যেকোনো কথা পেলেই বা তথ্য জানলেই তা অন্যদের জানিয়ে দেওয়া বা শেয়ার করা মুমিনের আলামত নয়, এটি মিথ্যাবাদী, গুনাহগার হওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক।
এ সময় তিনি বলেন, গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যায়, অসত্য, বিকৃত তথ্য উপস্থাপন শরীয়তের দৃষ্টিকোণে নিন্দনীয়। এই মাধ্যমগুলোতে কারো প্রতি বিদ্বেষ ও সম্মানহানির কথা প্রচার করাকেও জঘন্য বলেছেন তিনি।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) নিজের তৃতীয় জুমায় খুতবার আগের আলোচনায় তিনি এসব বলেন।
জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক গত জুমার আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তাকওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবের ৭০-৭১ নম্বর আয়াতের ব্যাখায় বলেন—
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ قُوۡلُوۡا قَوۡلًا سَدِیۡدًا یُّصۡلِحۡ لَكُمۡ اَعۡمَالَكُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوۡبَكُمۡ ؕ وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِیۡمًا
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের আমলগুলোকে ত্রুটিমুক্ত করবেন আর তোমাদের পাপগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে সে সাফল্য লাভ করে- মহাসাফল্য। (সূরা আহযাব, আয়াত : ৭০-৭১)
আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে মুমিনদেরকে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশের পর সঠিক কথা বলার আদেশ দিয়েছেন। সঠিক কথার অর্থ হচ্ছে, মিথ্যার মিশ্রণ এবং ভুলের মিশ্রণ ছাড়া সঠিক সত্য কথা।
এই আদেশের ব্যাখ্যায় অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
وَ لَا تَقۡفُ مَا لَیۡسَ لَكَ بِهٖ عِلۡمٌ ؕ اِنَّ السَّمۡعَ وَ الۡبَصَرَ وَ الۡفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡـُٔوۡلًا
অর্থাৎ যে বিষয়ে তোমার জানা নেই তার পিছনে পড়ো না। কারণ তোমার কান, চোখ এবং অন্তর সব বিষয়েই কেয়ামতের দিন তোমাকে প্রশ্ন করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)
কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে তিনি বলেন, মানুষের কথা বলার বিধান ও পদ্ধতি এই দুই আয়াতে বলে দেওয়া হয়েছে। আধুনিক সমাজে সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে অন্যায়, অসত্য, বিকৃত কথা, বিদ্বেষ ও সম্মানহানিকর বিষয় প্রচার করা হচ্ছে, তা শরীয়তের দৃষ্টিকোণে নিন্দনীয় জঘন্য কাজ।
তিনি বলেন, আমি নিয়োগের পরে প্রথম জুমা পড়াইনি, তবুও সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার জুমার বয়ান নামে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথম জুমার দিনও যে আলোচনা করেছি তার পরিবর্তে অন্য একটি আলোচনাকে প্রথম জুমার বয়ান নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার নামান্তর।
খতিব আবদুল মালেক বলেন, অনেকে ভাবতে পারেন আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে শরীয়তের কোন নীতিমালা নেই। অথচ সাড়ে ১৪০০ বছর আগে এ সকল বিধান কোরআন এবং সুন্নাহতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কর্তব্য হলো, যখন যে সমাজে যে অবস্থা ও পরিস্থিতি আসে তার বিধান ও নীতিমালা কোরআন এবং সুন্নাহ থেকে জেনে নেওয়া।
সামাজিক মাধ্যমে কোনো কিছু শেয়ারের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো তথ্য পেলে শেয়ার করে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মাঝে, এভাবে যেকোনো কথা পেলেই বা তথ্য জানলেই তা অন্যদেরকে জানিয়ে দেওয়া বা শেয়ার করা মুমিনের আলামত নয়, এটি মিথ্যাবাদী, গুনাহগার হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
হাদিসে এই বিষয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এক্ষেত্রে মূলনীতি হলো—তথ্যসূত্র যাচাই করা। তথ্যের বিষয়বস্তুর সত্যতা ও বিশুদ্ধতা যাচাই করা। সঠিক ও বিশুদ্ধ হলেও তথ্যটি সাধারণ জনগণের জন্য উপকারী কিনা তা বুঝা। যদি কোন বিশেষ আমানতের তথ্য থাকে, তবে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে না জানানো। যদি সত্যিকার অর্থেই কোন বিষয় সকলের জন্য উপকারী হয় তাহলে তা শেয়ার করা অন্যথায় চুপ থাকা।
মাওলানা আবদুল মালেক বলেন, হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন কম কথা বলে, অথবা চুপ থাকে। কারণ চুপ থাকলে তার সওয়াব না হলেও গুনাহ হবে না।
তিনি বলেন, যার যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, পাণ্ডিত্য নেই, বিশেষজ্ঞতা নেই, সে যেন সেই বিষয়ে কোন কথা না বলে ও না লিখে। হাদিসে মুসলিম বলা হয়েছে যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে। বর্তমানে গণমাধ্যমে জিহ্বা ও হাত দিয়ে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। তাই কিবোর্ডে লেখা হোক বা উপস্থাপন— সব মাধ্যমে কিছু বলা, লেখা বা প্রচারের আগে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এছড়াও তিনি জুমার দিন পরে এসে প্রথম কাতারে বসা মানুষের ধাক্কা দিয়ে সামনের না যাওয়া ও রাসূল সা. ও তাঁর হাদিসকে অনুসরণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন জুমার আলোচনায়।
আমার বার্তা/জেএইচ