স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী, দোসর, সুবিধাভোগী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী অ্যাডভোকেট তাপস পাল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও তিনি বহাল তবিয়তে থেকে ইউনুস সরকার বিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে তিনি সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামানের সান্নিধ্যে থেকে ১৭ বছরের কালো অধ্যায়কে পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত। তার মত দুর্ধর্ষ দোসর কিভাবে সেনা বাহিনী প্রধানের মত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ত ব্যক্তি কাছে গেলেন, কারা তাকে এমন সুযোগ সৃষ্টি করে দিল, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে।
জানা গেছে, তাপস পালের রাজনৈতিক পরিচয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। এছাড়া দলীয় প্রভাবে তিনি ঢাকা মহানগর কোর্টের এপিপি ছিলেন। তার অন্যতম বড় পরিচয় তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা 'র' এর এজেন্ট। ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা ও তার পুরো স্বৈরাচার বাহিনী পালিয়ে গেলে তাপস পাল সাময়িক সময়ের জন্য গাঢাকা দেন। কিছু দিন পর ফেসবুকসহ সকল জায়গায় রাজনৈতিক পরিচয় মুছে দিতে তিনি শুধু ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরিচয় দিচ্ছেন। আড়ালে থেকে ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা ও ভারতের থিংক ট্যাঙ্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগীতা করছেন এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভারতে পাচার করছেন।
৫ আগস্টের পর সেনা বাহিনীর প্রধান ওয়াকারুজ্জামান একাধিকবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছেন। সেসব প্রোগ্রামের সময় সেনা প্রধানের আশেপাশেই দেখা গেছে তাপস পালকে। তিনি নিজের আওয়ামী রাজনীতির পরিচয় গোপন করে সেনা প্রধানের সঙ্গে থাকা ছবি ব্যবহার করে নতুন করে প্রভাব বিস্তার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এমন দুর্ধর্ষ, দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী ব্যক্তি কিভাবে সেনা প্রধানের কাছাকাছি গেলেন, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিচালনাকারী এবং পুজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের প্রশ্রয়ের কারণেই তিনি এই সুযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব আমার বার্তাকে বলেন, 'এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে সাক্ষাৎ করতে হবে।' তবে পরবর্তীতে তাকে ফোন করলে আর রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
অভিযোগ আছে, তাপস পাল বর্তমানে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কাজে যুক্ত নন। সীমিতভাবে কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে নিজেকে রাজনীতিহীন ব্যক্তি হিসেবে জাহির করছেন। অথচ তাপস পাল স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় পদধারী নেতা। এই পদ ব্যবহার করে তিনি ঢাকার রায়েরবাজার এলাকায় মন্দিরের জমি দখল করে বাড়ি নির্মান করেছেন। এছাড়া ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সম্পত্তি ও সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। পল্টন দাস নামের একজন সেবায়েত এ সংক্রান্ত মামলায় তাপস পালকে আসামি করেছেন। এসব ঘটনায় বোঝা যায়, তাপস পাল নিজ ধর্মের মানুষের জন্যও ক্ষতিকর মানুষ ছিলেন। তার ক্ষমতার দাপটে আতঙ্কিত ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ঢাকার বাইরে বাগেরহাটে নিজ এলাকার মানুষের জন্যও তিনি ছিলেন ভয়ের উৎস। ৫ আগস্টের পর একে সাহা নয়ন নামের এক যুবক ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেন, অপকর্মের বিরোধিতা করায় তাপস পাল তাকে আয়নাঘরে পাঠানোর হুমকি দিয়েছিলেন।
মন্তব্য জানতে অ্যাডভোকেট তাপস পালের মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে লিখিত পাঠিয়ে তাকে ফোন করলে তিনি 'পরে জানাবেন' বলে পরবর্তীতে আর ফোন রিসিভ করেননি। তবে, তার পক্ষ হয়ে আত্মীয় পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন করে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্ন প্রলোভন দেখান।
আমার বার্তা/এমই