আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বা দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্বে না জড়ানোর’ পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
শনিবার (৭ জুন) ঈদুল আজহার সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সৌজন্য সাক্ষাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের এই পরামর্শ দেন।
সাক্ষাৎকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণের বিষয়ে বেগম জিয়া ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেন। আগামী ১৩ জুন লন্ডনের একটি হোটেলে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির অন্তত পাঁচজন সদস্যের সঙ্গে ঈদের দিনের সাক্ষাতের বিষয়ে এই প্রতিবেদকের আলাপ হয়। তাদের কেউ কেউ উদ্ধৃত হতে সরাসরি মানা করেন। তবে উল্লেখ করেন যে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর তারেক রহমান বিভিন্ন সোর্সে মতামত গ্রহণ করেন।
সাক্ষাতের সম্ভাব্যতা, আলাপের বিষয়, দেশ ও দলের অবস্থানসহ নানা ইস্যুতে তারেক মতামত সংগ্রহ করেন। এক্ষেত্রে তার অ্যাডভাইসরি পরিষদের সদস্যরাও ভূমিকা রাখেন।
শনিবার (৭ জুন) শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ফিরোজায় ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘আসলে আমরা ঈদের দিন যাই শুধুমাত্র শুভেচ্ছা বিনিময়ে। আর ম্যাডামের সঙ্গে সাধারণত এত ভিড় থাকে, লোকজন থাকে— যে কারণে আমরা অন্য কোনও আলোচনা করি না। সে কারণে সেটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ, শুভেচ্ছা। দুয়েকটা ছুটকা কথাবার্তা হয়তো হয়।’
‘এমনি আমাদের যদি প্রয়োজন হয় তার সঙ্গে দুয়েকটা কথা বলার, সেটা হয়তো বলে কেউ। আর এই সিচুয়েশন ক্রিয়েট হয়েছে (প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ) সেটা তো ঈদের পরে।’ যোগ করেন সেলিমা রহমান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দূরত্ব বা দ্বন্দ্বে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ম্যাডাম জিয়া প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে। তার এমন অবস্থান স্বাভাবিক।’
>> সহনীয় পর্যায়ে তো অবশ্যই আসতে হবে
নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির যে দূরত্ব—সে বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির নেতা সেলিমা রহমানের জবাব, ‘ওইটা নিয়ে ওইভাবে ম্যাডামের সঙ্গে...। আমি প্রথমেই বলেছি, এটা নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। এটা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ম্যাডামের কথা হতে পারে কিনা, এটা তো আমরা জানি না। আমাদের সঙ্গে সেভাবে... মহাসচিবের সঙ্গে হয়তো... (থেমে) সেটা আমি জানি না।’
এক্ষেত্রে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের যে দৃশ্যমান দূরত্ব, সেটা কি সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে— এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির সিনিয়র নেতা সেলিমা রহমান বলেন, ‘দেখুন, সহনীয় পর্যায়ে তো অবশ্যই আসতে হবে। তা না হলে তো শুধু দল তো না; আমাদের দল জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি, একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করি, দেশেরও একটা ক্ষতি হবে। জনগণের ক্ষতি তো অবশ্যই হবে। সেই লক্ষ্যে সহনীয় পর্যায়ে তো অবশ্যই আসতে হবে। সেজন্য মুখোমুখি অবস্থানে আমরা এখনও যাইনি।’
‘তবে এটা যত আলাপ-আলোচনা হবে (আমাদের মধ্যে আলোচনা হয় না), আলোচনা দরকার। আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা সমঝোতায় তো আসতে হয়, এটাই হচ্ছে কথা।’ বলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান।
>> সবার অবস্থান এক, কোনও দ্বন্দ্ব নেই
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজকে যথারীতি আমাদের মহাসচিব আমাদের দলের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির অবস্থান এটাই যে, আমরা এই সাক্ষাৎকে পজিটিভভাবে দেখছি। আমাদের সঙ্গে সরকারের কোনও দ্বন্দ্ব নাই। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাস্তবতার নিরিখে নির্বাচনের বিষয়ে মত দিয়েছেন।’
‘৫৪ বছরে যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশ দাঁড়িয়ে আছে, সেই নিরিখে তিনি বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের রাজনৈতিক স্বার্থ, দেশের গণতন্ত্রের, জনগণের স্বার্থের নিরিখে মতামত দিয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে বলেছেন, সবার আগে দেশ।’
‘বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য আমাদের দলের নেতা এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক থেকে সেটাই আশা করছি আমরা। আমরা মনে করি, দুজনের আলাপের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক অবস্থান উঠে আসবে।’ উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন।
এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘ম্যাডামের অবস্থান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অবস্থান, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের অবস্থানও এটাই। এখানে কোনও ধরনের দ্বন্দ্ব বা বিরোধ নেই।’
>> ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে স্থায়ী কমিটি ‘সর্বসম্মত একমত’
সোমবার (৯ জুন) রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে সদস্যদের কাছে মতামত জানতে চান তারেক রহমান। স্থায়ী কমিটির সূত্রগুলো জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবার মতামত জানতে চাইলে সদস্যরা মোটামুটি ইতিবাচক মত দেন।
একজন সদস্যের ভাষ্য, ‘মোটামুটি সর্বসম্মতভাবে সাক্ষাতের বিষয়ে মত দেওয়া হয়েছে। কেউ না করে নাই।’
১৩ জুন অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে তারেক রহমানের সাক্ষাতে কেবল নির্বাচনই নয়, দেশের আরও অন্যান্য বিষয়গুলোও থাকবে। বলে জানান একজন সদস্য।
আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) গুলশানে সাংবাদিকদের সামনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উল্লেখ করেন, গতকাল (সোমবার) রাতে আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংও হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেছেন। ওনাকে (তারেক রহমান) ফরমালি দাওয়াত করা হয়েছে মিটিংয়ের জন্যে। ১৩ তারিখ ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লন্ডন টাইমে এই সময়টা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মিটিংয়ের জন্য আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি— এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট কাটাতে পজিটিভ ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক যে প্রেক্ষাপট… যে অবস্থান এটা (বৈঠকটি) একটা বড় ইভেন্ট। যদি সব কিছু সঠিকভাবে চলে, তাহলে নিসন্দেহে এটা একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।’
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে তারেক রহমানের সঙ্গে আর কে কে যোগ দেবেন বা বৈঠকটি কি ওয়ান-টু ওয়ান হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমি এখনও এসব বিষয়ে কোনও নির্দেশনা পাইনি।’ -- সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
আমার বার্তা/এমই