মাহদীয়া জান্নাত মাহী। ২২ বছরের এই তরুণীর বেড়ে উঠা ব্রহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে। প্রায় আট বছর আগে ঢাকায় আসেন তিনি। সদা হাস্যোজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত এই তরুণী ইটপাথরের রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকায় উঠেন। কয়েক বছর পর অত্র এলাকার একটি মাদ্রাসায় চাকরি নেন তিনি। কে জানতো যে প্রাণবন্ত এই তরুণীর জীবনে নেমে আসবে কালো আধার। জীবন শুরুর সময় যখন তখনি যেন সমাপ্তি টানার অবস্থা তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আশিকুর রহমান শুভ তার জীবনে নিয়ে আসে অন্ধকার। বিয়ের নামে করেন প্রতারণা। শুভ নিজের পরিচয় গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে মাহীকে বিয়ে করেন। শুধু প্রতারণার বিয়েই নয়, মাহী’র গর্ভে আসা ভ্রুণও হত্যা করেন শুভ। এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে শুভ’র আসল পরিচয়। মাহদীয়া জান্নাত মাহী নামে জান্নাত হলে তার জীবনে নেমে আসে নরক। শুভ যেন তার জীবনে অশুভ হয়ে আসে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল ইসলাম ধর্ম মোতাবেক মাহদীয়া জান্নাত মাহী বিয়ে করেন আশিকুর রহমান শুভকে। বিয়ের কয়েক মাস পরে মাহীর গর্ভে সন্তান আসে। আর এরপর থেকে শুরু হয় মাহীর উপর মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে ওষুধ খাইয়ে আগত সন্তান নষ্ট করে শুভ। এরপর মাহী শুভর গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য চাপ দেন এবং তাকে তুলে নিতে বলেন। তখন থেকে প্রকাশ পেতে থাকে শুভর আসল চেহারা। শুভ তাদের বিয়ে অস্বীকার করেন। তখন মাহী জানতে পারেন শুভ’র দেয়া সমস্ত কিছু ভুয়া। শুধু নাম ছাড়া কোনো কিছুই ঠিক নাই শুভর। এরপর মাহী’র অবস্থা সাগরে পড়ে যাওয়ার মতো। বহু কষ্টে শুভ’র গ্রামের বাড়ির শুধু জেলার নাম জানতে পারেন মাহী। এরপর অজানার উদ্দেশ্যে রওনা দেন কিশোরগঞ্জ জেলায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পেয়ে যান ঠিকানা। ১০ দিন ছেলের বাড়ির সামনে সকাল-সন্ধ্যা স্বীকৃতির দাবিতে বসে কাটান মাহী। এলাকার ৭নং ওয়ার্ড পৌর কাউন্সিলর, মহিলা পরিষদ নেত্রীর মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান না হলে অবশেষে মামলা করেন মাহী। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২৮ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন মাহদীয়া জান্নাত মাহী। মামলা নাম্বার ২১। মামলার প্রধান আসামি মাহী’র স্বামী আশিকুর রহমান শুভ। শুভ’র পিতার নাম আকবর আলী ধনু ভুইয়া ওরফে রফিক উদ্দিন ভূইয়া। মা’র নাম রোকসানা বেগম ওরফে শিল্পী বেগম। কিশোরগঞ্জ সদর থানার তারাপাশা গ্রামের বাসিন্ধা শুভ। শুভ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র । থাকেন বিজয় একাত্তর হলে। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে শুভ বড়।
আমার বার্তা’র সাথে কথা হয় মাহদীয়া জান্নাত মাহী’র। কথা বলার সময় মাহী যেন বার বার দু’চোখ মুছছিলেন। বার বারই আটকে যাচ্ছিল তার কথা। কোনো লাইনই যেন একবারে শেষ করতে পারছিলেন না। একটু পর পর মাহী থেমে যাচ্ছিলেন। শুভ’র সাথে প্রায় এক বছরের বিবাহিত জীবনে ঘটে যাওয়া বর্ণনা যেন শেষ হচ্ছিল না। কথা বলতে বলতে কান্নার সাথে সাথে এক পর্যায়ে কাঁপতে শুরু করেন মাহী। কোনো ক্রমেই যেন তার কান্না থামছিল না। মাহী জানান, জীবনে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। শুভ যখন তার জীবনে আসে তখন তিনি মনে করেছেন তার জীবনটা মনে হয় আলোকিত হবে। অথচ জীবনের আলো ছড়ানোর আগেই নেমে আসে অন্ধকার। শুভ যে অশুভ হয়ে দেখা দেয়। নিমিষেই তার সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যায়।
মাহী থেমে থেমে বলেন, শুভ নিজেকে দরিদ্র কৃষকের সন্তান পরিচয় দিয়েছিলো। ফলে বিয়ের পর বিভিন্ন খরচ মাহী নিজে পরিশোধ করতেন। এরপর দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গত ২১ আগস্ট শুভ ওষুধ খাইয়ে গর্ভপাত ঘটান। এরপরই বিয়ের কাবিননামার জন্য চাপ দেন মাহী। এতে শুভ টালবাহানা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিয়ে অস্বীকার করে দূরে সরে যান। শুভ মাদ্রাসায় গিয়ে তার বিরুদ্ধে নানা রকম কুৎসা করলে তার চাকরিও চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, শুভ’র যেন কঠিন শাস্তি হয়। এ জন্য বিচার দাবি করেন মাহী। শুভ’র কঠিন বিচার দেখার অপেক্ষায় আছেন মাহী। চোখ মুছতে মুছতে মাহী আর কথা বলতে পারছিলেন না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর রওশন আলী আমার বার্তাকে বলেন, মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে। দুই- এক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে তিনি জানান।