ই-পেপার রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে কুয়াকাটা

হাফিজ রহমান:
০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৮:০৭

বাংলাদেশের দক্ষিণে উপকূলীয় এলাকার বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে অপেক্ষা করছে সাগরকন্যা খ্যাত পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। গরিবের ঘরে অপরূপ সুন্দরী কন্যা হিসেবে জন্ম নিয়েছে প্রাকৃতিক কন্যা কুয়াকাটা। প্রকৃতির যে এতো রূপরহস্য তা কুয়াকাটাকে না দেখলে বোঝা যাবে না।

প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টিকলার নাম হচ্ছে সুন্দরী কুয়াকাটা- যার মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে সাগরের লোনা জলে গড়ে ওঠা বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। সকল সুন্দরের উপমা দক্ষিণ বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে রয়েছে। সাগর প্রকৃতির এক বিশাল রূপকথার গল্প হচ্ছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করা যায়। প্রকৃতির সকল সৃষ্টিকলা যেখান থেকে উপভোগ করা যায়। প্রকৃতির এক বিশাল রহস্য সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত কুয়াকাটা গঙ্গামতির লেক থেকে সরাসরি উপভোগ করা যায়। বিশ্বের কোনো সী-বীচে এমন দুটি বিরল দৃশ্য দেখা যায় না। প্রকৃতির সন্তান প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চাইলে সাগরকন্যা কুয়াকাটা এবং প্রাকৃতিক বন সুন্দরবনের মধ্যে তা খুঁজে পাবে। প্রকৃতির যে নিখুঁত কারিগরি নৈপুণ্যতা তা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র সৈকত, দ্বীপগুলোতে দেখা যাবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত। পুরো সৈকতে চিক চিক করছে রুপালি বালি, সৈকতের কোথাও কাদা মাটির চিহ্ন পাওয়া যাবে না। সাগরলোনা জলে সুশোভিত বৃক্ষমালার সারি দেখা যাবে সৈকতের তীর ঘেঁষে। কোথাও নারিকেল জিঞ্জি, কোথাও ঝাউবন। রয়েছে কেওড়া, গড়ান, সুন্দরী, গোলপাতা, সবুজ প্রকৃতি সাগরের নীল ঢেউ, চিকচিক রুপালি বালুকা ভূমি, রাখাইনদের বর্ণিল সংস্কৃতি, আদিম তাঁত, বৌদ্ধ মন্দির, গঙ্গামতির চরে লাল কাঁকড়া প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যবোধ। স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না। সাগরের সঙ্গে জীবন-জীবিকার তাগিদে সংগ্রাম করা মানুষগুলো নিত্যদিনে কাজকর্ম একজন পর্যটককে করে তুলতে পারে বাস্তববাদী মানুষরূপে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের রাসমেলা, পানি খেলা পর্যটকদের আনন্দ-বিনোদনের আলাদা রসদ যোগাতে পারে। কুয়াকাটাসহ দক্ষিণ বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলের রূপরহস্য বলে কিংবা লিখে উপস্থাপন করা যাবে। না। স্বচক্ষে দেখে প্রকৃতির এই রূপরহস্যকে অবগাহন করে চিত্তের প্রশান্তি আনতে হবে। কুয়াকাটা নামকরণের ঐতিহাসিক কুয়াটি দেখা যাবে সীমা বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন। সাগর তীর থেকে পায়ে হেঁটে কুয়াটির কাছে যাওয়া যায়। গঙ্গামতি লেকের অপরূপ দৃশ্যতো পর্যটকদের মন কেড়ে নেবে। নৌকা চড়ে গঙ্গামতির লেক পেরিয়ে গঙ্গামতির চরে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দ্রুত চলাচল দেখে পর্যটকরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবেন সুন্দরবন দেখার সুযোগ সময়ের অভাবে না হলেও কুয়াকাটা থেকে নিকট দূরত্বে দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিত ফাতরার বন ঘুরে আসা যাবে। কুয়াকাটা থেকে প্রতিদিন বোটে করে পর্যটকরা ফাতরার বন ভ্রমণে যাচ্ছে। কুয়াকাটা সৈকত থেকে পশ্চিম দিকে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে লেবুর চর। এখানে রয়েছে ১০০ একর বিশিষ্ট কেওড়া, কড়াই, গেওয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাকৃতিক বন।

কুয়াকাটা থেকে সাইট ট্যুর করা যায় সীত্রুজিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন, ছেঁড়াদ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ, মহেশখালীসহ আরো ছোট ছোট দ্বীপে। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী করা এবং প্রকৃতিকে উপভোগ করার একমাত্র জায়গা হচ্ছে কুয়াকাটা। কুয়াকাটার রূপের অহংকার এবং গর্ব শুধু কুয়াকাটার। এর সঙ্গে আর কারো তুলনা হয় না। প্রকৃতির এই বিশাল ঐশ্বর্য কাজে লাগাতে পারলে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় মানুষের অর্থনৈতিক পথ-রচনা করা যাবে। এতো বিশাল প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েও কুয়াকাটার সৌন্দর্য পর্যটকরা উপভোগ করতে পারছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে পর্যটন নগরীর বৈশিষ্ট্য নিয়ে সাজানোর দৃষ্টিহীনতা। আমাদের নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টিহীনতার কারণে প্রকৃতি যে নৈসর্গ দিয়ে অপরূপ সাজে প্রতিটি পর্যটন এলাকা সাজিয়ে দিয়েছে তা আমরা পর্যটকদের আনন্দ-বিনোদনের উপযোগী করে তুলে ধরতে পারছি না। যে দেশে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, কুয়াকাটার মতো প্রাকৃতিক রূপরহস্যে ভরা সী-বীচ রয়েছে এবং ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এর মতো জৈব বৈচিত্র্যে ভরপুর প্রাকৃতিক বন রয়েছে সে দেশে পর্যটন অর্থনীতিতে নিয়ে সমৃদ্ধির পথ রচনার করার কথা। এতো প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য থাকার পরও বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পে অবদান রাখতে পারছে না। যদিও বর্তমানে কুয়াকাটাকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উন্নয়ন, গঙ্গামতির চরে ইকোপার্ক ও বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা এবং একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা।

কুয়াটাকার উন্নয়নের প্রাথমিক সমস্যা সমূহ- সমুদ্র সৈকতের বীচকে সংরক্ষিত রাখার জন্য মালদ্বীপ ও থাইল্যান্ডের আদলে স্থায়ী অবকাঠামোর মাধ্যমে বীচ প্রটেকশনের ব্যবস্থা বীচের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সরকারি অবকাঠামো দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

  • বর্তমানে সুন্দরবনের কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট ও কটকা মাত্র ৩/৪ ঘন্টা রিভার ক্রুজের মাধ্যমে কুয়াকাটার সাথে সারাবছর যোগাযোগের মাধ্যমে পর্যটকগণ সুন্দরবনের সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়।
  • কুয়াকাটার নিকটবর্তী ফাতরার বন একটি ম্যানগ্রোভ অঞ্চল। বনাঞ্চল উপভোগ করার জন্য সকল পর্যটককে বোটে করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বোট থেকে নামার জন্য সেখানে একটি পল্টুন না থাকায় পর্যটক বিড়ম্বনার শিকার হয়। তার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং পিকনিক স্পটে বসার ব্যবস্থা, ওয়াশরুমের ব্যবস্থা, বনাঞ্চলের সরু চ্যানেলে হাঁটার কাঁচা রাস্তাগুলো পাকা করে দেওয়া।
  • আরেকটি স্পট গঙ্গামতি, যেখানে সূর্যোদয় দেখার জন্য সকল পর্যটকগণ যাতায়াত করেন। সেখানে বসার ব্যবস্থা, ওয়াশরুম এবং ক্যানেলটির দুই পাশে ইকো পার্কের ব্যবস্থা করে ক্যানেলে বোটিং এর ব্যবস্থা করা।

এ সকল ছোট-খাটো অবকাঠামোগত উন্নয়নগুলো বর্তমানে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে কুয়াটাকায় পর্যটকদের বিনোদনের উপকরণ সৃষ্টি হবে। কুয়াকাটা পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এ সকল বর্তমান সমস্যার উন্নয়ন দ্রুত বাস্তবায়ন হলেই কুয়াকাটার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতি বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীগণ কুয়াকাটায় বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। আর তা থেকে সরকার পাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয়।

বর্তমান বিশ্বের সাথে উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে পর্যটন শিল্পই হতে পারে একমাত্র উন্নয়নের ধারক ও বাহক। তাই কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের প্রতি সরকার এবং প্রশাসনকে আন্তরিক সু-দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

লেখক : অর্থ সম্পাদক, গ্লোবাল এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।

আমার বার্তা/হাফিজ রহমান/এমই

মিয়ানমারে পরাশক্তির উপস্থিতি ও আধিপত্য-বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং স্বার্থ সুরক্ষা

মিয়ানমার দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। একুশ শতকের উন্নয়ন ও অগ্রগতির

আধুনিক কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ: বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল ভিত্তি

আধুনিক কৃষির জন্য প্রযুক্তি আশির্বাদস্বরূপ। বর্তমানে, পুরোনো চাষাবাদ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে ফলন

ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অপরিবর্তিত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার পালাবদল বহুবার হয়েছে। এক সরকার গিয়েছে, আরেক সরকার এসেছে। ক্ষমতার এই

রোহিঙ্গা নেতৃত্ব বিকাশ ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম

রোহিঙ্গা সংকটের শুরু মিয়ানমারে এবং মিয়ানমারেই রয়েছে এই সংকটের সমাধান। প্রায় আট বছর ধরে বাংলাদেশে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মুন্সিগঞ্জ পশ্চিম মানিকপুরে খাসি কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

মুন্সিগঞ্জ পশ্চিম মানিকপুরে খাসি কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

মুন্সিগঞ্জ পশ্চিম মানিকপুরে খাসি কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

মুন্সিগঞ্জ পশ্চিম মানিকপুরে খাসি কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

শিক্ষায় বৈষম্য দূর ও খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করার প্রতিশ্রুতি আমিনুল হকের

হাসিনা বারোটা বাজিয়েছে, এ সরকার চব্বিশটা বাজায়ে দিসে: মির্জা আব্বাস

শুধু স্বৈরশাসক নন, শেখ হাসিনা ছিলেন মাদকেরও নেত্রী: এ্যানি

বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম

ভারতে পালানোর সময় দিপু মনির ভাগনেসহ ৪ জন আটক

গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কোনো ছাড় নয়: অ্যাটর্নি জেনারেল

আদালত অবমাননার দায়ে হাসিনার ৬ মাসের সাজা, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

গজারিয়ায় অস্ত্র-গুলি উদ্ধার ও মান্নান হত্যার আসামি গ্রেপ্তার

গজারিয়ার বাউশিয়ায় বিএনপি কর্মী সভা অনুষ্ঠিত

বনভূমি ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত কর্মসূচি নেবে সরকার

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন: সিইসি নাসির উদ্দিন

বাংলাদেশ-নেপাল-শ্রীলঙ্কা আমাদের থেকে সরে যাচ্ছে: মোদিকে শারদ পাওয়ার

বাকৃবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে কেন্দ্রীয় নবীনবরণ অনুষ্ঠিত

২০ হাজার শ্রমিকের মামলা ঝুলে, ড. ইউনূসের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি

সাংবাদিক তুহিন হত্যায় আরেক আসামি কিশোরগঞ্জে গ্রেপ্তার