন ২০২৩,এর বিধানসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিধি বর্তমানে কার্যকর আছে। এ বিষয়ে নতুন যে সকল বিধিমালা আবশ্যক তা হচ্ছে:
ক) ইলেকট্রনিক রেকর্ড এবং ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট বিধিমালা,২০২৪:
খ) কাস্টমস গ্যারান্টি বিধিমালা, ২০২৪:
গ) পণ্য ঘোষণা,শুল্কায়ন ও পুনঃশুল্কায়ন বিধিমালা,২০২৪:
ঘ) এক্সপ্রেস পদ্ধতির আওতাভুক্ত পণ্যচালান দ্রুত খালাসকরণ বিধিমালা ২০২৪:
ঙ) আন্তর্জাজাতিক দরপত্রের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে পণ্য তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ক কর অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন:
চ) বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিদ্যমান বিধি-বিধান হালনাগাদপূর্বক নতুন বিধিমালা জারী সংক্রান্ত প্রস্তাব:
কাস্টমস আইনের প্রথম তফসিলে সংশোধন: আন্তর্জাতিক বানিজ্য সহজীকরণের উদ্দেশ্যে পণ্যের নামকরণ এবং শ্রেণিবিন্যাসজনিত জটিলতা দূর করার লক্ষ্যে কাস্টমস আইন,২০২৩ এর প্রথম তফসিলে বিদ্যমান এইচ এস কোড ও বর্ণনা এবং আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক,মূল্য সংযোজন কর ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট এসআরও, আদেশ পরিপত্রে অসংগতি ও বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়েছে-তা যথাযথভাবে পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সংশোধন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পৃথক এইচ এস কোড সৃজন ও যৌক্তিকীকরণে করা হয়েছে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও কবি।
আমার বার্তা/কমল চৌধুরী/এমই