যেখানে পৌরসভা পানি সরবরাহ করে সেখানে পৌরসভার অনুমোদন ছাড়া অন্য কোন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করা যাবে না। অর্থাৎ পৌরসভার অনুমতি ব্যতীত পৌরবাসী বাড়িতে ও অফিসে সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন ও পানি উত্তোলন করতে পারবে না এমন মাইকিং শুনা যাচ্ছে পাবনা শহর জুড়ে।
বছরের পর বছর ধরে নাগরিকদের একটি অংশ এটা স্থাপন করে আসলেও এতোদিন নিশ্চুপ ছিল পৌর কর্তৃপক্ষ।
পৌর রেজুলেশন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২২ সালে এ ফি আদায় কার্যক্রম শুরু হয় যা বেশিরভাগ পৌরবাসীই অবগত নয়।
তবে সম্প্রতি এ ব্যাপারে মাইকিং করে বাসাবাড়িতে স্থাপন করা সাবমারসিবল পাম্পের অনুমোদন ফি ১২ হাজার ৭শ২০ টাকা আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভার নির্দিষ্ট ফরমে অবেদন করে জমা দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় যাদের বড়িতে এ পাম্প পাওয়া যাবে সেটা অবৈধ বলে গন্য হবে ও পাম্পগুলো জব্দসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
বিষয়টি কতখানি সঠিক তা জানার জন্য সাংবাদিকেরা পাবনা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ওবায়েদ-উল হক'র কাছে গেলে তিনি জানান ২০০৯ সালের ১১ (১) ও (২) এক্ট অনুযায়ী পৌরবাসী কোনভাবেই ভূগর্ভস্থ পানি পৌরসভার অনুমতি ছাড়া উত্তোলন করতে পারবেনা।
কিন্তু আইনটি অনলাইনে সার্চ দিয়ে পাওয়া যায় নাই। তবে ২০১৩ সালের পানি আইনে ১৪ নং আইনের
(৩) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমির ভূপরিস্থ পানির সকল অধিকার উক্ত ভূমির মালিকের থাকিবে এবং তিনি এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে উহা ব্যবহার করিতে পারিবেন আইনটি পাওয়া যায়।
নিজ অর্থে এ পাম্প স্থাপন করছেন ইলেক্ট্রিসিটির বিলও নিজেই দিচ্ছেন তাহলে সাবমারসিবল পাম্পের ক্ষেত্রে পৌরসভার ব্যায় বা সেবাটা কোথায় যে কারণে এই ফি নির্ধারণ করেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
বিষয়টি প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের কোনো তথ্য না দিয়ে মাইকিং করছেন কেনো এ প্রশ্নেরও কোন উত্তর দিতে পারেননি সহকারী প্রকৌশলী ওবায়েদ-উল হক।
তবে তিনি জানান, এটা গেজেটে আইন থাকলেও সরকারিভাবে কোন প্রজ্ঞাপন জারি হয় নাই। স্থানীয় সরকার(পৌরসভা সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪ এর ধারা ৪২(ক)৩ অনুযায়ী কাউন্সিলর এর ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবে আট সদস্যবিশিষ্ট সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এই আট জনের আলোচনা সাপেক্ষে এই রেজুলেশন পাশ করা হয়েছে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায় বেশিরভাগ কর্মকর্তারা নিজ নিজ দাপ্তরিক কাজে ব্যাস্ত থাকায় এবিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা করতে পারেন নাই বা কিছুই জানেননা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ বলেন আমি মিটিংয়ে ছিলাম কিন্তু সাবমারসিবলের স্থাপনা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
ড্রেনেজ ব্যাবস্থা, ল্যাম্পপোস্ট, পরিচ্ছন্নতা, মশা নিধন ইত্যাদি সেবা পাওয়ার জন্য পৌরবাসি পৌর কর দেন। কিন্তু তারা ঠিকমতো সেবা পাননা। ফুটপাত দখল, দিনের বেলা শহরে ট্রাক, বাস ঢুকা নিষেধ সত্বেও বাস ও বড় বাজারের ভিতর ট্রাক ঢুকে ওদিকে ব্রিজের মাথায় সিএনজি টেম্পু স্ট্যান্ডের দ্বারা জান জটের সৃষ্টিসহ অনেক অসুবিধার মধ্যে দিন পার করছে পৌরবাসী। এসকল সমসস্যার সমাধান করতে ব্যার্থ পাবনা পৌরসভা উল্টো নতুন করে টাকা ধার্য্য করে বুঝাতে চাচ্ছে আপনাদের উপর যখন যা চাপাবো আপনারা সেটা বহন করতে বাধ্য।
পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানান, পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি দিয়ে ঘর মোছা ও কাপড় ধোয়া ছাড়া পান করা যায় না। পৌরসভা বিশুদ্ধ পানি দিতে ব্যার্থ তাই সুপেয় পানির জন্য বাড়িতে বাড়িতে সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করলে পৌরসভাকে টাকা দিতে হবে কেন। এটি অযৌক্তিক। এটা বন্ধ না হলে তারা রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করার কথাও জানান।
বালিয়াহালট এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং ঈদগাহ কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন পৌরসভা থেকে সাবমার্সিবলের নামে গরিব মানুষের উপরে যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে এটা তাদের ইচ্ছাকৃত। এরকম কোনো আইন নাই। এর তীব্র থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে পাবনা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৩ সালের পানি আইনে ১৪ নং আইনের (২) এ "পানির অধিকার ও উহার ব্যবহারে" উল্লেখ আছে যে, এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, সুপেয় পানি এবং পরিচ্ছন্নতা ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার্য পানির অধিকার সর্বাধিকার হিসাবে বিবেচিত হইবে।
পৌরসভা যে মাইকিং টা করছে এটা তাদের স্বার্থে এটা আইনের পরিপন্থী। আমি মনেকরি যে, এতে পৌরবাসী ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
পাবনার বিশিষ্টজন মুকুল বিশ্বাস বলেন ভুমির মালিক আমি, ভূ গর্ভস্থ ব্যবহার আমার জন্য কিন্তু পৌরসভা আমাদের উপর এই ট্যক্সটা চাপিয়ে দিলো যার জন্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি এটা আমি সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, বিষয়টা জেনে আমাদের অসুবিধা দুর করার জন্য।
পৌরসভার প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরিফ আহমেদ বলেন এটা আদায়ের আইন আছে।