ই-পেপার বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩২

ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন

বিল্লাল বিন কাশেম:
২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৩

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত, যা একটি গভীরভাবে প্রথিত এবং অত্যন্ত জটিল ভূ-রাজনৈতিক বিতর্ক, শতাধিক বছর ধরে চলমান, যেখানে ভূখণ্ড নিয়ে বিরোধ, ধর্মীয় শত্রুতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পরিচয়ের সংঘর্ষ রয়েছে। এই সংঘাতের মূল বিষয় হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনির্ধারণ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম, যা প্রায়শই সহিংস প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষত ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। ইসরায়েলি সামরিক অভিযান, মৃত্যুর বোমা হামলা এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের ফলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল এবং ক্লিনিক ধ্বংস, নারী, গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সাধারণ নাগরিকদের প্রতি আচরণ এবং বৈষম্যমূলক নীতির প্রভাব। ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যে সহিংসতা আরোপিত হচ্ছে এবং এর ফলস্বরূপ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর যে প্রভাব পড়ছে, তা একটি বৃহত্তর উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত।

সংঘাতের ঐতিহাসিক পটভূমি

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ২০শ শতকের প্রথম দিকে শুরু হয়, যখন অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে এবং ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনের ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনকে নিজেদের অধীনে নিয়ে আসার পর, তারা এখানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা শুরু করে। তখনকার সময়ে, পৃথিবীতে গৃহহীন থাকা ইহুদিদের জন্য জমি ছিল না, যা তাদের নিজস্ব শাসিত এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হত। যেহেতু তখন বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সায়নিস্ট আন্দোলন এবং হলোকাস্টের ভয়াবহতা ইহুদিদের ফিলিস্তিনে আগমনকে ত্বরান্বিত করেছিল, তাই স্থানীয় ফিলিস্তিনি আরব জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। এই অব্যাহত গণহত্যা এখনও থেমে যায়নি। 1947 সালের জাতিসংঘের বিভাজন পরিকল্পনা, যা ভূমি দুটি আলাদা ইহুদি এবং আরব রাষ্ট্রে ভাগ করার প্রস্তাব দেয়, সে সময় আরব রাষ্ট্রগুলির পক্ষ থেকে এই পক্ষপাতিত্বপূর্ণ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করা হয়, যার ফলস্বরূপ ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয় এবং পরবর্তীতে পশ্চিমা খ্রিস্টান শক্তির সরাসরি হস্তক্ষেপে ইসরায়েলের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।

যুদ্ধের পর, লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে আশেপাশের আরব দেশগুলোতে শরণার্থী হয়ে বসবাস করতে শুরু করে, অথবা নবগঠিত ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে চলে আসে। এই ঘটনা, যা 'নাকবা' (যার মানে 'দুর্ভোগ') নামে পরিচিত, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের সূচনা ছিল। 1967 সালের ছয় দিনের যুদ্ধে, ইসরায়েল পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা উপত্যকা দখল করে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এখনো 'দখলকৃত' ভূমি হিসেবে গণ্য করা হয়।

ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন

ইসরায়েলি সামরিক অভিযান, যেগুলো সাধারণত সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ এবং বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির জন্য পরিচিত, তার মধ্যে সবচেয়ে দৃশ্যমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে। গাজা উপত্যকা, যা ২০০৭ সাল থেকে হামাসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, বিশেষভাবে ইসরায়েলি আক্রমণ এবং অভিযানের শিকার হয়। গাজা উপত্যকায়, যা যুদ্ধবিরোধী বা প্রতিবাদমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই অভিযানগুলো চালানো হয়, সেগুলোতে ব্যাপক ধ্বংস এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে।

অনুপযুক্ত শক্তির ব্যবহার এবং বেসামরিক প্রাণহানি

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের প্রতি ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে, বিশেষ করে গাজার মত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য। যেমন অপারেশন কাস্ট লিড (২০০৮-২০০৯), অপারেশন প্রোটেকটিভ এজ (২০১৪) এবং অপারেশন গার্ডিয়ান অফ দ্য ওয়ালস (২০২১)-এ ইসরায়েলের আকাশযান, স্থল অভিযান ও নৌবাহিনীর বোমাবর্ষণ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, যাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ ছিলেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, কাস্ট লিড অপারেশন চলাকালে ১৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং প্রোটেকটিভ এজ চলাকালে ২১০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান, তবে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।

গাজা অবরোধ এবং সম্মিলিত শাস্তি

২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি অবরোধ আরোপ করা হয়েছে, যা খাদ্য, চিকিৎসা এবং অন্যান্য অপরিহার্য দ্রব্যের আমদানি-রপ্তানি সীমিত করে দিয়েছে। এই অবরোধকে ইসরায়েল নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরলেও, মানবাধিকার সংগঠনগুলো এটিকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করেছে।

ভূমি দখল এবং বাস্তুচ্যুতি

ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ছাড়া আরও একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন হল পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে অবৈধ বসতি স্থাপন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ইসরায়েলের ভূখণ্ডের মধ্যে এসব বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ, কিন্তু ইসরায়েল এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ফিলিস্তিনিদের জমি দখল, বাড়ি ধ্বংস এবং তাদের বাস্তুচ্যুতি ঘটছে।

নির্যাতন এবং আটক

আরেকটি মানবাধিকার লঙ্ঘন হল ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের আটক এবং নির্যাতন। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি, তার মধ্যে শিশুদেরও, আটক করা হয়েছে, অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছাড়াই। তাদের মধ্যে অনেকেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা

ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান, তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বৃহৎ শক্তি বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে, ফলে ইসরায়েল নিজেকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে সহযোগিতা করছে না।

ন্যায়বিচার এবং শান্তি

ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন একটি জটিল ও চিন্তাযুক্ত বিষয়, যা চলমান ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে নিহিত। শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার সুরক্ষিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক : কবি, গল্পকার ও কলামিস্ট।

আমার বার্তা/বিল্লাল বিন কাশেম/এমই

৫ আগস্ট ২০২৪ এর বিপ্লবোত্তর যে সংস্কার প্রয়োজন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নানা পরিবর্তন ও উত্থান-পতন চলতেই থাকে। তবে, আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায়

বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত দ্বন্দ্ব ও সেভেন সিস্টার

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ

অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সুবাতাস ফিরুক

একটি উড়ন্ত পাখির দুইটি ডানার মতো  যেকোন দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর ভর করে দেশটি

গুজব ও বাংলাদেশ : মরণব্যাধি ক্যান্সারের চেয়ে মারাত্মক

‘গুজব’ বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত একটি শব্দ। মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ আকারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদার করছে বাংলাদেশ: আসিফ নজরুল

অ্যাথলেটিক্সে বিকেএসপি চ্যাম্পিয়ন 

ইসলামকে ব্যবহার করে এক শ্রেণির মানুষ টাকা লুট করেছে: ধর্ম উপদেষ্টা

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

আগামী বাজেটে ভ্যাট কমানোর ইঙ্গিত এনবিআর চেয়ারম্যানের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে প্রাণ গেল শিক্ষার্থীর

সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশ গঠনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব

উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হয় না অথচ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে

সর্বোচ্চ পর্যায়ের উৎসাহে ব্যাংক খাতে দুর্নীতি হয়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

দুই মাসের আয় দিয়ে ৯ মাস দ্বীপের মানুষ কীভাবে চলবে?

দ্রুত দেশে ফিরতে উদগ্রীব বেগম খালেদা জিয়া: ডা. জাহিদ

সাতক্ষীরায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি

যেভাবে সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি মুনাফা পাবেন সরকারি কর্মচারীরা

চিড়িয়াখানার উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে

চিটাগাংয়ের উপস্থাপক ইয়াশাকে নিয়ে অপপ্রচার

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

শিবিরের প্রকাশনায় স্বাধীনতাবিরোধী বক্তব্য প্রকাশে ছাত্রদলের প্রতিবাদ

রংপুরকে হারিয়ে প্লে অফে এক পা চিটাগাংয়ের

ডিপসিকের উত্থানে হুমকির মুখে মার্কিনিদের একচেটিয়া এআই ব্যবসা

শিল্পে উৎপাদন খাতের অবদান কমে দাঁড়ালো ৮.৭৭ শতাংশে