ই-পেপার শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩১ কার্তিক ১৪৩১

১৭ বছর পরও সিডরের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলবাসী

আমার বার্তা অনলাইন:
১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৫

আজ ১৫ নভেম্বর। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াল স্মৃতি বিজড়িত দিনটি। ২০০৭ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল স্মরণকালের ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় সিডর। সিডরে উপকূলীয় অঞ্চলকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। কেড়ে নিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ। সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও উপকূলবাসীকে মনে করিয়ে দেয়।

ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৭টা ৪০ মিনিট। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। সচেতন মানুষজন যেতে শুরু করলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বেশির ভাগ মানুষই রয়ে গেলেন বাড়িতে। তাদের ধারণা ছিল, কত ঝড়ই আইল গেল, এবারেও তাদের কিছু হবে না। কিন্তু প্রকৃতি ঠিক বিপরীত আচরণ করেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের পানি জম দূতের মতো এসে মানুষগুলোকে কেড়ে নিতে শুরু করল। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পুরো এলাকা হয়ে গেল লণ্ডভণ্ড। চারিদিকে ধ্বংসলীলা। লাশের পর লাশ পাওয়া যাচ্ছে। যারা বেঁচে ছিল তারা হয়ে রইলো কালের সাক্ষী। ওইদিন উপকূলের লাখ লাখ মানুষ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয় দক্ষিণাঞ্চলের ৩০ জেলার দুই শতাধিক উপজেলা। মানুষ অসহায়ের মতো শুধু চোখ দিয়ে দেখেছে। প্রতিরোধ করার মতো কিছুই ছিল না।

তৎকালীন বরগুনার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপ পরিচালক (বর্তমানে পটুয়াখালী জেলায় কর্মরত) আসাদুজ্জামান খান জানান, সেদিন রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে কোনো কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ করে শুরু হয়ে গেল ঘূর্ণিঝড়। এর আগে কয়েকদিন ধরেই বিক্ষুব্ধ ছিল প্রকৃতি। গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের খবর দিচ্ছিল আবহাওয়া বিভাগ। আগেরদিন বিকেলে দেয়া হয় ১০ নাম্বার মহাবিপদ সঙ্কেত। প্রশাসনের উদ্যোগে আর প্রচারণায় সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয় উপকূলের মানুষ। মোটামুটি ভালোভাবেই কাটে আগের রাতটি। ঝড় হয়নি দেখে পরদিন সকালে ঘরে ফেরে সবাই। তখনো বহাল ছিল সর্বোচ্চ বিপদ সঙ্কেত। বিকেল থেকে বাড়তে শুরু করে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। বিকেল ৫ টা নাগাদ হিরণ পয়েন্টে থাকা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ওয়্যারলেসের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় সমুদ্র থেকে উপকূলে উঠতে শুরু করে সিডর। সঙ্গে করে নিয়ে আসে ১২-১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরিশাল অঞ্চলের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের উপকূল সুরক্ষায় ১২৩টি পোল্ডারের অধীনে পাউবোর পাঁচ হাজার ১০৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫৭ কিলোমিটার হচ্ছে সমুদ্র-তীরবর্তী বাঁধ। সমুদ্রের তীরবর্তী এ বাঁধের সিংহভাগই বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার আওতায়।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সিডরে উপকূলীয় অঞ্চলের দুই হাজার ৩৪১ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ছয় জেলার প্রায় ১৮০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ এবং এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সিডরে বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানি ঢোকায় তাৎক্ষণিকভাবে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়া জমির পরিমাণ ছিলো ১১ লাখ ৭৮৭ হেক্টর।

মৃত্যু ঘটে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬০টি হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর। জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যাওয়া এবং বিধ্বস্ত হওয়া সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল ৮ হাজার ৭৫ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ হাজার ৬৮৭টি ব্রিজ-কালভার্ট। তাৎক্ষণিকভাবে ৪ হাজার কোটি টাকার ফসলহানির হিসেব দেয় কৃষি বিভাগ।

অন্যান্য ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো এবারো হতাহত আর নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে বৈপরীত্য দেখা দেয় সরকারি-বেসরকারি হিসেবে। সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ৩৩৬৩। অপরদিকে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার বলে জানায় রেড ক্রিসেন্ট।

স্থানীয় সাংবাদিক অ্যাড. সঞ্জিব দাস স্মৃতিচারণ করে জানান, বরগুনা সদরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকার নাম নলটোনা গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিনই সেখানে অর্ধ শতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। গ্রামটি পানির নিচে থাকায় লাশ দাফনের জন্যও কোন স্থান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা। বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে দাফনের কাপড় ছাড়াই ঐ গ্রামের ৩৩ জনকে ১৯ টি কবরে মাটি চাপা দেয়া হয়। জায়গার অভাবে ৫ টি কবরে ৩ জন করে ১৫ জন, ৪ টি কবরে ২ জন করে ৮ জন ও ১০ টি কবরে ১ জন করে ১০ জনের লাশ দাফন করা হয়।

সিডর চলে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় দেড় মাস। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল একমাস। দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থারাও যোগাযোগ না থাকার কারণে সঠিক সময় ত্রাণসহ সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেনি।

বরগুনার মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা অনেকেই ফিরে আসতে পারেনি। অনেকে চলে গেছে সাগরের অথৈ তলদেশে, ভাসতে ভাসতে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার কিংবা ভারতে। সিডরের সময়ে সাগরে ৩৭৫টি ফিশিং ট্রলার নিখোঁজ হয় এবং ২৮০টি ট্রলার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় আছড়ে পড়ে। নিখোঁজ হওয়া পাথরঘাটার শতাধিক জেলে ভারতের উড়িষ্যা কারাগারে আটক হয়।

১৫ নভেম্বরে স্বজন হারা উপকূলের মানুষেরা মিলাদ মাহফিল, দোয়া মোনাজাত, কোরআনখানি ও নানাবিধ পারিবারিক আয়োজনে দিনটিকে স্মরণ করেন।

আমার বার্তা/এমই

সাদ নয়, তার মাকে হত্যা করে ডিপ ফ্রিজে রেখেছিলেন ভাড়াটিয়া

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধূকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনাটি নতুন মোড় নিয়েছে। পুলিশ বলছে, নিহতের

ভোলায় আগ্নেয়াস্ত্র-হাতবোমাসহ আটক ৩

ভোলায় একটি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০টি হাতবোমা ও চারটি দেশীয় অস্ত্রসহ তিনজন কুখ্যাত ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক

পরিবর্তনের ধারা শুরু করেছি, এগিয়ে নিয়ে যাবে নির্বাচিত সরকার

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, বর্তমান সরকার সকল কিছুর

৭ দফা দাবিতে রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের সমাবেশ

সাভারে ৭ দফা দাবিতে সমাবেশ করেছেন রানা প্লাজায় আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর)
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাঁদা না দেওয়া ব্যবসায়ীকে প্রাননাশের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

সাদ নয়, তার মাকে হত্যা করে ডিপ ফ্রিজে রেখেছিলেন ভাড়াটিয়া

ভোলায় আগ্নেয়াস্ত্র-হাতবোমাসহ আটক ৩

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজ আসায় ভারত কেন উদ্বিগ্ন

দিনেদুপুরে ডাকাতি, মালামালের সঙ্গে শিশুকেও নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

পরিবর্তনের ধারা শুরু করেছি, এগিয়ে নিয়ে যাবে নির্বাচিত সরকার

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করল নেপাল

পাকিস্তানে ভয়াবহ বায়ুদূষণ, জাতির প্রতি নামাজ পড়ার আহ্বান শেহবাজের

১০০ দিন পরও আহতদের সুচিকিৎসা দিতে না পারায় বিশৃঙ্খলা হয়েছে

হত্যার চেয়ে গুম খারাপ অপরাধ: উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

শিল্পপতি প্রেমিককে ১১ টুকরো, বেরিয়ে এলো আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য

শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট অনূঢ়ার জোটের বিপুল জয়

ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমেই যে কাজটি করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সিটি কলেজ, বিপদে ১০ হাজার শিক্ষার্থী

গাজার সমুদ্র এখন কেবলই মৃত্যুর নীরব সাক্ষী

হাজারীবাগে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে আহত কিশোরের মৃত্যু

বড় জমায়েতে জুমা শেষে কাকরাইল ছাড়লেন সাদপন্থিরা

৭ দফা দাবিতে রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের সমাবেশ

রাজধানীতে ১১ হাজার ইয়াবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার

সন্তানদের আর্তনাদে কারামুক্ত সেই জামাল মিয়া