ই-পেপার সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

মা: ভালোবাসার নিরবধি প্রতিমা

বিল্লাল বিন কাশেম
১১ মে ২০২৫, ১১:৫৭

মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার। আবার এসেছে বিশ্ব মা দিবস—একটি দিন যা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে চিরন্তন ভালোবাসার আলোড়ন। মা—একটি শব্দ, এক অক্ষর, অথচ এর ওজন পাহাড়সম। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিবসের আয়োজন হয় অনেক দেশে, অনেক রকমে। কিন্তু আমার কাছে ২০২৫ সালের মা দিবস এক গভীর শূন্যতার প্রতিচ্ছবি হয়ে এসেছে—কারণ আমার মা, মিসেস গুলশান আরা বেগম (লিলি), আর আমাদের মাঝে নেই।

২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর, মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর অবর্তমানে বুঝতে শিখেছি, সংসারের ছায়াগুলো আসলে তাঁর চারপাশেই ছিল। আমরা পাঁচ ভাইবোন—সব আবেগ, অনুভব আর জীবনের টানাপোড়েনের সঙ্গে মা ছিলেন অলিখিত সঙ্গী। মা ছিলেন না শুধু আমাদের অভিভাবক, তিনি ছিলেন জীবনের প্রেরণা, রক্ষাকবচ। আজ বুঝি, মা হারানো মানেই আত্মার একটি অংশ হারিয়ে ফেলা।

এই বছরের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে আমার পাঁচটি গ্রন্থ—প্রথমবার, মায়ের অনুপস্থিতিতে। মা সব সময় আমার লেখা পড়তেন, কখনো হাসতেন, কখনো চোখের জল ফেলতেন। তাঁর সেই হাসিমাখা মুখ আর স্নেহময় দৃষ্টিকে আজ শুধুই স্মৃতির ফ্রেমে খুঁজে ফিরি।

আমার ছোট ভাই ইলিয়াস এখনো মায়ের রুমে ঢুকে একাকী নামাজ পড়ে, মোনাজাত করে। সে যেন মায়ের উপস্থিতিকে অনুভব করতে চায়, প্রতিদিনের অলিখিত আলাপে। মানুষের দৃষ্টিতে হয়তো এসব আচরণ অদ্ভুত, কিন্তু একটুও নয়—এ হচ্ছে ভালোবাসার সবচেয়ে নিখাদ রূপ।

মা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন—ডায়াবেটিস, কিডনির জটিলতা—তবুও ছিলেন লড়াকু, বাঁচার আগ্রহে পরিপূর্ণ। তাঁর শেষ সময়েও আমি পাশে থেকেছি, কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল থাকায় সেবা করার মতো সক্ষমতা ছিল না। এই ব্যর্থতা এখনো তাড়া করে ফেরে। প্রতিটি ভোরে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে সেই অপূর্ণতার যন্ত্রণা সঙ্গী হয়।

কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। চলতে হয় স্মৃতির ভরসায়, চোখের কোণে মায়ের চেহারা এঁকে।

‘মা’—একটি শব্দ নয়, এটি একটি অনুভব। এটি শাশ্বত, চিরন্তন। কাজী নজরুল ইসলাম যেমন বলেছিলেন, "হেরিলে মায়ের মুখ, দূরে যায় সব দুখ"—ঠিক তেমনই, মায়ের কোলে মাথা রাখলে জীবনের সব ক্লান্তি বিলীন হয়ে যায়।

একজন মা শুধু সন্তান জন্ম দেন না—তিনি জন্ম দেন একটি সত্তার, একটি মানসিকতার, একটি ভবিষ্যতের। তাঁর ভালোবাসা, শ্রম, আত্মত্যাগ—সব মিলিয়ে মা হয়ে ওঠেন জীবনের ভিত্তি।

বিশ্ব মা দিবসের তাৎপর্য এখানেই যে, আমরা এই একটি দিনে হলেও মায়ের অবদান গভীরভাবে স্মরণ করি। তবে সত্যিকার শ্রদ্ধা তখনই হয়, যখন প্রতিটি দিনকে মা দিবসে পরিণত করা যায়।

আমার মা হয়তো একাডেমিকভাবে শিক্ষিত ছিলেন না, কিন্তু জীবনের পাঠে ছিলেন প্রজ্ঞার এক অনন্য প্রতীক। তাঁর হাতে গড়া জীবন ছিল আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সংসার নিয়ে ভাবতেন না খুব বেশি। মা-ই একাই সংসার টেনেছেন, আমাদের বড় করেছেন।

একবার বইয়ের জন্য কান্না করছিলাম। মা তাঁর শাড়ি বন্ধক রেখে আমাকে বই কিনে দিয়েছিলেন। এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পৃথিবীতে আর কোথায় মেলে?

মাকড়সার কথা মনে পড়ে—যে নিজের শরীর বিলিয়ে দেয় সন্তানদের খাবার হিসেবে। কিন্তু মানবমা তো আরও বড় বিস্ময়! তাঁদের আত্মত্যাগ, তাঁদের নিঃশর্ত ভালোবাসা—এসবই আমাদের জীবনের মূলভিত্তি।

মা কেবল সন্তানকে লালন করেন না, গড়েন একটি জাতিকে। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব।”

আমার মাও আমাদের জীবনের নির্মাতা। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হলাম, মা-ই বলেছিলেন—“তুই পারবি, আমি জানি।” সেই বিশ্বাসই একদিন সত্য হলো। আজও জীবনের কঠিন মুহূর্তে মায়ের সেই আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠ আমার হৃদয়ে বাজে—“ভয় পাস না, সামনে যা।”

আজ মাকে হারানোর পর প্রথম মা দিবসে দাঁড়িয়ে আমি তাঁর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও চিরন্তন কৃতজ্ঞতা। তাঁর ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও সাহচর্যের ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না।

আমি জানি, পৃথিবীর প্রতিটি মা-ই তাঁর সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন। আমাদের দায়িত্ব, আমরা যেন তাঁদের জীবিত অবস্থায় সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিই—ভালোবাসা দিয়ে, সেবা দিয়ে, শ্রদ্ধা দিয়ে।

মায়ের ছায়ায় বেঁচে থাকা যায়, মায়ের অনুপস্থিতিতে জেগে ওঠে ভেতরের খাঁজ। তাই আমরা যেন কখনোই মাকে ‘বলার আগেই হারিয়ে না ফেলি’। তাঁর সঙ্গে কথা বলুন, তাঁর পাশে থাকুন, কারণ মা আছেন বলেই জীবন এতটা মধুর।

এই লেখার শেষটুকু আমি উৎসর্গ করতে চাই প্রতিটি মায়ের প্রতি:

“তুমি মা, এই নামেই হৃদয় হয়ে ওঠে জ্যোতির্ময়,

তোমার ছায়াতলে বাঁচে মানুষ, জগত পায় হৃদয়ের আবয়।”

বিশ্ব মা দিবসে—সব মায়েদের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।

লেখক: কবি, গল্পকার ও কলামিস্ট

আমার বার্তা/জেএইচ

রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অনন্য উচ্চতায় তারেক জিয়া

২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে

হজে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক সুস্হ্যতায় কী করবেন

প্রতিবছরের মতো এবারও হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। হজযাত্রীদের

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনির বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তন

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়ে আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন মধ্য বামপন্থী লেবার পার্টির অ্যান্থনি আলবানিজ।

অনিয়ন্ত্রিত ঋণ ও খেলাপি সংস্কৃতি : ব্যাংকিং খাতের আত্মহননের ছক

ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে বলা হয় অর্থনীতির হৃদযন্ত্র। এই হৃদযন্ত্র যদি রক্ত পাম্প না করে, রাষ্ট্র নামের
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাহরাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশি দূতের বৈঠক

রপ্তানী খাতে দ্বিতীয় বছরের মতো নগদ প্রণোদনা কমানো হচ্ছে

স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির প্রকট অভাব: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা, সতর্কতা জারি

ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধেরই অংশ: ভারতীয় বিমান বাহিনী

কাঁঠাল খাওয়ার এই উপকারিতাগুলো জানেন কি

ফেসবুক-ইউটিউবে আ.লীগের পক্ষে কথা বললেই গ্রেপ্তার

চ্যাটজিপিটির কথায় বিবাহবিচ্ছেদের মামলা স্ত্রীর

হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

দুর্নীতি-অনিয়ম সবচেয়ে বেশি উপদেষ্টা আসিফের মন্ত্রণালয়ে

ভারত চেয়েছিল শক্তি দেখাতে, কিন্তু প্রকাশ পেল দুর্বলতা

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস-২০২৫ পালিত

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্কে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল এনসিপি

নাটোরে বিএনপি অফিসে সেনাবাহিনীর অভিযান, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ১

শুভাঢ্যা খাল খনন নিয়ে সুখবর দিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা

‘বাটারফ্লাই স্কিন’ রোগে আক্রান্ত শিশুরা, লক্ষণগুলো কী কী?

৭ গোলের থ্রিলারে রিয়ালকে হারিয়ে শিরোপায় এক হাত বার্সার

মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

তুরস্কে পু‌তি‌নের স‌ঙ্গে বৈঠক কর‌তে যা‌চ্ছেন জে‌লেন‌স্কি

সংবিধানেই স্বৈরতন্ত্রের শেকড়, সংস্কারে ঐকমত্য চান সব পক্ষ