পরকালে মহান আল্লাহ মুমিনদের যেসব পুরস্কার দেবেন, তার মধ্যে সর্বোত্তম পুরস্কার হলো মহামহিম আল্লাহর সাক্ষাৎ ও দর্শন। জান্নাতে মুমিনরা আল্লাহকে দেখে তাদের মনোবাসনা পূরণ করবেন। বিপরীতে অবিশ্বাসীরা আল্লাহর সাক্ষাৎ থেকে বঞ্চিত হবে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো- পার্থিব জীবনে মানুষের পক্ষে আল্লাহর সাক্ষাৎ বা তাঁর দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য মুসা (আ.) যখন ‘হে প্রতিপালক, আমাকে দেখা দিন’ বলে সাক্ষাতের আবেদন করেছিলেন, তখন উত্তর দেওয়া হয়েছিল- ‘তুমি কখনোই আমাকে দেখতে পারবে না।’ (সুরা আরাফ: ১৪৩)
তবে পরকালে মুমিনরা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিন বহু মুখমণ্ডল সজীব ও প্রফুল্ল হবে। তারা নিজ পালনকর্তাকে দেখতে থাকবে।’ (সুরা কিয়ামা: ২২-২৩)
জান্নাতির সবচেয়ে বড় পুরস্কার আল্লাহর দিদার
জান্নাতিদের কাছে আল্লাহর সাক্ষাৎ হবে সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমরা কি এমন কিছু চাও, যা আমি বাড়িয়ে দেব? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করেননি? আপনি কি আমাদের জান্নাত দান করেননি? আপনি কি আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি? অতঃপর আল্লাহ তাঁর পর্দাগুলো সরিয়ে দেবেন। জান্নাতিদের আল্লাহর সাক্ষাতের চেয়ে বেশি প্রিয় কিছু দান করা হবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ৩৩৮)
যেমন হবে আল্লাহর সাক্ষাৎ
আল্লাহকে দেখা যাবে নির্বিঘ্নে। জারির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বলেন, একবার পূর্ণিমার রাতে নবী (সা.) আমাদের কাছে বের হয়ে এলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘শিগগিরই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে কিয়ামতের দিন দেখতে পাবে, যেমন এ চাঁদটিকে তোমরা দেখছ এবং একে দেখতে তোমাদের অসুবিধে হচ্ছে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৩৬)
মহান আল্লাহ কথা বলবেন। আদি ইবনু হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে শিগগিরই তার প্রতিপালক কথা বলবেন, তখন প্রতিপালক ও তার মধ্যে কোনো অনুবাদক ও আড়াল করে এমন পর্দা থাকবে না।’ (সহিহ বুখারি: ৭৪৪৩)
আল্লাহর সাক্ষাতে জান্নাতিরা সর্বোচ্চ পরিতৃপ্তি লাভ করবেন এবং কৃতজ্ঞতায় সেজদায় লুটিয়ে পড়বেন। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘(সব ধরনের নেয়ামত লাভের পর) জান্নাতিরা বলবে, আমাদের প্রভুর মুখদর্শন ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, তখন আল্লাহ তাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং জান্নাতিরা সেজদায় পড়ে যাবে। তাদের বলা হবে, তোমরা আমল করার স্থানে নেই, তোমরা রয়েছ প্রতিদান লাভের স্থানে।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম: ২/৮৮৭)
হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা তখন কোরআন তেলাওয়াত করবেন। বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই জান্নাতিরা প্রতিদিন দুবার মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কাছে প্রবেশ করবে। অতঃপর তিনি তাদের সামনে কোরআন তেলাওয়াত করবেন।’ (জামিউস সগির: ২২৩৪)
পাপীরা আল্লাহকে যেমন দেখবে
পরকালে পাপীরাও আল্লাহর সাক্ষাৎ পাবে, তবে তারা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের চেহারা দেখবে না। তাদের প্রতি মহামহিন আল্লাহ থাকবেন ক্রোধান্বিত। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে কোনো মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করবে, সে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হবে এমন অবস্থায় যে তিনি তার ওপর রাগান্বিত।’ (সহিহ বুখারি: ৭৪৪৫)
অবিশ্বাসীরা আল্লাহর দেখা পাবে না
অবিশ্বাসীরা সেদিনও শাস্তি হিসেবে আল্লাহর সাক্ষাৎ থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবিশ্বাসীরা সেদিন নিজ পালনকর্তার সাক্ষাৎ থেকে আড়ালে থাকবে (বঞ্চিত হবে)।’ (সুরা মুতাফফিফিন: ১৫) আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই অবিশ্বাসীরা আল্লাহকে আপন অবস্থায় দেখবে না, তিনি তাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করবেন না, আবার তিনি তাদের থেকে গোপনও থাকবেন না।’ (মাজমুআতুল ফতোয়া: ৬/২৯২)
আল্লাহর সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করলে আল্লাহ খুশি হন
নিঃসন্দেহে আল্লাহর সাক্ষাৎ বান্দার জন্য সর্বোত্তম পুরস্কার। এ পুরস্কার মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।’ (সহিহ বুখারি: ৬৫০৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।