সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও পেশাগত সুরক্ষাসহ ৭ দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবিতে ইউরো-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্সের উদ্যোগে ‘সাংবাদিকদের সুরক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টায় প্যারিসের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁর হলরুমে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সাত্তার আলী সুমন শাহ আলম।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি তাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নজমুল হকের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউরো-বাংলা প্রেসক্লাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি তাইজুল ফয়েজ।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা অটো ইকুলের পরিচালক হোসেন সালাম রহমান, মানবাধিকার নেতা সেলিম আহমদ, জবরুল ইসলাম, সাংবাদিকদের সুরক্ষা বিষয়ক প্যানেল আলোচক ছিলেন এটিএন বাংলার ফ্রান্স প্রতিনিধি দেবেশ বড়ুয়া, প্রবাসে বাংলার সম্পাদক অধ্যাপক অপু আলম, নিউজ টোয়েন্টিফোরের ফ্রান্স প্রতিনিধি ফেরদৌস করিম, আমাদের কথার সম্পাদক লুৎফুর রহমান বাবু, মতামত পত্রিকার সম্পাদক মারুফ চৌধুরী অমিত, ফ্রান্স বিডি নিউজ ২৪ এর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রনি, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রনি হাসান।
সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিবিসি নিউজের ফ্রান্স প্রতিনিধি ইকবাল মোহাম্মদ জাফর, মাই টিভির ফ্রান্স প্রতিনিধি বাদল পাল।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গ্লোবাল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ফ্রান্সের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আহমদ, শিহাব উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন ও তাওহীদ আহমদ প্রমুখ।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন ফ্রান্সে কর্মরত বিভিন্ন বাংলা গণমাধ্যমের সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথি সাত্তার আলী সুমন শাহ আলম বলেন, আমরা চাই একটি মুক্ত, স্বচ্ছ ও সাহসী সাংবাদিকতা, যে সাংবাদিকতা সমাজ বদলায়, মানুষকে জাগায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে সাংবাদিকরা ক্রমাগত হুমকি, নির্যাতন, এমনকি হত্যার শিকার হচ্ছেন। এটি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে সাগর-রুনির মতো মেধাবী সাংবাদিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড আজও বিচারহীনতায় রয়ে গেছে, যা আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। আমরা চাই- এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার হোক।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ২৬৬ জন সাংবাদিকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে মুক্তি দেওয়া হোক। একইসঙ্গে চাই, সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা হোক, যেখানে তারা নির্ভয়ে সত্যের পক্ষে কথা বলতে পারেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আমিনুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ক্লাবের অর্থ সম্পাদক আহমদ লুবেদ। আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করেন নুরুল আমিন, জারিফ আহমদ ও তারেক আহমেদ।
সভার শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে এ পর্যন্ত দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন এবং ঢাকার উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনাও জানানো হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাত দফা প্রস্তাবনা হচ্ছে– ১. একটি স্বাধীন ও কার্যকর ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ অবিলম্বে প্রণয়ন করতে হবে, যা তাদের নিরাপত্তা ও পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। ২. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হুমকি, হামলা, নিপীড়ন বা হয়রানির ঘটনার তাৎক্ষণিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৩. সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৪. সাংবাদিকদের রিপোর্টিংয়ে কোনো রাজনৈতিক বা সরকারি চাপ, নির্দেশ বা প্রভাব খাটানোর অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। ৫. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার তদন্তের আগে গ্রেপ্তার না করার নিয়ম চালু করতে হবে। ৬. শুধু রাজধানী বা শহরের নয়– মফস্বল ও প্রবাসী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। ৭. সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে এমন আইন করা যাবে না।
আমার বার্তা/জেএইচ