এখনো বন্ধ হয়নি মেঘনাঘাটের চোরাই তেলের ব্যবসা ! মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার মেঘনাঘাট এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় দীর্ঘদিন যাবত চলছে তেল চোরাকারবারি বাণিজ্য। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের নাম ভাঙিয়ে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন নামক ব্যক্তি বছরের পর বছর অবৈধ চোরা তেলের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পরে এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে মেঘনাঘাট এলাকার এই চোরাই তেল ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন ওরফে গোপালি বোরহান ! সম্প্রতি তার চোরাই তেল সাম্রাজ্যে ছাত্র-জনতা হানা দিয়ে তাকে এলাকা ছাড়া করে। তবে বোরহান তার অবৈধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে মরিয়া। বিভিন্ন মহলে শুরু করেছে দৌড়ঝাঁপ।
চোরাই তেল ব্যবসার অভিযোগে বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে গজারিয়া, সোনারগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ১৬ বছর যাবত প্রশাসনের দুর্নীতিপরায়ণ কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার অবৈধ তেল জাহাজ থেকে চোরাইভাবে নামিয়ে বোরহান এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
সূত্রে আরো জানা গেছে, সরকারি তেল কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার তেল বহনকারী জাহাজের দুর্নীতিপরায়ণ স্টাফদের সাথে আঁতাত করে রাতের আধারে মেঘনা নদীতে জাহাজ থামিয়ে ঐসব জাহাজ থেকে লাখ লাখ লিটার তেল আনলোড করে সেই তেল বোরহান মেঘনাঘাট এলাকায় তার ডিপোতে জমা করে পাম্পসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন কয়েক কোটি টাকা।
আরো জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৬ আগস্ট চোরাকারবারি গোপালি বোরহান প্রতিদিনের মতো মেঘনাঘাট এলাকায় জাহাজ থেকে অবৈধভাবে চোরাই তেল খালাস করতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে। এসময় এলাকাবাসীর সঙ্গে বোরহান ও সহযোগীদের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে তার সহযোগীদের নিয়ে মেঘনাঘাট থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে আরো জানা গেছে, পালিয়ে গিয়ে বোরহান মেঘনাঘাট এলাকার ব্যবসায়ী, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে মানুষকে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও হয়রানি করছে তার চোরাই তেল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে।
আরো জানা গেছে, মেঘনাঘাট ও তার আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ চোরাই তেল ব্যবসায়ী গোপালি বোরহানের চোরাই তেল বাণিজ্য নানান অবৈধ কর্মকাণ্ড ও তার বাহিনীর বিভিন্ন অপকর্মে ছিলেন অতিষ্ঠ। এলাকার সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীরা বোরহানের চোরাই তেল ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তার উপর তার বাহিনী দিয়ে চালাতো নানা অত্যাচার-নির্যাতন।
এই বিষয়ে জানা গেছে, মেঘনাঘাট এলাকার বাসিন্দা মৃত আমীর হোসেনের ছেলে মিলন দেওয়ান। তার অবৈধ চোরাই তেল ব্যবসার বিষয়ে প্রতিবাদ করলে বোরহান তার সহযোগীদের দিয়ে হামলা করে মিলনকে কুপিয়ে জখম করে। হামলায় মিলনের এক হাত বিচ্ছিন হয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। বর্তমানে পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন-যাপন করছে মিলন। শুধু মিলন দেওয়ানই নয়, মেঘনাঘাট এলাকার অসংখ্য লোক তার অবৈধ ব্যবসার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার রোষানলে পড়ে শারীরিক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে গোপালি বোরহানের বিরুদ্ধে।
একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে আরো জানা গেছে, গজারিয়ার মেঘনাঘাটে চোরাই তেল ব্যবসা করে গোপালি বোরহান এখন শত কোটি টাকার মালিক। রাজধানীতে একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাট-প্লট ও দোকানসহ একাধিক গাড়ি রয়েছে। নিজ এলাকায় এবং গাজীপুরে নামে-বেনামে রয়েছে কয়েকশ বিঘা জমি। কিছুদিন আগেও যে লোকটির নুন আনতে পানতা ফুরাতো সেই লোকটি কি করে আজ এত বিত্ত বৈভবের মালিক!
এ বিষয়ে দুদক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নজর দিয়ে চোরাকারবারি বোরহানকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।
এই বিষয়ে জানতে গোপালি বোরহানের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে প্রথমে চোরাই তেল ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে পরবর্তীতে কথার এক পর্যায়ে বলেন, মেঘনাঘাট এলাকায় গত ১৬ বছর যা কিছু করেছি এলাকার প্রভাবশালী মহল ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই করেছি। বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতাকর্মী আমার উপর হামলা করে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে এবং আমার ব্যবসা বাণিজ্য ছিনিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে।
আপনার বৈধ ব্যবসা না অবৈধ ব্যবসা ছিনিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে; এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে গিয়ে যারা তার ব্যবসায় হানা দিয়েছে তাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
আমার বার্তা/এমই