
বিদেশি ভাষা শেখা আজকের বিশ্বে শুধু শিক্ষার অংশ নয়, বরং আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থান ও ক্যারিয়ারের নতুন সুযোগ তৈরি করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। ভাষার দক্ষতা থাকা মানে কেবল যোগাযোগের ক্ষমতা নয়, বরং বৈশ্বিক বাজারে নিজের স্থান নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ডিআইইউতে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাপানি ভাষা শেখার শীর্ষক সেমিনার, যেখানে শিক্ষার্থীরা জাপানি ভাষার বিভিন্ন লেভেল, আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং জাপানে দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এসটিসি অডিটোরিয়াম রুমে সকাল ১১ টা থেকে জাপানি ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রদান করেন প্রো-ভিসি প্রফেসর গণেশ চন্দ্র সাহা তিনি বলেন, "জাপানে চাকরি পাওয়ার জন্য জাপানি ভাষা জানা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাষাটির বিভিন্ন লেভেল রয়েছে, এবং যত ভালোভাবে শেখা যায়, তত বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। জাপান বর্তমানে বিদেশিদের জন্য নানা সুযোগ তৈরি করছে। যারা সেখানে পাঁচ থেকে সাত বছর অবস্থান করেন, তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগও থাকতে পারে। জাপানি ভাষা জানা শিক্ষার্থীদের সিনিয়র সিটিজেনদের সঙ্গে কাজ করার মতো সহজ ও সম্মানজনক কাজ করার সুযোগও দেয়।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, ডিআইইউ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপমেন্টেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়। জাপানি ভাষা শেখার এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট মোঃ শফিকুর রহমান। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, "জাপানে কাজ করতে হলে জাপানিজ ভাষার বেসিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য শিক্ষার্থীদের অন্তত N5 লেভেল পর্যন্ত শেখার চেষ্টা করা উচিত। জাপানিজ ভাষার মোট পাঁচটি লেভেল রয়েছে, যার প্রথমটি হলো N5। প্রাথমিক স্তরের এই কোর্স সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় মাসে শেষ করা যায়। এই স্তর উত্তীর্ণ হলে শিক্ষার্থীরা জাপানে প্রাথমিক কাজের সুযোগ পেতে পারেন। আগে বাংলাদেশে Japanese Language Proficiency Test (JLPT) অনুষ্ঠিত হতো না, তাই পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের বিদেশে যেতে হতো। বর্তমানে এটি বাংলাদেশেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সুযোগ।"
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কনসালটেন্ট মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তাপস তার ৩৭ বছরের অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভাগ করে বলেন, "জাপানে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে জাপানি ভাষা জানা অত্যন্ত জরুরি। কম্পিউটারের ভাষা হয়তো বিশ্বজুড়ে একই, কিন্তু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য স্থানীয় ভাষা জানা অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের উচিত N5 স্তর পেরিয়ে N4 ও N3 স্তর পর্যন্ত শেখার চেষ্টা করা, এতে চাকরির সুযোগ আরও বৃদ্ধি পায়। শুধু ভাষা নয়, জাপানি সংস্কৃতিও শেখা প্রয়োজন, কারণ জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ভদ্র জাতি হিসেবে পরিচিত। যারা সিরিয়াস এবং পরিশ্রমী, তারা সফল হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষার্থী কিছুদিনে কোর্স ছেড়ে দেয়, কিন্তু আরেকজন দৃঢ়তা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে কয়েক মাসে জাপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। সুতরাং সফলতার মূল চাবিকাঠি অর্থ নয়, মনোযোগ এবং সিরিয়াসনেস।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেন, "আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জাপানি ভাষা শেখার এবং আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সম্পর্কে জানতে পারছে। ভাষা শেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা N5 থেকে N1 পর্যন্ত দক্ষতা অর্জন করবে, যা জাপানে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ খুলে দেবে। উদাহরণস্বরূপ, সিনিয়র সিটিজেনদের সঙ্গে কাজ করা বা প্রযুক্তি ও পেশাগত খাতে কর্মসংস্থান পাওয়া সম্ভব। ভাষা দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা থাকলে শিক্ষার্থীরা পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে স্থায়ীভাবে জাপানে বসবাসের সুযোগও পেতে পারেন। এছাড়া, জাপানের সংস্কৃতি, শৃঙ্খলা এবং পেশাদারী পরিবেশ সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু ভাষাই নয়, আন্তর্জাতিক নৈতিকতা ও দক্ষতাও অর্জন করবে।"
সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভায়েস চ্যান্সেলর। তিনি বলেন, "জীবনের পথ সহজ নয়; নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা আরও জটিল। জীবন ও ক্যারিয়ারের চ্যালেঞ্জগুলো বুঝতে এবং এগুলো মোকাবিলা করতে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত হতে হবে। আজকের অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভাগ করেছেন, যা জাপানিজ ভাষা শেখা ও সেখানে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বোঝার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দেবে। ভাষা ছাড়া আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থান বা জ্ঞান বিনিময় সম্ভব নয়। জাপান বাংলাদেশকে বিশেষভাবে পছন্দ করেছে কারণ বাঙালি জাতি শিক্ষানবিশ, বুদ্ধিমান ও সাংস্কৃতিকভাবে প্রগতিশীল। ভাষা, প্রযুক্তি ও সমাজের জ্ঞান একত্রে থাকলে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে পারবে।"
উক্ত সেমিনারটি আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন সেল। শিক্ষার্থীরা জানান, এই ধরনের ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনার তাদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। তারা বিশ্বাস করেন, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি শেখার মাধ্যমে তারা কেবল আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন না, বরং নিজেদের ব্যক্তিগত দক্ষতা ও সামাজিক সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবেন। এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে, যা তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।
আমার বার্তা/মো. আল শাহারিয়া সুইট/এমই

