নেত্রকোনায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ‘ভূতুড়ে বিল’-এর চাপে চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকেরা। লাখো টাকার অবিশ্বাস্য বিল পরিশোধে কেউ কেউ বাড়ি বিক্রির কথা ভাবছেন, আবার কেউ জেল খাটতেও বাধ্য হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেও সুরাহা মেলেনি ভুক্তভোগীদের।
শহরের নাগড়া, জয়নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করেই কয়েকজন গ্রাহকের নামে কয়েক লাখ টাকার বিল আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা নাগড়ার একটি ছোট ছাপড়া ঘরে মে মাসে আসা ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৩ টাকার বিল। অথচ এর আগের মাস পর্যন্ত ওই গ্রাহকের গড় বিল ছিল ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে।
ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া শিক্ষক দ্বিগেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার বলেন, ‘তিন বছর ধরে এখানে আছি। দুই ফ্যান, কয়েকটা লাইট আর ফ্রিজ ছাড়া আর কিছুই নেই। বিল সাধারণত এক হাজার টাকার নিচে থাকে। মার্চে ছিল ১৩ শত, এপ্রিলে ১৪ শত টাকা। মে মাসে হঠাৎ ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা বিল দেখে চোখে বিশ্বাস করতে পারিনি। এ বিলের বোঝা আমি বইতে পারব না। বাড়িওয়ালাকেও জানিয়েছি বাসা ছেড়ে দিতে হবে।’
বাড়ির মালিক খোকন চন্দ্র দাস বলেন, ‘এই বিল শোধ করতে হলে হয়তো বাড়িই বিক্রি করতে হবে। দুদকে অভিযোগ করেও সমাধান মেলেনি।’
একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক নামে এক গ্রাহক। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর লাখ টাকার বিল চাপিয়ে দিয়েছে। না দেয়ায় জেলও খাটতে হয়েছে। এখন কিস্তি কিস্তি করে শোধ করছি।’
কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু পাল জানান, ভাড়া দেয়া একটি খালি ঘরের জন্যও ২৬ হাজার টাকার বিল এসেছে। ‘বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও এ বিল এসেছে। কোথাও সুরাহা পাচ্ছি না,’ বলেন তিনি।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাহ উদ্দীন বলেন, ‘রানিং সময়ে কিছু অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মিটার রিডার জুয়েল মিয়া ও সুপারভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান হৃদয়কে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া অন্য কয়েকটি বিল ২০১৮-১৯ সালের বকেয়া হিসাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে যৌক্তিক বিল সমন্বয় করে দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি মাসে প্রায় আট কোটি টাকার বিল আদায় করা হয়। এর মধ্যে জেলা স্টেডিয়ামের ৩২ লাখ, নাবিদ অটো রাইস মিলের ২০ লাখ ও ঠিকাদার মোশাররফের প্রায় ৩০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এসব বকেয়া সাধারণ গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপানো হবে না।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, নেত্রকোনা পিডিবির আওতাধীন এলাকায় আবাসিক গ্রাহক ৫৪ হাজার ৯১০ জন, বাণিজ্যিক ৫ হাজার ২৩৩ জন, ক্ষুদ্র শিল্প ৭১০টি এবং মাঝারি শিল্প ২৭টি।
আমার বার্তা/এল/এমই