
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো দলটির পাশে আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছে। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী বাদে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক, সমমনা দল ও ফ্যাসিস্টবিরোধী সব রাজনৈতিক দল এখন বিএনপির পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান করছে।
এই সব দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের তীব্র বিরোধিতা করেছে। বরং তারা প্রস্তাব দিয়েছে-জাতীয় নির্বাচনের ভোটের দিনেই একই সঙ্গে এবং একই খরচে গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। এমনকি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)ও এখন এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে।
বর্তমানে বিএনপির সমর্থিত তিনটি জোটে রয়েছে মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ ও গণসংহতি আন্দোলনসহ সাতটি দল নিয়ে গঠিত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ; বিশ দলীয় জোট ভেঙে তৈরি হয়েছে ১২ দলীয় জোট, আর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১১টি দল। পাশাপাশি বাম গণতান্ত্রিক জোট, সিপিবি ও অন্যান্য ফ্যাসিস্টবিরোধী দলও বিএনপির পাশে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এমনকি কিছু ইসলামী দল ও হেফাজতে ইসলামও বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ একটি শক্তি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, তবে তারা সফল হবে না। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব।”
তিনি আরও বলেন, “অভ্যুত্থানের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে এই অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারত না। আমাদের ঘোষিত ৩১ দফায় সব সংস্কারের বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। আমরা সংস্কারের পক্ষে আছি, বিভ্রান্তি নয়। ইনশাল্লাহ, সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, “দেশের জনগণের জুলাই সনদের দরকার নেই। দরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। জুলাই সনদ মূলত উপদেষ্টাদের নিরাপত্তার জন্য, জনগণের স্বার্থে নয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিএনপি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন চেয়েছে। এজন্য অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ এটাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখছে, যা ঠিক নয়।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করছে। বৃহত্তর ঐক্য সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।”
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচনের পক্ষে আমরা নই। আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছি, এবং জনস্বার্থে ভবিষ্যতেও একসঙ্গে থাকব।”
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন চাই। এর আগে কোনো গণভোট নয়। আমরা বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, আছি, এবং থাকব।”
কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, “সংবিধানে গণভোটের কোনো সরাসরি বিধান নেই। ১৪২ ধারায় বলা আছে, নির্বাচিত সংসদে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতভেদ হলে সংসদ জনগণের মতামত আহ্বান করতে পারে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়। জটিলতা এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিতে হবে।”
বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট গ্রহণযোগ্য নয়। যদি অন্তর্বর্তী সরকার তা করতে চায়, তবে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। তাই আগে জাতীয় নির্বাচনই দিন।”
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, “’২৪-এর জুলাই সনদ বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সরকার গঠনের বিষয়েও আমরা বিএনপির সঙ্গে একমত। শরিক ও সমমনা সব দলই এখন বিএনপির পাশে শক্তভাবে রয়েছে।”
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের উদ্যোগকে অবৈধ, অবাস্তব ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। তারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ঘোষণা দিয়েছে—গণতন্ত্র, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রশ্নে বিএনপির পাশে থেকেই যেকোনো বিভ্রান্তি ও ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করবে।
আমার বার্তা/জেএইচ

